E-Paper

দিল্লির নিঃশব্দ কূটনীতিতে ফল, বার্তা দিচ্ছে ঢাকা

আজই চলতি পরিস্থিতির সাপেক্ষে কিছুটা স্বর বদলে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী প্রশাসনের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে সাম্প্রতিক শৈত্য কাটাতে উদ্যোগী বাংলাদেশ। উপযাচক হয়ে তাঁর বক্তব্য, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আর খারাপের দিকে যাবে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:৩৩
মুহাম্মদ ইউনূস।

মুহাম্মদ ইউনূস। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

গত এক সপ্তাহে ময়মনসিংহ, রাজশাহী, চট্টগ্রামে উগ্র ভারত-বিরোধিতা, সংখ্যালঘু নিপীড়ন এবং নয়াদিল্লিকে দোষারোপ করার পরে এখনও পর্যন্ত কোনও সাংবাদিক সম্মেলন করে পাল্টা ভাষ্য দেয়নি বিদেশ মন্ত্রক। দু’বার নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনারকে তলব এবং দু’টি বিবৃতি ছাড়া এখনও পর্যন্ত পদক্ষেপ করেনি সাউথ ব্লক। কিন্তু বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের দাবি, এই আপৎকালীন ভূ-কৌশলগত পর্যায়ে পরিণত বিদেশনীতির পরিচয় দেওয়া হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রক ঘরোয়া ভাবে জানাচ্ছে, বাংলাদেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক কূটনীতি ভারত নিঃশব্দে চালিয়ে যাচ্ছে শক্তিধর দেশগুলির সঙ্গে। তার ফলও পাওয়া যাচ্ছে বলে বিশ্বাস সাউথ ব্লকের।

আজই চলতি পরিস্থিতির সাপেক্ষে কিছুটা স্বর বদলে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী প্রশাসনের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে সাম্প্রতিক শৈত্য কাটাতে উদ্যোগী বাংলাদেশ। উপযাচক হয়ে তাঁর বক্তব্য, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আর খারাপের দিকে যাবে না। সেই চেষ্টাই চলছে। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক রয়েছে। দু’দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কাজ করছে সরকার।’’ তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, চলতি উত্তাপের মধ্যেই মঙ্গলবার ভারত থেকে ৫০ হাজার টন সেদ্ধ চাল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে বলেও জানান সালেহউদ্দিন। তিনি মনে করেন, এটাই সম্পর্ক উন্নতির প্রমাণ।

সালেহউদ্দিন জানান, অর্থনীতি হোক বা স্বাস্থ্য— ভারত সব সময়েই বাংলাদেশের পাশে থাকে। ভারত থেকে চাল আমদানি প্রসঙ্গে সালেহউদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা ভারত ছেড়ে যদি ভিয়েতনাম থেকে চাল আনতে যাই, তবে কেজিতে অন্তত ১০ টাকা বেশি খরচ করতে হবে। ভারত থেকে আমরা যদি ঠিকঠাক দামে চাল কিনতে পারি, তো অন্য কোথাওকেন যাব!’’

অন্য দিকে, আমেরিকার পাঁচ পার্লামেন্ট সদস্য আজ বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পক্ষে সওয়াল করে ইউনূসকে চিঠি লিখেছেন। তাঁদের বক্তব্য, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিঠিতে সই রয়েছে গ্রেগরি মিকস (ব্যাঙ্কিং সদস্য, হাউজ ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি), বিল হুইজেঙ্গা (দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া সংক্রান্ত সাবকমিটির চেয়ারম্যান), সিডি কামলেজর-ডাভ-এর (দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া সংক্রান্ত সাব-কমিটির ব্যাঙ্কিং সদস্য) মতো নেতাদের।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘রাজনৈতিক সঙ্কটের এই সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেন না, এর মধ্য দিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হবে। আর এটি ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ভাবে দেশের জনগণের মতামত প্রকাশে সহায়ক হবে। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সততা আর দলনিরপেক্ষতার প্রতি আস্থা ফেরাতে প্রয়োজনীয় সংস্কারেও ভূমিকা রাখবে। কিন্তু আমরা উদ্বিগ্ন, বাংলাদেশ সরকার যদি রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম স্থগিত করে বা ত্রুটিপূর্ণ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আবার চালু করে, তা নিয়ে।’ ঘটনা হল, আসন্ন নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগকে পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়েছে। আর এর জেরে আন্তর্তাতিক স্তরে চাপে পড়তে হচ্ছে মুহাম্মদ ইউনূসকে।

তবে ভোটের মুখে দাঁড়ানো ইউনূস সরকারের হাল এখন ‘ভাঙব তবুও মচকাব না’— এমনটাই মনে করছে সাউথ ব্লক। রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না বলে আজ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বুধবার বিকেলে ঢাকায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন প্রধান উপদেষ্টাকে লেখা পাঁচ আমেরিকান আইনপ্রণেতার চিঠিটি দেখেননি। কিন্তু আওয়ামী লীগের বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট। যেহেতু আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে বাদ দিয়েছে, সেহেতু আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Muhammad Yunus India-Bangladesh Bangladesh Unrest Bangladesh Situation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy