Advertisement
E-Paper

মোদী-শরিফ শৈত্য দেখল সার্ক

এক মঞ্চেই বসে ছিলেন। মাঝে শুধু দু’আসনের তফাৎ। কিন্তু বুধবার সার্ক শীর্ষ-সম্মেলনে তিন ঘণ্টার বৈঠকে ছিটেফোঁটা সৌজন্য-বিনিময়ও হল না দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে। নরেন্দ্র মোদী এবং নওয়াজ শরিফ দু’জন দু’জনের দিকে এক বারও চেয়ে দেখলেন না পর্যন্ত। সার্ক শীর্ষ বৈঠক চলাকালীন ভারত ও পাকিস্তানের আলাদা করে সাক্ষাতের সম্ভাবনা যে নেই, তা স্পষ্ট হয়েছে গত কালই। তবু কাঠমান্ডুতে গোটা বিশ্বের নজর ছিল এই দুই দেশের দিকেই। কিন্তু চুক্তি-আলোচনা এ সব পেরিয়ে ভারত-পাক সীমান্তের চাপা উত্তেজনাই যেন উঠে এল সার্ক বৈঠকের মঞ্চে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৪৬
সার্ক শীর্ষ বৈঠকে নওয়াজ শরিফ এবং নরেন্দ্র মোদী।  ছবি: এএফপি।

সার্ক শীর্ষ বৈঠকে নওয়াজ শরিফ এবং নরেন্দ্র মোদী। ছবি: এএফপি।

এক মঞ্চেই বসে ছিলেন। মাঝে শুধু দু’আসনের তফাৎ। কিন্তু বুধবার সার্ক শীর্ষ-সম্মেলনে তিন ঘণ্টার বৈঠকে ছিটেফোঁটা সৌজন্য-বিনিময়ও হল না দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে। নরেন্দ্র মোদী এবং নওয়াজ শরিফ দু’জন দু’জনের দিকে এক বারও চেয়ে দেখলেন না পর্যন্ত।

সার্ক শীর্ষ বৈঠক চলাকালীন ভারত ও পাকিস্তানের আলাদা করে সাক্ষাতের সম্ভাবনা যে নেই, তা স্পষ্ট হয়েছে গত কালই। তবু কাঠমান্ডুতে গোটা বিশ্বের নজর ছিল এই দুই দেশের দিকেই। কিন্তু চুক্তি-আলোচনা এ সব পেরিয়ে ভারত-পাক সীমান্তের চাপা উত্তেজনাই যেন উঠে এল সার্ক বৈঠকের মঞ্চে।

মলদ্বীপ আর নেপালের প্রধানমন্ত্রী বসে ছিলেন দু’জনের মাঝে। তাঁদের পাশ থেকেই উঠে শরিফ ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে পিছন দিয়ে তাঁকে পেরিয়ে মঞ্চে উঠলেন, বক্তৃতা করলেন। মোদীকে যেন দেখলেনই না। পাল্টা এল মোদীর তরফেও। করমর্দন দূরে থাক, মঞ্চে ওঠার পরে যিনি নিজের প্রথম সার্ক শীর্ষ বৈঠকে বাংলাদেশের শেখ হাসিনা, শ্রীলঙ্কার মাহিন্দা রাজাপক্ষে, এমনকী আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরফ ঘনিকে শুভেচ্ছা জানালেন। ভুলেও নাম করলেন না নওয়াজ শরিফের।

কূটনীতিকরা জানাচ্ছেন, কার্গিল যুদ্ধ পরবর্তী সার্ক সম্মেলনে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে এক রকম নাটকীয় ভাবেই হাত মেলান সে সময়ের পাক প্রধানমন্ত্রী পারভেজ মুশারফ। দু’দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের শৈত্য সত্ত্বেও মুশারফের সেই আচরণে চমকে যান সবাই। এ বার সেই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটে কি না, তা দেখতে উদগ্রীব ছিলেন অনেকেই। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, শরিফের পক্ষে নিজে উদ্যোগী হয়ে এ কাজ করা সম্ভব ছিল না। ভারত নিয়ে কড়া অবস্থান বজায় না রাখলে তিনি নিজের দেশেই সমালোচিত হতেন। আর মোদী এগিয়ে এসে সৌজন্য দেখালে আখেরে লাভ হত শরিফেরই। কিন্তু কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের সঙ্গে পাক রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাতের পর দু’দেশের বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক বাতিল করে ভারত। আর আজ, ২৬/১১-র ছ’বছর পূর্তিতে মোদী যে এ ব্যাপারে সক্রিয়তা দেখাবেন না, সেটাই প্রত্যাশিত। উল্টে পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব আরও স্পষ্ট করে দিয়ে অন্য দেশের প্রধানমন্ত্রীদের সৌজন্য দেখাতে কসুর করেননি ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সার্কভুক্ত দেশগুলির উন্নয়নে ভারত কী ভাবে কাজ করতে চায়, এর পরেই মোদী চলে যান সেই প্রসঙ্গে। পড়শি দেশের মধ্যে রেল-রাস্তা-বিদ্যুৎ-ট্রানজিট যোগাযোগের মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ যোগাযোগ দৃঢ় হয়েছে, শক্তি ক্ষেত্রে ভারত-নেপাল সহযোগিতার নয়া যুগ তৈরি করতে চলেছে, জোরদার হচ্ছে ভারত-ভুটান সম্পর্ক, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে সহজ হয়েছে ভারত-শ্রীলঙ্কার ব্যবসায়িক লেনদেন, দূরত্ব এবং প্রতিবন্ধকতা বাধা হয়নি আফগানিস্তান-ভারতের সম্পর্ক তৈরিতে, ভারত-পাকিস্তানের রেল-বাস যোগাযোগ সাহায্য করছে দু’দেশের মানুষকে এ সব উদাহরণ দিয়ে মোদী বোঝাতে চেয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক নেতৃত্বের রাশ তিনি নিজের হাতেই রাখতে চান। পাশাপাশি ২৬/১১-র ছ’বছর পূর্তিতে সন্ত্রাসবাদীদের মদত দেওয়া বন্ধ করতে মোদী বার্তা দিয়েছেন সব দেশকে। কিন্তু নওয়াজ শরিফ তাঁর বক্তব্যে এমন কোনও প্রসঙ্গই রাখেননি যাতে সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তানের উদ্যোগ চোখে পড়ে। কূটনীতিকদের মতে, সার্ক সম্মেলনে তেমন ইতিবাচক কোনও বার্তা দিতে পারল না ভারত বা পাকিস্তান। তা ছাড়া, মোদী আজ সার্ক-গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সুবিধায় উপগ্রহ উৎক্ষেপণ, মুক্ত বাণিজ্য, সহজে বাণিজ্যিক ভিসা এমন নানা প্রতিশ্রুতির আশ্বাস দিলেও পাকিস্তানের নেতিবাচক অবস্থানে ফিকে হয়েছে সবই। যোগাযোগ ব্যবস্থা সংক্রান্ত চুক্তির মধ্যে ‘মোটর ভেহিকলস্ প্যাক্ট’-সহ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে সায় দেয়নি পাকিস্তান। প্রতি দেশের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ এবং সহজে পণ্য পরিবহণ জোরদার করতে যেখানে সব দেশ সক্রিয়, সেখানে পাকিস্তানের এই অবস্থান হতাশ করেছে অনেককেই। কারণ শুধু একটি দেশের আপত্তির ফলে এই সব প্রকল্প রূপায়ণ জোর ধাক্কা খেল।

তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাকিস্তান জেনেবুঝেই এই পদক্ষেপ করেছে। কারণ সার্কে সদস্যপদ পেতে চিন তৎপর হওয়ায় এমনিতেই উদ্বেগে রয়েছে ভারত। সার্কভুক্ত দেশগুলির মধ্যে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নিতে পারে চিন, সেই আশঙ্কায় ভারত চাইছে চিনকে ঠেকিয়ে রাখতে। কূটনৈতিক সূত্রে দাবি, সেই জন্যই চিনের সদস্যপদের জন্য সওয়াল করছে পাকিস্তান। কিন্তু চিনের সঙ্গে মিলে ভারতকে কোণঠাসা করার পাকিস্তানের চেষ্টা রুখতে চায় ভারত। তাই ভারতের প্রস্তাবিত চুক্তিতে সায় না দিয়ে পাল্টা বার্তা দিল পাকিস্তান।

খুশখবর শীঘ্রই, হাসিনাকে মোদী

তিস্তা ও স্থলসীমা চুক্তি দ্রুত রূপায়ণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফের আশ্বস্ত করলেন নরেন্দ্র মোদী। কাঠমান্ডুতে সার্ক শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে আজ শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় যোগ দিতে গিয়ে মুখোমুখি বসেন মোদী-হাসিনা। সেখানেই মোদী বলেছিলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে তিনি ঢাকাকে বড়সড় ‘খুশখবর’ দিতে চান। হাসিনা এ দিন মোদীকে সে কথা মনে করিয়ে দেন। মোদী বলেন, কাজ এগোচ্ছে। প্রতিশ্রুতি পালন নিয়ে তিনি আশাবাদী। এত দিন বিরোধিতা করে আসা তৃণমূলের সিলমোহর নিয়েই কাল বিদেশ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে অনুমোদিত হয়েছে স্থলসীমা চুক্তি সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিলের খসড়াটি। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবসের আগে সংসদে ছিটমহল সংক্রান্ত বিলটি পাশ হলে তা হবে বিজয় দিবসে দিল্লির উপহার। তাই আপাতত তিস্তা চুক্তির বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরে দু’দেশ যে ভাবে বোঝাপড়া করে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে চলেছে, সে প্রসঙ্গও আলোচনায় ওঠে। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা ঢাকা ঘুরে এসেছেন। বাংলাদেশ থেকে র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের একটি প্রতিনিধি দল কাল কলকাতায় আসছে। মোদী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নের বড় প্রতিবন্ধক সন্ত্রাস। তা প্রতিরোধে ঢাকা-দিল্লি সমঝোতা দৃঢ় হবে। কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপনের যে প্রস্তাব মোদী দিয়েছেন, হাসিনা তা সমর্থন করেন।

Narendra Modi Nawaz Sharif SAARC summit national news online national news 18th SAARC summit india pakistan 2 country
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy