Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
নাবালিকা বিতর্ক

মন্ত্রীরা স্বীকার করছেন, তালার ছেলের বিয়েতে না গেলে হত

এক বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে এমন ‘টেনশনে’ আগে পড়েননি ঝাড়খণ্ডের নেতা-মন্ত্রীরা। কে জানত বিয়ের ভোজ খেতে গিয়ে এমন বিপাকে পড়তে হবে! মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস শেষ মুহূর্তে কৌশলে এড়িয়ে গিয়েছিলেন বিয়ের অনুষ্ঠানটি।

বিজেপি সভাপতি তালা মরান্ডির ছেলে-বৌ। বুধবার। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী।

বিজেপি সভাপতি তালা মরান্ডির ছেলে-বৌ। বুধবার। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রাঁচি শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৬ ০২:৫৮
Share: Save:

এক বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে এমন ‘টেনশনে’ আগে পড়েননি ঝাড়খণ্ডের নেতা-মন্ত্রীরা। কে জানত বিয়ের ভোজ খেতে গিয়ে এমন বিপাকে পড়তে হবে!

মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস শেষ মুহূর্তে কৌশলে এড়িয়ে গিয়েছিলেন বিয়ের অনুষ্ঠানটি। কিন্তু ঝাড়খণ্ডের বেশ কয়েকজন নেতা-মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি তালা মারান্ডির ছেলে মুন্নার বিয়ের অনুষ্ঠানে। ওই বিয়ে ঘিরে অভিযোগ ওঠে, নববধূর বয়স ১১। অন্তত স্কুলের নথিপত্রে মেয়েটির বয়স তাই। বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু বিতর্ক তাতে থামেনি। গত কালই ঝাড়খণ্ড স্টেট কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটসের ডিরেক্টর মনোজ কুমার গোড্ডার জেলাশাসক রাহুল সিনহাকে একটি নোটিস পাঠিয়েছেন। সেই নোটিসের কথা জানতে পেরেই ঘুম ছুটেছে মন্ত্রী-নেতাদের। সবাই এক কথায় স্বীকার করছেন, আরও খোঁজ খবর নিয়েই ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়া উচিত ছিল। এ যেন বিয়ে বাড়িতে গিয়ে পচা শামুকে পা কাটল মন্ত্রী-নেতাদের।

নোটিসে কী লেখা আছে? ডিসিকে পাঠানো ওই নোটিসে মনোজ কুমার জানিয়েছেন, মুন্নার নবপরিণীতা বধূ নাবালিকা প্রমাণিত হলে যে বিয়ে করেছে তাঁর উপর যেমন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেই সঙ্গে যাঁরা ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তাঁদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনে কী সাজা হতে পারে? ওই নোটিসে লেখা আছে, জামিন অযোগ্য ১১ নম্বর ধারায় সর্বোচ্চ দু’বছর জেল ও ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।

বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী লুইস মারান্ডি। তিনি এক প্রকার স্বীকারই করে নিলেন, ভুল হয়েছে। তবে তিনি বলেন, ‘‘দেখে কিন্তু মনে হয়নি মেয়েটি নাবালিকা। আদিবাসী মেয়েরা অনেক সময় বেশি বয়সে স্কুলে ভর্তি হয়। ভর্তি হয়ে তারা নিজেদের বয়স কমিয়ে লেখে। এখানে বোধহয় তেমনই হয়েছে। তবে আমাদের এই বির্তকে জড়ানো ঠিক হয়নি।’’ অন্য দিকে, রাজমহলের বিধায়ক অনন্ত ওঝা বলেন, ‘‘আমি মাত্র পনেরো মিনিটের জন্য অনুষ্ঠানে ছিলাম। মুন্নার বৌকে দেখার সুযোগও হয়নি। এত বিস্তারিত কিছু না জেনেই আমি গিয়েছিলাম। পরে শুনেছি সব কিছু।’’

শ্রমমন্ত্রী রাজ পলিবারের দাবি, তিনি বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু রাস্তাতেই নাবালিকা-বিতর্কের বিষয়টি জানার পরে গাড়ি ঘুরিয়ে বাড়ি চলে যান। তাঁর দাবি, বিয়ের অনুষ্ঠানে তাঁর ছবিও দেখা যাবে না। কিন্তু বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পর্যটন তথা ক্রীড়া মন্ত্রী অমর বাউরি। তাঁকে বারবার ফোন করেও ধরা যায়নি।

এই বির্তকের মধ্যেই গোড্ডার জেলাশাসক বলেছেন, ‘‘ওই মেয়েটির বয়স সংক্রান্ত এসডিও-র রিপোর্ট আমরা আজকালের মধ্যেই আদালতে পেশ করব। আদালত যা নির্দেশ দেবে তা কঠোর ভাবে পালন করা হবে।’’

এ দিকে বিরোধীদের সমালোচনা ক্রমশই ধারালো হচ্ছে। কোথাও দ্রুত তদন্ত ও তালা মারান্ডির গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ হচ্ছে, তো কোথাও আবার তাঁর কুশপুত্তলিকা দাহ করা হচ্ছে। সব দেখেশুনে ঝাড়খণ্ডের মন্ত্রীরা এক কথায় স্বীকার করছেন, এমন একটা বিতর্কিত বিয়ে সাম্প্রতিক অতীতে তাঁরা দেখেননি। ভবিষ্যতে সতর্ক থাকবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

child marriage BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE