Advertisement
E-Paper

এক্সপ্রেস হচ্ছে বহু ট্রেন, সফরে কাঁটা গরিবদের

এত বিপুল সংখ্যক প্যাসেঞ্জার ট্রেনকে এ ভাবে রাতারাতি মেল বা এক্সপ্রেসে রূপান্তরিত করলে অসংখ্য যাত্রী যে অসুবিধায় পড়বেন, তার সুরাহা হবে কী ভাবে? এই প্রশ্নের জবাব মিলছে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২০ ০৫:২৯
প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

আর্থিক সাশ্রয় করে যথাসম্ভব আয় বাড়াতে ছয় শতাধিক ট্রেনে কোপ মেরেই ক্ষান্ত হচ্ছে না রেল। সেই সঙ্গে নতুন সময়সূচিতে পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেলের অনেক প্যাসেঞ্জার ট্রেনকে এক্সপ্রেসে পরিণত করা হচ্ছে। যুক্তি দেখানো হচ্ছে, এতে ট্রেনযাত্রা দ্রুততর এবং মসৃণতর হবে। কিন্তু রেলেরই প্রাক্তন ও বর্তমান কিছু কর্তা-সহ সংশ্লিষ্ট শিবিরের একাংশের আশঙ্কা, ওই সব ট্রেনের শ্রেণিগত উন্নয়নের ফলে গরিব ও নিম্ন আয়ের বহু মানুষ টিকিটের বাড়তি টাকা দিতে না-পেরে সেগুলিতে সফরের সুযোগ হারাবেন। বিক্ষোভের আশঙ্কাও থাকছে। কারণ এক্সপ্রেসে রূপান্তরের পরে ওই সব ট্রেন বহু ছোট স্টেশনে থামবে না।

পরিবর্তনের তালিকায় আছে পূর্ব রেলের ১২টি এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ৩৬টি ট্রেন। সেগুলির মধ্যে জনপ্রিয় ট্রেন আছে বেশ কয়েকটি। তালিকায় রয়েছে পূর্ব রেলের হাওড়া থেকে জয়নগর ও মোকামা প্যাসেঞ্জার, শিয়ালদহ থেকে জঙ্গিপুর রোড, আসানসোল থেকে গয়া ও বারাণসী এবং বর্ধমান থেকে হাতিয়া প্যাসেঞ্জারের মতো ট্রেন, যেগুলির অধিকাংশই দৈনিক ট্রেন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সাঁতরাগাছি থেকে পুরী, হাওড়া থেকে চক্রধরপুর, আদ্রা, ঘাটশিলা, ভদ্রকের মতো প্যাসেঞ্জার ট্রেন রয়েছে ওই তালিকায়। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের নিউ জলপাইগুড়ি থেকে মালদহ টাউন ও রঙ্গিয়া, শিলিগুড়ি থেকে বামনহাট এবং আলিপুরদুয়ার থেকে গুয়াহাটি প্যাসেঞ্জারের মতো ট্রেনও রয়েছে ওই তালিকায়। রেল বোর্ড এই নতুন তালিকা অনুমোদন করেছে। ডিসেম্বরে রেলের ‘জ়িরো বেসড টাইম টেবিল’ বা নতুন সময়সূচি প্রকাশ করার কথা। দীর্ঘদিন ধরে ধরে প্রচলিত সময়সূচির খোলনলচে বদলে ওই সূচি তৈরি হয়েছে বলে রেলের দাবি। তারা জানাচ্ছে, দেশে এখন কোনও নিয়মিত ট্রেন চলছে না। ফলে কার্যত শূন্য থেকে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ট্রেন চলাচল ব্যবস্থায় ‘বিলম্ব’ কমিয়ে দক্ষতা আনতেই এই উদ্যোগ বলে রেলকর্তাদের দাবি। তাঁরা জানান, ট্রেনের গতি বৃদ্ধির ফলে যাত্রার সময় কমানোর পাশাপাশি আরও বেশি ট্রেনকে জায়গা করে দেওয়া যাবে। বিভিন্ন রুটে আলাদা ভাবে লাইন রক্ষণাবেক্ষণের সময়ও নির্দিষ্ট হবে।

কিন্তু এত বিপুল সংখ্যক প্যাসেঞ্জার ট্রেনকে এ ভাবে রাতারাতি মেল বা এক্সপ্রেসে রূপান্তরিত করলে অসংখ্য যাত্রী যে অসুবিধায় পড়বেন, তার সুরাহা হবে কী ভাবে? এই প্রশ্নের জবাব মিলছে না। রেলকর্মী ইউনিয়নের নেতৃত্বের মতে, নতুন ব্যবস্থার ফলে টিকিটের দাম বাড়বে। ফলে গরিব ও নিম্ন আয়ের বহু মানুষ ওই সব ট্রেনে চড়ার সুযোগ খোয়াবেন। ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা, অসমের বিভিন্ন গন্তব্যে যায়, এমন বেশ কিছু প্যাসেঞ্জার ট্রেন এক্সপ্রেসে পরিবর্তনের পরে বিভিন্ন স্টেশনে তাদের না-থামার সম্ভাবনা ষোলো আনা। তাই ওই নতুন তালিকা প্রকাশ্যে এলে বিক্ষোভ হতে পারে বলেও মনে করছে তথ্যাভিজ্ঞ মহল। ‘‘ভারতীয় রেল গরিব এবং নিম্ন আয়ের মানুষদের নিজস্ব পরিষেবা থেকে ছেঁটে ফেলতে চাইছে,’’ বলেন ইস্টার্ন রেলওয়ে মেনস ইউনিয়নের সম্পাদক অমিত ঘোষ।

নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে রেল আরও দু’হাজার কোটি টাকা আয় করতে চায়। কিন্তু ক্ষতি কমিয়ে আয় বাড়ানোর এমন পরিকল্পনা ওই সব ট্রেনের অস্তিত্বকেই বিপন্ন করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নতুন সময়সূচি কার্যকর হলে আইনশৃঙ্খলারও সমস্যা হতে পারে। যাত্রীরা ট্রেনে উঠতে না-পারলে প্রবল বিক্ষোভের আশঙ্কা আছে বলে জানাচ্ছে বিভিন্ন যাত্রী সংগঠন।

Express trains Indian Railways
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy