Advertisement
E-Paper

মা দেখলেন, ৭৭ দিন পার করেও ছেলের খুলিতে এখনও বাঁধা টর্চ

মা দেখলেন, পুত্রের খুলি। ৭৭ দিন পার করেও অবশ্য তাতে বাঁধা রয়েছে কালো রঙের টর্চটা। যে আলোটুকু সম্বল করে দেড়-দুই হাত চওড়া গর্তে কয়লার সন্ধান করত ছেলে।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৯ ০৩:১০
সব-হারা: দেহ ফিরবে না, এখন ক্ষতিপূরণের অপেক্ষায় সাহের ইসলামের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা। নিজস্ব চিত্র

সব-হারা: দেহ ফিরবে না, এখন ক্ষতিপূরণের অপেক্ষায় সাহের ইসলামের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা। নিজস্ব চিত্র

ছোট ছেলের চেহারাটা শেষ বার দেখার আশায় প্লাস্টিক সরিয়েছিলেন মেঘালয়ের লামথারি গ্রামের বাসিন্দা জসটিনা।

চেহারা? মা দেখলেন, পুত্রের খুলি। ৭৭ দিন পার করেও অবশ্য তাতে বাঁধা রয়েছে কালো রঙের টর্চটা। যে আলোটুকু সম্বল করে দেড়-দুই হাত চওড়া গর্তে কয়লার সন্ধান করত ছেলে। কান্নায় ভেঙে পড়া মা জানিয়ে দেন, ওই চেহারা আর দেখতে চান না। দেখতে চান না বড় ছেলের মুখও। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর মেঘালয়ের পূর্ব জয়ন্তীয়া পাহাড়ের কসানের খনিতে নেমেছিলেন তাঁর দুই পুত্র। ভাইয়ের দেহাবশেষ পাওয়া গেলেও দাদার দেহ উঠল না। ওঠার সম্ভাবনাও কি রয়েছে? কারণ, ফিরে গিয়েছে উদ্ধারকারী নৌসেনা এবং সেনাবাহিনীর দল। যদিও নৌবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের চলে যেতে হয়েছে।

পশ্চিম গারো পাহাড়ের রাজাবালা এলাকার সাতটি পরিবারের কারও ছেলে, কারও ভাইয়ের দেহ এখনও ওই খনিতে ডুবে। যত বারই উদ্ধারকাজ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে, নৌসেনার রিমোট যান একটি করে দেহ খুঁজে পেয়েছে বা তুলে এনেছে। সুপ্রিম কোর্টও নির্দেশ দিয়েছে, চালিয়ে যেতে হবে উদ্ধারকাজ। তাই ওই সাতটি পরিবারও বারবার

আশায় বুক বেঁধেছে। কিন্তু নৌসেনা চলে যাওয়ায় তারা দেহ উদ্ধারের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনায়।

গত এক দশক ধরে খনি থেকে মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করে সংসার চালাচ্ছিলেন মাগুরমারি গ্রামের ওমর আলি। খুড়তুতো দাদাকে দেখে ১৬ বছরের রাজিউল ইসলামও কলেজে বিজ্ঞান পড়ার খরচ জোগাড় করতে ওই খনিতে কাজ নিয়েছিল। তাঁদের দেহ আর ফিরবে না বলে ধরেই নিয়েছে পরিবার।

চিরাং জেলার ভাঙনামারি গ্রামের বাসিন্দা আমির হুসেনের গলিত দেহ উদ্ধার হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবেশী মনিরুল ইসলাম, সাহের ইসলামদের দেহ পাওয়া যায়নি। মনিরুলের ভাই মানিক বলেন, “যে কোনও উপায়ে দেহটা চেয়েছিলাম। এ বার অন্তত ক্ষতিপূরণের টাকাটা দিক।” আমিরের স্ত্রী অভিযান খাতুন অন্তর্বর্তিকালীন ক্ষতিপূরণের এক লক্ষ টাকা পেলেও তা স্বামীর ধার মেটাতেই শেষ। মেঘালয় সরকার কবে এবং কত টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে, তার কোনও খবর কারও কাছে নেই।

হোজাই জেলার কুটি মিঞাঁর পরিবারের হতাশা আরও বেশি। কারণ, সরকারি ভাবে খনিতে আটক শ্রমিকের সংখ্যা এখনও ১৩। কুটি যে দুর্ঘটনার সময় খনিতে ছিলেন, তার পুলিশ-রিপোর্ট জমা পড়েনি। তাই অন্তর্বর্তিকালীন ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি হতদরিদ্র পরিবার। কুটির মামা জিয়াবুর রহমান বলেন, “দেহ পেলাম না, ক্ষতিপূরণও মিলবে কি না সন্দেহ।”

উদ্ধারকাজ বন্ধ না করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে মামলা চালাচ্ছেন আদিত্য প্রসাদ। তাঁর প্রশ্ন, সুপ্রিম কোর্ট যেখানে দেহ উদ্ধারের জন্য জোরকদমে কাজ চালানোর নির্দেশ দিয়েছে, সেখানে রাজ্য সরকার কির্লোস্কারের কাছ থেকে বেশি করে পাম্প আনার ব্যবস্থা করল না কেন।

জেলা প্রশাসনের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, কির্লোস্কার এবং কেএসবি সংস্থার উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প দিয়ে জল বার করা হলেও দেহগুলি তোলার অবস্থায় নেই। নৌসেনার যান ৫টি দেহ খুঁজে পেলেও তিনটি দেহ ধরতে গেলেই গলে যাচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, দেহ উদ্ধারের আশা ছেড়ে সরকারি কোষাগার থেকে ক্ষতিপূরণের অর্থ দেওয়ার ভাবনা রয়েছে তাদের। তবে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন হওয়ায় ক্ষতিপূরণের পরিমাণ পরে ঠিক করা হবে।

খনিতে দুর্ঘটনার কথা সামনে এনেছিলেন স্থানীয় বিধায়ক আজাদ জামান। তিনিও বলেন, ‘‘পরিবারগুলো বুঝে গিয়েছে, প্রিয়জনদের ফিরে পাওয়ার আশা আর নেই। এখন ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পেলে হয়।’’

Meghalaya mine Skeleton মেঘালয়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy