Advertisement
E-Paper

চিকিৎসকের শপথেও গৈরিক ছোঁয়া

সেই শপথও এ বার পাল্টে ফেলতে চায় সঙ্ঘ পরিবার। সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ চিকিৎসকদের সংগঠন ইতিমধ্যেই প্রাচীন ভারতে চিকিৎসার ‘জনক’ বলে পরিচিত চরকের নামে শপথের প্রথা চালু করেছে।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:২৩

পেশায় প্রবেশের আগে গোটা বিশ্বেই একটা শপথ নিতে হয় চিকিৎসকদের। যার মূল কথা, ‘চিকিৎসা করার নামে আমি কারও ক্ষতি করব না।’ প্রাচীন গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটসের নামাঙ্কিত এই শপথ ‘হিপোক্রেটিক ওথ’ হিসেবে পরিচিত।

সেই শপথও এ বার পাল্টে ফেলতে চায় সঙ্ঘ পরিবার। সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ চিকিৎসকদের সংগঠন ইতিমধ্যেই প্রাচীন ভারতে চিকিৎসার ‘জনক’ বলে পরিচিত চরকের নামে শপথের প্রথা চালু করেছে।

আরও পড়ুন: হুমকি সরিয়ে বিতর্কে রাজি সিপিএম-বিজেপি

সংগঠনের মতে, চরক বিদ্যায় ‘বিশারদ’ হওয়ার পর শিষ্যদের যে ‘শপথ’ দেওয়ানো হতো, সেটাই চরক-শপথ। ভারতেই যখন এমন ব্যবস্থা মজুত রয়েছে, তখন বিদেশি পথ নেওয়া হবে কেন?

সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠদের এহেন উদ্যোগে স্বাভাবিক ভাবেই বিতর্ক দেখা দিয়েছে। বলা হচ্ছে, ইতিহাসের গৈরিকীকরণ করার চেষ্টার পরে চিকিৎসা ক্ষেত্রেও ছাপ ফেলা শুরু করল আরএসএস।

সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ ন্যাশনাল মেডিকোস অর্গানাইজেশনের সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত চৌধুরী বলেন, ‘‘ব্রিটিশরা এ দেশে গ্রিক চিকিৎসকের নামে শপথ দেওয়ানোর প্রথা চালু করেছিল। কিন্তু আমাদের দেশেই চরক-সংহিতা, সুশ্রুত সংহিতা রয়েছে। ফলে ভারতের ঐতিহ্য ছেড়ে কেন বিদেশি অনুকরণ করা হবে? বিশেষ করে দু’টি শপথই যখন সমান স্বাস্থ্য সেবার কথা বলে।’’

নামে ‘হিপোক্রেটিক ওথ’ হলেও এখন যে শপথবাক্য পাঠ করা হয়, তার সঙ্গে গ্রিক চিকিৎসকের লেখা শপথের কোনও যোগ নেই। আধুনিক শপথের রচয়িতা আমেরিকার টাফ্‌ট বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাবিজ্ঞানের অধ্যাপক লুই লাসাগ্‌না। আধুনিক সময়ের উপযোগী করে ১৯৬৪ সালে নতুন শপথবাক্য তৈরি করেন তিনি। যা এখন বিশ্বের অনেক চিকিৎসা বিদ্যালয়ই গ্রহণ করেছে।

কিন্তু আঙ্গিকে আধুনিক হলেও নামে বিদেশি ছোঁয়া থাকায় তাকে ঝেড়ে ফেলে পুরোদস্তুর স্বদেশি শপথ চালু করতে চায় সঙ্ঘ। এ ক্ষেত্রে তাদের হাতিয়ার আয়ুর্বেদ চিকিৎসার আদিপুরুষ চরক।

সঙ্ঘ পরিবার বরাবরই আয়ুর্বেদ প্রচারের পক্ষপাতী। তা নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছে নরেন্দ্র মোদী সরকারও। চরকের নামে শপথবাক্য পাঠ তাদের সেই এজেন্ডারই অঙ্গ বলে অনেকের মত। কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারির কথায়, ‘‘সব বিষয়ে আরএসএস গৈরিকীকরণের চেষ্টা করছে। শিক্ষা ও ইতিহাসের পর নতুন ক্ষেত্রের সন্ধান করছে তারা।’’

এইমসের রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের সংগঠনের সভাপতি হরজিৎ ভাট্টিও বলেন, ‘‘সব বিষয়ে গৈরিকীকরণের চেষ্টা হচ্ছে। আরএসএস দেখাতে চায়, তারা পশ্চিমী সংস্কৃতির বিরোধী। যখন প্রয়োজন স্বাস্থ্য পরিষেবাকে আরও উন্নত করা, সেই সময় অন্য দিকে প্রাধান্য দেওয়ার কোনও মানে নেই।’’

কিন্তু সঙ্ঘ-সমর্থকদের বক্তব্য, আয়ুর্বেদ ও অ্যালোপ্যাথের মধ্যে বিবাদ নেই। আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যাও আয়ুর্বেদকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। ফলে চরকের নামে শপথ নিতে বাধা নেই। গুজরাতের ভাবনগর সরকারি মেডিক্যাল কলেজের অতিরিক্ত ডিন সি বি ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘কেউ যদি ভারতীয়ত্ব কবুল করে চরক-কথিত শপথ নেন, তাতে ক্ষতি কী? তার মানে হিপোক্রেটিক শপথ তুলে দেওয়া হচ্ছে না। কাউকে চাপানোও হচ্ছে না।’’

Hippocratic Oath Doctors RSS হিপোক্রেটিক ওথ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy