১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণখেলাপিতে অভিযুক্ত মেহুল চোকসীর প্রত্যর্পণে কোনও বাধা নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে বেলজিয়ামের আদালত। এর মধ্যেই মুম্বইয়ের আর্থার রোড জেলে শুরু হয়ে গিয়েছে চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি। ভারতে নিয়ে আসার পর ওই সংশোধনাগারের বিশেষ ‘সেল’ই হবে পলাতক গুজরাতি হিরে ব্যবসায়ীর নতুন ঠিকানা। আবার আলোচনায় ২৬/১১-কাণ্ডে ধৃত একমাত্র জীবিত জঙ্গি, পরে ফাঁসি হওয়া আজমল কসাবের সেই ‘আন্ডা সেল।’
আর্থার রোড জেলের ১২ নম্বর ব্যারাকই হবে অ্যান্টিগার নাগরিকত্ব নেওয়া চোকসীর নতুন ঠিকানা। ওই ১২ নম্বর ব্যারাকেই ছিল কসাবের ‘সেল।’ ‘ইন্ডিয়া টুডে’-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৪৬ স্কোয়ার মিটারের ওই ব্যারাকে দু’টি পৃথক সেল তৈরি করা হয়েছে। সেখানে রয়েছে আলাদা শৌচাগার। বস্তুত, আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে চোকসী অভিযোগ করেন, ভারতের জেলে তাঁর প্রাণসংশয় হতে পারে। বেলজিয়ামে তাঁর আইনজীবী অভিযোগ করেছিলেন, ভারতে সংশোধনাগারের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বন্দিদের রাখা হয়। কিন্তু ‘ইন্ডিয়া টুডে’ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জেলের ভিন্ন ছবি।
চোকসীকে অন্য আসামিদের সঙ্গে রাখার কোনও প্রশ্নই নেই। সে জন্য আলাদা করে প্রস্তুতি নিয়েছে মহারাষ্ট্র কারা দফতর। মুম্বই আর্থার জেলের ১২ নম্বর ব্যারাকে এর আগে রাখা হয়েছিল ২৬/১১ মুম্বই সন্ত্রাসের চক্রান্তে অভিযুক্ত তাহাউর রানাকে। তার আগে সেখানে ছিল কসাব। তিন একরেরও বেশি জায়গা জুড়ে বিস্তৃত আর্থার রোড জেলের ১২ নম্বর ব্যারাকটি পুরোপুরি পৃথক। সেখানে নজরদারি, যাতায়াত নিয়ে কড়াকড়ি রয়েছে। বন্দিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে রয়েছে আলাদা রান্নাঘর। ওই ব্যারাকে মোট তিনটি ঘর। সঙ্গে বড় শৌচাগার। সেখানে ঝাঁ-চকচকে কমোড ছাড়াও রয়েছে সুন্দর বেসিন। তোয়ালে, জামাকাপড় রাখার তাক। সুদৃশ্য টাইল্সে মোড়া শৌচাগার পেরোলেই রান্নাঘর। তার পাশে ‘সেল।’
চিকিৎসকদের যাতায়াত এবং আদালতে যাওয়া-আসা ছাড়া সবসময় ১২ নম্বর ব্যারাকের নির্দিষ্ট সেলে থাকতে হবে ২০১৮ সালে ভারত থেকে পালানো চোকসীকে। প্রত্যর্পণের পরেই বিচার বিভাগীয় হেফাজতে থাকবেন তিনি। তাঁকে হেফাজতে পাবে না কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা বা পুলিশ।
আরও পড়ুন:
সূত্র মারফত ‘ইন্ডিয়া টুডে’ আর্থার রোড জেলের ১২ নম্বর ব্যারাকের ওই নির্দিষ্ট সেলের যে সমস্ত ছবি পেয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, হাওয়া-বাতাস খেলার যথেষ্ট জায়গা রয়েছে সেখানে। পুরো মেঝে টাইল্সে মোড়া। একটাই দরজা আছে। রয়েছে তিনটি জানলা, পাঁচটি ভেন্টিলেটর্স। অর্থাৎ, সর্বদাই প্রাকৃতিক হাওয়া-বাতাস খেলবে ঘরে। সুইচ টিপলে জ্বলবে ছ’টি টিউবলাইট। রয়েছে তিনটি সিলিং ফ্যান। তা ছাড়া বিনোদনের জন্য আছে একটি স্মার্ট টিভি।
বেলজিয়াম আদালতের পর্যবেক্ষণ, চোকসীর বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ রয়েছে, তা অত্যন্ত গুরুতর। এমতাবস্থায় অভিযুক্তকে ভারতে ফেরানোই যুক্তিযুক্ত। সেখানেই ভারত সরকারের তরফে পলাতক হিরে ব্যবসায়ীর সংশোধনাগার জীবন সম্পর্কে আগাম কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে। জানানো হয়, অভিযুক্তের স্বাস্থ্যের দিকে নজর থাকবে তাদের। এ-ও বলা হয়, মুম্বই আর্থার রোড জেলের পরিকাঠামো বিশ্বমানের। সেখানে বিপদে-আপদে চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকে। বন্দিদের শারীরিক পরিস্থিতির দিকে সর্বদা নজর রাখেন সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ।