শেষের শুরু হয়েছিল বেশ কিছু দিন আগে থেকেই। এ বার তাতে সিলমোহর পড়ল। আজ নির্বাচনের ফলাফলের পর বাল ঠাকরের ভাইপো রাজ ঠাকরের নাম ও নিশানদু’টোই আপাতত মুছে গেল মহারাষ্ট্রের রাজনীতি থেকে। ২৮৮টি আসনের লড়াইয়ে রাজের দল মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার (এমএনএস) দৌড় থেমে গেল মাত্র একটি আসনেই।
পতন যে অনিবার্য তা ভোটের আগে আশঙ্কা করেছিলেন রাজ ঠাকরেও। আর তাই যে দিন শিবসেনার সঙ্গে বিজেপি-র জোট ভেঙে যায়, সে দিন রাতে সাময়িক ভাবে বিভ্রান্ত উদ্ধবের প্রস্তাবে স্বভাববিরুদ্ধ ভাবেই নরম হয়ে গিয়েছিলেন রাজ। সদ্য বিজেপির সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়া, কিছুটা আতঙ্কিত উদ্ধব ঠাকরে সেই রাতে রাজকে ফোন করে হাত মিলিয়ে লড়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তা মেনে নিয়ে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি স্থগিত রাখতে দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজ। কিন্তু পরের দিন পর্যায়ক্রমে দলীয় বৈঠক করার পর নিজের দেওয়া প্রস্তাব থেকে পিছিয়ে আসেন উদ্ধব। বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও বিফল হন রাজ।
আজ ফলাফল স্পষ্ট হওয়ার পরে সেই উদ্ধবের বক্তব্য, “বালসাহেবকে যারা দুঃখ দিয়েছে, তাদের হার হবে এটাই স্বাভাবিক।” অথচ শিবসেনা থেকে বেরিয়ে এসে এমএনএস গঠন করার পর এই রাজই তাঁর উত্তপ্ত বক্তৃতায় বারবার রাজ্যবাসীকে বালসাহেবের যৌবনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে (২০০৯) রাজ নিঃসন্দেহে ছিলেন একটি ফ্যাক্টর। রাজ্যের প্রায় ১২ শতাংশ ভোট নিয়ে (যা এ বার নেমে এল ৩ শতাংশে), শিবসেনার সঙ্গে পাঞ্জা কষে (তখনও বালসাহেব বেঁচে এবং লড়াইয়ের ময়দানে) পেয়েছিলেন ১৩টি আসন। মরাঠি অস্মিতার বিষয়টিকে সামনে রেখে সে দিন তিনি শুধুমাত্র বিজেপি ও শিবসেনার দুর্গে আঘাত হানেননি, ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে একটি বড় সম্ভাবনা তৈরি করতেও সক্ষম হয়েছিলেন।
তবে অনেকেই মনে করেন, পতনের বীজ গোপনে তৈরি হচ্ছিল। মরাঠি অস্মিতাকে সবেধন করে রাজনীতি করতে ব্যস্ত রাজ বুঝতে পারেননি মহারাষ্ট্রের সমীকরণ দ্রুত পাল্টাচ্ছে। এক দিকে, ক্ষমতাসীন কংগ্রেস ও এনসিপি-র উপর মানুষের বিপুল ক্ষোভ, অন্য দিকে গোটা দেশ জুড়ে নরেন্দ্র মোদীর উত্থানকে হিসেবের মধ্যে রাখেননি তিনি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, উন্নয়ন এবং মোদী মডেলের রমরমার বিষয়গুলি ভাবেনইনি। তাঁর ব্যক্তিগত ক্যারিশমা হয়তো প্রচারের মাঠে লোক টেনেছে, কিন্তু গ্রহণযোগ্য কর্মসূচি এবং সংগঠনের অভাবে মূলস্রোতের রাজনীতি থেকে ক্রমশই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন রাজ। নতুন প্রজন্মের কাছে মরাঠি গর্বের বিষয়টি যে কোনও নতুন আবেদন তৈরি করতে পারছে না, সেটিও বুঝতে পারেননি বাল ঠাকরের ভাইপো।
আর বিজেপির সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারেননি তিনি। লোকসভা নির্বাচনের সময়ে বিজেপির সঙ্গে গোপনে সমঝোতা করেছিলেন। যে সব আসনে বিজেপি প্রার্থী দিয়েছে সেখানে সেখানে প্রার্থী দেননি। এই নিয়ে বিজেপি এবং শিবসেনার মনোমালিন্যও হয়েছিল। কিন্তু মোদী অচিরেই বুঝতে পারেন, রাজের ক্যারিশমা থাকতে পারে, কিন্তু বাল ঠাকরে দূরস্থান, উদ্ধবের মতো সুসংহত ক্যাডারবাহিনীও তাঁর পিছনে নেই। এর পর রাজ প্রকাশ্যেই যুদ্ধ ঘোষণা করে বসেন মোদীর সঙ্গে। কোনও ইতিবাচক রাজনৈতিক কর্মসূচি ছাড়াই তাঁর রাজনৈতিক প্রচার হয়ে পড়ে বিজেপি এবং শিবসেনার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার। যার ফলাফল আজই স্পষ্ট।
চুরমার হয়ে যাওয়া অহং নিয়ে রাজ আদৌ ঘুরে দাঁড়াতে পারেন কিনা, এখন সেটাই প্রশ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy