নরেন্দ্র মোদীকে টেক্কা দিয়ে কি ক্লাসে ফার্স্ট হতে পারবেন সনিয়া গাঁধী? কিংবা সদ্য ছুটি থেকে ফেরা রাহুল গাঁধী?
চক ডাস্টার-ব্ল্যাকবোর্ডের জমানা পেরিয়ে গিয়েছে কত দশক আগে! এ বার নতুন করে পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে বুড়ো বয়সে। যেখানে শিক্ষকও নরেন্দ্র মোদী, আর ছাত্রও তিনি। তাঁর ক্লাসরুমেই এ বার নম্বর পড়তে চলেছে সকলের মার্কশিটে।
সরকারে আসার পরেই প্রধানমন্ত্রী সব সাংসদকে অনুরোধ করেছিলেন নিজেদের নির্বাচনী কেন্দ্রে একটি করে গ্রাম দত্তক নিতে। আর সেটিকেই সাজিয়ে-গুছিয়ে বানিয়ে তুলতে একটি আদর্শ গ্রাম। পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতি সাংসদ এমন তিনটি গ্রামকে আদর্শ হিসেবে গড়ে তুললে ধাপে ধাপে দেশের সব গ্রামই সেজে উঠবে নব কলেবরে। সরকারের দু’বছর পেরিয়ে গিয়েছে। এ বারে দ্বিতীয় গ্রামটি হাতে নেওয়ার পালা। মোদী সরকার স্থির করেছে, সাংসদরা প্রথম যে গ্রামটি দত্তক নিয়েছিলেন, সকলের ক্ষেত্রে তা খতিয়ে দেখে গুণমান বিচার করা হবে। তার ভিত্তিতেই দেওয়া হবে নম্বর। যে যত ভাল কাজ করেছেন, তালিকায় তাঁর নাম থাকবে তত উপরে।
‘সংসদ আদর্শ গ্রাম যোজনা’ ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসীতে জোয়াপুর গ্রামটি দত্তক নিয়েছিলেন। সেই কাজ সম্পূর্ণ করে বারাণসীতেই আর একটি পিছিয়ে পড়া গ্রাম নাগেপুর তিনি দত্তক নিয়ে ফেলেছেন। প্রথম ঘোষণার পর সনিয়া গাঁধী তাঁর রায়বরেলী কেন্দ্রের উড়য়া গ্রাম আর রাহুল জগদীশপুর গ্রাম দত্তক নেন। দু’বছর পর মোদী সরকারের রেজাল্টে এ বার ধরা পড়বে, কে কতটা এগিয়ে। তৃণমূলের অবশ্য এই তালিকা নিয়ে কোনও টেনশন নেই। কারণ, গোটা দেশে পশ্চিমবঙ্গই একমাত্র রাজ্য যেখানে তৃণমূলের সাংসদরা কোনও গ্রাম দত্তক নেননি। গোড়ায় ‘ভুল’ করে দলের সুলতান অহমেদ একটি গ্রাম দত্তক নিয়ে ফেলেছিলেন বটে। কিন্তু বাকিরা সে পথে হাঁটেননি। এমনকী পশ্চিমবঙ্গের বাম সাংসদরাও সাড়া দেননি মোদীর ডাকে।
যার ফলে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের পরিসংখ্যান বলছে, গোটা দেশে মোট ৫৪৩ জন সাংসদের মধ্যে ৪৯৯ জনই কোনও না কোনও গ্রাম দত্তক নিয়েছেন। নেননি শুধু ৪৪ জন। আর তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেরই ৩৮ জন। এই নিয়ম অবশ্য শুধু লোকসভা সাংসদের ক্ষেত্রে নয়। রাজ্যসভার সাংসদদেরও বলা হয়েছিল এক একটি গ্রাম দত্তক নিতে। ২৫২ জন সাংসদের মধ্যে দত্তক না নেওয়ার তালিকায় শীর্ষে এখানেও পশ্চিমবঙ্গ। যাঁরা নেননি, আর যাঁরা নিয়েছেন- তাঁদের অধিকাংশেরই ক্ষোভ, প্রধানমন্ত্রী সব সাংসদকে এক একটি গ্রাম দত্তক তো নিতে বলে ক্ষান্ত হয়েছেন। কিন্তু তার জন্য পৃথক কোনও অর্থ বরাদ্দ করেননি। ফলে সাংসদ তহবিল থেকেই কোনওক্রমে এদিক-ওদিক করে সামাল দিতে হচ্ছে। তার উপর এক গ্রামের উন্নতি হলে আশপাশের গ্রামগুলির মানুষজন অবহেলার অভিযোগ তুলছেন। পরের বার নির্বাচনে ভোট না দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। ফলে সব মিলিয়ে নাজেহাল অবস্থা হচ্ছে সাংসদদের। বারবার বলেও কোনও লাভ হয়নি কেন্দ্রকে।
কিন্তু নরেন্দ্র মোদী এখন মূল্যায়ণের একটি তালিকা পেশ করে দেখাতে চান, সদিচ্ছা থাকলে বর্তমান কাঠামোতেই একটি গ্রামকে আদর্শ করে তোলা যায়। জনগণের অংশিদারিত্বও দরকার সেখানে। যেমন প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দত্তক নেওয়া গ্রাম জোয়াপুরে এখন প্রকাশ্যে শৌচ করলে ৫০০ টাকা জরিমানার ফরমান জারি করেছেন সেখানকার গ্রাম প্রধান। সব বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের পর এ ধরণের আর কোনও ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না বলে সাফ জানিয়েছেন তিনি।
এই তালিকা প্রকাশ করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যে সনিয়া-রাহুল গাঁধীকে অপদস্ত করতে পারে, সে আশঙ্কা ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে কংগ্রেস শিবিরে। সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব অহমেদ পটেল প্রধানমন্ত্রীকে তাই চিঠি লিখে আগেভাগে গান গেয়ে রেখেছেন। গুজরাতের দুমখাল গ্রামটি তিনি দত্তক নিয়েছেন। সেই অভিজ্ঞতার নিরিখে তিনি অভিযোগ করেন, ভাল কাজ করতে চাইলেও গুজরাত সরকার তাঁকে সাহায্য করছে না। বিজেপির এক নেতা অবশ্য বলেন, ‘‘এ সব অজুহাত। তালিকা প্রকাশ পেলে দেখা যাবে, বিজেপিরও অনেক সাংসদ ভাল কাজ করেননি। সেটিই তো সুস্থ প্রতিযোগিতা। উন্নয়নের ক্ষেত্রে সুস্থ প্রতিযোগিতাই তো চান প্রধানমন্ত্রী। রাজ্যগুলির মধ্যেও উন্নয়নে এই লড়াই বাধিয়ে দিয়ে তিনি বারবার প্রতিযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর কথা বলেছেন। এর মধ্যে রাজনীতি খুঁজে লাভ নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy