বঞ্চনা আর হেনস্থার শিকার হয়ে আসছেন বরাক উপত্যকার পাহাড়ি জনতা। দীর্ঘদিন ধরে সরকারের নজরে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন তাঁরা। কেউ কানে তোলেনি তাঁদের কথা।
আজ শিলচরে স্বাধীনতা সংগ্রামী হেইপউ জাডোনাং স্মরণানুষ্ঠানে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। অনুষ্ঠানের আয়োজক বরাকভ্যালি হিলস ট্রাইব ডেভেলাপমেন্ট কমিটি শুরুতে তাঁদের প্রতি বঞ্চনা-হেনস্থার কথা শোনায়। পরে রাজ্যের পরিবেশ ও বন মন্ত্রী প্রমিলারানি ব্রহ্ম, বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার দিলীপকুমার পাল, শাসক দলের দুই বিধায়ক আমিনুল হক লস্কর ও মিহিরকান্তি সোম একে একে উপজাতি সমস্যার কথাই বিস্তারিত তুলে ধরেন। খোদ মন্ত্রী প্রমিলা ব্রহ্ম অভিযোগ করেন, বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় তাঁরা হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বাবুল রংমাই হত্যাকাণ্ডের উল্লেখ করেন। উপজাতি আবেগে হাত বুলিয়ে মন্ত্রী বলতে থাকেন, শিলচর শহরে রংমাইপুঞ্জির বাড়িগুলিকে পুরসভা এখনও পঞ্জীভূত করেনি। মেহেরপুরের রংমাইপুঞ্জিতে নিয়ে প্রতিদিন শহরের আবর্জনা ফেলা হয়। উপত্যকার বিভিন্ন জায়গায় খাসিদের পান গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। দুষ্কৃতীরা বেদখল করছে পাহাড়ি জমি। সে সব প্রতিরোধের জন্য শিক্ষাকে হাতিয়ার করতে পরামর্শ দেন বড়োনেত্রী প্রমীলাদেবী। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি জাতির উন্নয়নে পড়াশোনার পৃথক গুরুত্ব রয়েছে।
বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার তথা শিলচরের বিজেপি বিধায়ক দিলীপবাবু বলেন, ভুবন, দোহালিয়া, বড়াইল প্রভৃতি পাহাড়ের স্থায়ী বাসিন্দাদের জোর করে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। পাহাড়ি মানুষের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আইন করেই দায় সেরেছিল আগের সরকার। বাস্তবায়নে আগ্রহী ছিল না এরা। নতুন সরকার পাহাড়, চর, বনাঞ্চল ও সত্রের মাটি ফিরিয়ে দেওয়ার বিশাল চ্যালেঞ্জ নিয়েছে বলে জানান দিলীপবাবু।
প্রমীলা ব্রহ্ম ও দিলীপ পাল দুজনেই বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সম্প্রীতির মধ্য দিয়েই যে উন্নয়ন নিশ্চিত হয়, তা গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেন। পরস্পরকে জানার জায়গা এখনও গড়ে উঠেনি বলে অভিযোগ করে প্রমীলাদেবী বলেন, নাগা স্বাধীনতা সংগ্রামী হেইপউ জাডোনাং সম্পর্কে অ-উপজাতিদের ক-জন আর জানেন! অথচ তাঁর আন্দোলন-ক্ষেত্র কাছাড় পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। মন্ত্রী জানান, ১৯০৫ সালে মণিপুরের তামেংলং জেলার পুইলোয়াং গ্রামে জাডোনাং-এর জন্ম হয়েছিল। এক বছর বয়সে বাবাকে হারান। কষ্ট করে বেড়ে ওঠা। এর মধ্যে কিশোর বয়সেই বৃটিশের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। ১৯৩১ সালে ভুবন পাহাড় থেকে তাঁকে বন্দি করে বৃটিশরা। পরে মনিপুর জেলে নিয়ে আজকের মত ২৯ অগস্ট তারিখে তাকে ফাঁসি দিয়েছিল। বরাকভ্যালি হিলস ট্রাইব ডেভেলাপমেন্ট কমিটির সভাপতি গোপাল রংমাই নাগা ভাষায় অসমের স্কুল-কলেজে পড়াশোনার সুযোগ দাবি করলে প্রমীলাদেবী এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy