বিহারের পরে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) হওয়ার কথা কেরলেও। বাংলার সঙ্গে দক্ষিণী ওই রাজ্যেও বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন ২০২৬ সালে। তবে এসআইআর-এর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই কেরলে ভোটার তালিকায় নাম তোলার হিড়িক নতুন জল্পনার জন্ম দিচ্ছে! বিহারের অভিজ্ঞতার জেরে কেরলে কর্মরত পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশ কি সে রাজ্যে ভোটার তালিকায় নাম তুলে রাখতে চাইছেন, দেখা দিচ্ছে সেই প্রশ্ন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রের ইঙ্গিত, বাংলার মতোই ২০০২ সালের ভোটার তালিকাকে ভিত্তি ধরে কেরলে এসআইআর হবে। সে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) রতন ইউ কেলকরের বক্তব্য, নির্দিষ্ট সময়-তারিখ এখনও স্থির হয়নি। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা মেনেই এসআইআর করা হবে এবং সময়মতো কমিশন পুরনো ভোটার তালিকাও প্রকাশ করবে। তবে এসআইআর-এর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে কেরলের রাজ্য নির্বাচন কমিশন এখন ভোটার তালিকার কাজ করছে, যা প্রকাশ করার কথা আগামী ৩০ অগস্ট। সেই তালিকার জন্য আবেদন-পর্ব শেষ হতে দেখা যাচ্ছে, বাম-শাসিত ওই রাজ্যে প্রায় ২৯ লক্ষ ৮০ হাজার নাম জমা পড়েছে অন্তর্ভুক্তির জন্য! যা স্মরণযোগ্য কালের মধ্যে কখনও হয়নি। মৃত ভোটারের নাম বাদ বা রাজ্যের মধ্যেই ঠিকানা বদল-সহ অন্যান্য আবেদন ধরলে মোট সংখ্যাটা প্রায় ৩৫ লক্ষ।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং কেরল রাজ্য প্রশাসনের অন্দর মহলে চর্চা হচ্ছে, ভিন্ রাজ্য থেকে কাজ করতে আসা শ্রমিকদের একাংশ কি দক্ষিণী এই রাজ্যে ভোটার তালিকায় নাম তুলে রাখতে চাইছেন? নইলে এত বিপুল সংখ্যায় নতুন আবেদনের রহস্য কী! বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়ায় মোট ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে। তার মধ্যে পাকাপাকি ভাবে স্থানান্তরিত বা যোগাযোগ করা যায়নি, এমন ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৩৫ লক্ষ। এঁদের মধ্যে বড় অংশই পরিযায়ী শ্রমিক। প্রশাসনিক মহলের একাংশের ধারণা, ঘর ছেড়ে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকেরা নাম কাটা যাওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন এবং সে কারণেই কাজের জায়গায় নাম তুলে রাখতে চাইছেন। এসআইআর-এর প্রতিবাদে বিরোধী দলগুলির প্রচারও এই বাতাবরণ তৈরিতে সহায়ক হচ্ছে। কেরলে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাঙ্কের পাসবই বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দেওয়া শংসাপত্র থাকলেই এলাকার বাসিন্দা হিসেবে ভোটার তালিকায় নাম তোলা যায়। ওই নথি জোগাড় করা কঠিন নয়।
কেরলের রাজ্য নির্বাচন কমিশনার এ শাজাহানের মতে, নথি ঠিক থাকলে ভোটার তালিকায় তাঁরা নাম তুলে দেন। অন্য রাজ্যেও সেই ব্যক্তির নাম আছে কি না বা কেটে দিয়ে এসেছেন কি না, সে সব পরীক্ষা করার তথ্য তাঁদের কাছে থাকে না। প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত ও পুরসভার মতো স্থানীয় প্রশাসনের নির্বাচনের জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা তৈরি করছে। এই তালিকা জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে থাকা তালিকা নয়। পাঁচ বছর আগে রাজ্য নির্বাচন কমিশন শেষ তালিকা করেছিল। তার পরে জাতীয় কমিশন ভোটার তালিকার বাৎসরিক সংশোধন প্রক্রিয়া চালিয়ে নেওয়ায় তাদের তুলনায় রাজ্য কমিশনের তালিকায় প্রায় ১০ লক্ষ নাম কম আছে। কিন্তু নতুন আবেদনের সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে!
রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী এবং সিপিএম নেতা ভি শিবনকুট্টিুর বক্তব্য, ‘‘বিষয়টা খতিয়ে দেখার মতো। বাংলা থেকে প্রায় ১৩ লক্ষ, অসম থেকে সাড়ে ৯ লক্ষ, বিহার ও ওড়িশা থেকে প্রায় দেড় লক্ষ শ্রমিক কেরলে কাজ করেন। তবে সামান্য অংশ বাদে তাঁরা কেউ এখানে ভোট দেন না। এ বারে কেন এত আবেদন, আমরাও বোঝার চেষ্টা করছি।’’ বিরোধী দলনেতা ভি ডি সতীশনেরও মত একই।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)