Advertisement
E-Paper

ধুরন্ধর বটে আদিত্য ধর, একটি ভাল দেখতে বিপজ্জনক ছবি!

একটি ছবিতে এমন বিপজ্জনক সংলাপ কি সত্যিই থাকতে পারে, যা আমাকে আমার দেশের মানুষকে সন্দেহ করতে শেখায়? কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাবাহিনীর প্রধান কি দেশের তৎকালীন শাসনকালের কথা উল্লেখ করে বলতে পারেন, এর পরে আমাদের ‘ভাল দিন’ আসবে!

অনিন্দ্য জানা

অনিন্দ্য জানা

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:৫৪
ছবিতে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে বিভিন্ন ধরনের পরচুলা।

ছবিতে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে বিভিন্ন ধরনের পরচুলা। ধুরন্ধর ছবির পোস্টার।

ছবি বটে একখানা! লিখতে বসে খানিক ভেবলেই যাচ্ছি।

কোনও ছবির জনপ্রিয়তা কী ভাবে মাপে? নিশ্চয়ই প্রেক্ষাগৃহে কত লোক আসছেন, তা দিয়ে। মানে কত লোক টিকিট কাটলেন তা দিয়ে। সেটাকেই কি ‘বক্স অফিস’ বলে? তা-ই হবে। এই অফিসটি যে কোথায়, আমার মতো মূঢ়মতি কোনওদিন জানতে পারেনি। ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলেই প্রাজ্ঞরা ভেবেছেন, ব্যাটা ফিচলেমি করছে। প্রশ্নটা মোটে সিরিয়াসলি নেনইনি।

আমি অবশ্য কম ধুরন্ধর নই। ছবি সুপারহিট কি না বুঝতে মধ্যান্তরে সটান গেলাম পুরুষ শৌচাগারে। দেখলাম, মূত্র বিসর্জনের যা লাইন পড়েছে, তাতে এ ছবি বাম্পার হিট না-হয়ে যায় না। লম্বা লাইন পপকর্নের কাউন্টারেও। বুদ্ধিমান মন চকিতে বুঝে নিল, দর্শকেরা প্রকৃতির আহ্বান এবং কিছুমিছু খিদের বোধ চেপে বসে থাকছেন, কিন্তু ছবি ছেড়ে হল্ থেকে বেরোচ্ছেন না। সুতরাং, এই ছবি, যাকে কিনা অর্ণব গোস্বামী বলে থাকেন, ‘আনমিসেব্‌ল!’

সত্যিই এ ছবি মিস্ করা যায় না। এ ছবি চলাকালীন হল্ থেকে বেরোনোও যায় না। বহুমূত্রের রোগী হলেও নয়। বড্ড ভাল দেখতে একটি ছবি বানিয়েছেন জন্মসূত্রে কাশ্মীরি পণ্ডিত আদিত্য ধর। ৩ ঘণ্টা ৩২ মিনিট ধরে চোখ ফেরানো যায় না। দুর্দান্ত লোকেশন। দারুণ ক্যামেরার কাজ। চমৎকার অভিনয়। অসাধারণ দেখতে এক একটা ফ্রেম! আলো-আঁধারি, ধোঁয়া-ধোঁয়া, দ্রুতগতির গাড়ি, অ্যাসল্ট রাইফেলের আস্ফালন, আগুন, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ— ছবির প্রতিটি দৃশ্য স্রেফ তাক লাগিয়ে দেয়!

তবে পুরো ছবিতে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে (অন্তত আমার কেড়েছে) বিভিন্ন ধরনের পরচুলা। ‘উইগ’। বলতে গেল পরচুলাই এই ছবির ‘হিরো’। কারটা ছেড়ে কারটা দেখব? অক্ষয় খন্না না মাধবন? সঞ্জয় দত্ত না অর্জুন রামপাল? রাকেশ বেদি না পাকিস্তানি রাজনীতিকের চরিত্রের সেই নাম না-জানা অভিনেতা? টোটাল শিল্প! একমাত্র রণবীর সিংহেরটা মনে হল পরচুলা না-হলেও না-হতে পারে। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলাম, এমন আলুলায়িত কেশদাম (প্রায় পুরো পিঠ ছাপানো) সত্যিকারের হলে ধরে নিতে হবে অন্তত বছর পাঁচেক তাঁর চুলে কাঁচি পড়েনি। অর্থাৎ, শুধু এই ছবিটার দিকেই তিনি পাখির চোখের মতো তাকিয়ে থেকেছেন এবং মাথার চুল বাড়িয়ে গিয়েছেন। দীপিকা পাড়ুকোনের স্বামীর হিন্দি ছবির জগতে যে ধরনের চাহিদা, তাতে কি তিনি শুধুমাত্র একটি ছবির একটি চরিত্রের কেশরাজির (কেশের বদলে কেশরও বলা যেতে পারে) জন্য এমন চাতকের প্রতীক্ষা নিয়ে বসে থাকবেন? কে জানে! হতে পারে। শোভা দে তো বলেই দিয়েছেন, এই ছবি ‘এপিক’। মহাকাব্য। তা মহাকাব্যের নায়ক হওয়ার জন্য প্রায় অনন্ত অপেক্ষা তো করাই যায়। না কি?

ধুরন্ধরের ভূমিকায় রণবীর সিংহ।

ধুরন্ধরের ভূমিকায় রণবীর সিংহ। ছবির দৃশ্য।

ছবির দু’নম্বর ‘হিরো’ হিংসা। ‘ভায়োলেন্স’। দেখতে দেখতে মনে হয়, পাকিস্তানের রাস্তায় খোলা তলোয়ার বা নাইন এমএম পিস্তল লোকের হাতে হাতে ঘোরে। প্রতিপক্ষকে দেখলেই হয় কচাৎ করে মুন্ডু কেটে গেন্ডুয়া খেলতে শুরু করে বা ফটফট করে গুলি চালায়। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছিটকে ওঠে। অতিকায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল বয়লারের মধ্যে বগবগ করে ফুটন্ত ‘পোয়া’র মধ্যে জীবন্ত মানুষকে ঠেলে ফেলে ঢাকনি এঁটে দেয়। যাতে লোকটা সেদ্ধ হয়ে তালগোল পাকিয়ে মরে। শুধুমাত্র অন্তর্বাস পরিহিত ভারতীয় গুপ্তচরের মুখে-হাতে-ঠোঁটে-পায়ে অগুনতি আঁকশি-লাগানো ফিতের গুচ্ছ ধরে টান মারে পাক গোয়েন্দাবাহিনীর প্রধান আর যন্ত্রণায় ছটফট করে ওঠে কাঠের পাটাতনের উপর শোয়া ছিন্নভিন্ন, রক্তাক্ত চেহারা। ভরা বাজারের মধ্যে লোহার বাটখারা দিয়ে মাথা থেঁতলে থেঁতলে বিপক্ষের নেতাকে মারে (রণবীরের) পক্ষের নেতা। তার পরে স্ক্রিন জুড়ে ফুটে ওঠে আততায়ীর মুখ। চোখেমুখে এবং পোশাকে ফুটফুটে রক্তের ছিটে নিয়ে তাকে অবিকল এক চিত্রল হরিণের মতো দেখায়।

অ্যাসাইনমেন্টে বারতিনেক পাকিস্তানে গিয়েছি। তার মধ্যে একবার সাধারণ নির্বাচন কভার করতে। ফলে বিভিন্ন শহরে ঘোরাফেরা থেকেছে। পিছনে পাক গোয়েন্দা নিয়েই থেকেছে। তবু যে এই ছবির পাকিস্তান তিন বারই চোখ এড়িয়ে গিয়েছে, সে নেহাত আমারই দুর্ভাগ্য। তবে কিনা, আমাদের দেশেও তো গ্যাংস্টারেরা নাইলনের থলি হাতে বাজারে শাক-সব্জি কিনতে বেরোয় না। বা শপিং মলের ট্রায়াল রুমে ট্রাউজ়ার্সের ফিটিংস মাপতে যায় না। পাকিস্তানের রাস্তাঘাটেই বা হুট বলতে গ্যাংস্টারদের দেখা পাওয়া যাবে কেন!

২১২ মিনিটের ছবি শুরু হওয়ার আগে একটি অণুগল্পের সাইজ়ের ‘ডিসক্লেমার’ আছে। এত লম্বা বিবৃতি (সমস্ত চরিত্র কাল্পনিক, কিন্তু ঘটনা সব সত্যি-সহ আরও যা যা এত দিন কেউ বলেনি) কখনও কোনও ছবি শুরুর আগে দেখেছি বলে মনে করতে পারছি না। অবশ্য ছবি দেখতে দেখতে বুঝলাম, আদিত্যের সবকিছুই একটু লম্বা, টানা, দীর্ঘ। তিনি কিছুই সংক্ষেপে সারতে পারেন না। সে কারণে এই দীর্ঘ ছবির শেষেও লেখা আছে, ‘টু বি কন্টিনিউড’। অর্থাৎ, শেষ হয়েও হইল না শেষ। আরও চলবে। সেই অংশ মুক্তি পাবে ২০২৬ সালের ১৯ মার্চ। আপাতত মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটি আটটি পর্বে বিভক্ত। নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সিরিজ় হিসাবে মুক্তির হিসাব মাথায় রেখেই।

আদিত্যের ছবিতে একটা লিঙ্গের ‘বাইনারি’ আছে। প্রথম সারির চরিত্রের পুরুষ অভিনেতারা সকলেই ভাল দেখতে। আবার অভিনেত্রীরা সকলেই দেখতে তত ভাল নন। ওই কাজ চালিয়ে দেওয়া মার্কা। অবশ্য তার বেশি তাঁদের বিশেষ ভূমিকাও নেই। ফুলদানির চেয়ে একটু বেশি চলচ্ছক্তিসম্পন্ন। কিন্তু পুরুষেরা? কোনও কথা হবে না!

কপাটবক্ষ রণবীরের চোখের ধূসর মণির অন্তর্ভেদী দৃষ্টি সটান এসে ধাক্কা মারে। কল্পনার বালোচ বিদ্রোহীর সঙ্গে হুবহু মিলে গিয়েছে তাঁর চেহারা এবং হাবভাব। পাশাপাশিই, তিনি যে আসলে ভিন্‌দেশ (শত্রুপক্ষ) থেকে ঢুকে পড়া গুপ্তচর, সেই উচাটন, শঙ্কা এবং উদ্বেগও তাঁর মধ্যে ধরা পড়েছে। দেখতে তো তাঁকে এমনিতেই ভাল। এই ছবিতে লাফাঙ্গা হাবভাবও নেই। বরং অনেক গম্ভীর এবং গভীর। সেই গভীরতার মধ্যেও তাঁর চরিত্রের আপাত-ভঙ্গুরতা ধরা পড়েছে। চমৎকার মানিয়েছে তাঁকে তাঁরই জন্য নির্দিষ্ট নামভূমিকায়।

অক্ষয়কেও দেখতে দারুণ লেগেছে। আশপাশের বাঘা চেহারার অভিনেতাদের তুলনায় একটু খর্বকায়। কিন্তু শরীরী ভাষায় একটা চমৎকার ‘সোয়্যাগ’ আছে। তাঁর ধীর এবং মন্থর পদক্ষেপ, ডান হাতটা একটু ভাঁজ করে বুকের কাছে তুলে এবং মাথা সামান্য ঝুঁকিয়ে ‘আদাব’ জানানো, ঠোঁটে আলগোছে ঝুলতে থাকা জ্বলন্ত ‘চুট্ঠা’ এবং আপাতদুর্বোধ্য ‘খুস ফুস’ গানের সঙ্গে দু’হাত তুলে দুলে দুলে নাচ (যা নিয়ে এখন অকাতরে রিল তৈরি হচ্ছে গোটা উপমহাদেশ জুড়ে) মিলিয়ে তাঁর একটা আলাদা জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে। কিন্তু মুশকিল হল, সংলাপ বললেই তিনি ‘পাকিস্তানের প্রসেনজিৎ’! অনাবশ্যক দাঁত চেপে চেপে কথা, যেন শব্দগুলো কষ্ট করে ফাঁকফোকর গলে বেরোচ্ছে। আবার স্ত্রীকে চুমু খেতে গেলে তিনি ‘পাকিস্তানের জ্যাকি শ্রফ’! চোয়াল-টোয়াল কঠিন। কঠিন পাঞ্জায় ঘাড় আঁকড়ে ধরছেন। চুমু খেতে তো নয়, যেন কামড়ে দিতে যাচ্ছেন!

সঞ্জয় দত্তের চেহারা এখন কী রকম একটা ঘাড়ে-গর্দানে হয়ে গিয়েছে। সেই কেঁদো চেহারায় ইদানীং তাঁকে অদ্ভুত সমস্ত চরিত্রে দেখা যায়। যাতে খানিকটা ভাঁড়ামি, খানিকটা মাছের মতো স্থির চোখে চেয়ে থাকা, খানিকটা হুমহাম চলাফেরা থাকে। এই ছবিতেও তিনি তেমনই এক চরিত্রে। গদাম-গদাম গুলি ছুড়ছেন। ভস ভস করে সিগারেট ফুঁকছেন। হাউহাউ করে সংলাপ বলছেন। তাঁর চরিত্রটি বাস্তবের এক পুলিশ অফিসারের আদলে। ঘেঁটেঘুঁটে দেখলাম, সেই ছবির সঙ্গে তাঁর একটা বাহ্যিক মিল আছে। কিন্তু প্রকৃতিগত মিল? কে জানে!

মাধবনকে কণ্ঠস্বর ছাড়া চেনার উপায় নেই। এতটাই নিখুঁত তাঁর অঙ্গে অজিত ডোভালের রূপটান। বাস্তবের ডোভালের মুখটা সামান্য লম্বাটে। এ ছাড়া আর কোথাও কোনও বৈসাদৃশ্য নজরে পড়ে না। যদিও ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান ছিনতাই হয়ে কন্দহরে নামার পর ডোভাল তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী জসবন্ত সিংহের সঙ্গে গিয়ে বিপন্ন যাত্রীদের ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন কি না, চিত্রনাট্যের সেই অংশ নিয়ে ঐতিহাসিক সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। তবে কিনা, দু’মাইল লম্বা ‘ডিসক্লেমার’ তো আগেই দেওয়া ছিল— ‘কাল্পনিক। কিন্তু সমস্ত সত্য ঘটনা অবলম্বনে’। এক্ষেত্রে না হয় শিল্পীর স্বাধীনতার কথা ভেবে আমরা প্রথম শব্দটাই নিলাম।

ছবির শেষে ‘সিক্যুয়েল’ ঘোষণার দিনক্ষণ দেখতে দেখতে মনে হল, ঠিকই তো। শেষ হয়ে হইল না শেষ। ধুরন্ধরের আসল কাজ তো করাচি দখল করা। সেটা তো এই সাড়ে তিন ঘণ্টা পরেও বাকি রয়ে গেল। মনে পড়ল, অপারেশন সিঁদুরের সময় চ্যানেলে চ্যানেলে করাচি দখল হয়ে গিয়েছিল। তার মধ্যে একটা সত্যাসত্যের বেড়া ছিল। সেলুলয়েডে সে আঁটিসাঁটি নেই। সেখানে পরের ছবিতে করাচি দখল হতেই পারে। হয়েও যাবে নিশ্চয়ই।

পাকিস্তানের করাচির লিয়ারি শহরের পটভূমিকায় আদিত্য যে ছবি তৈরি করেছেন, তার মূল উপপাদ্য পাকিস্তানে গ্যাং ওয়ার (সে ঘটনা ঐতিহাসিক ভাবেই সত্য)। ডোভালের পরিকল্পনা এবং জসবন্তের অনুমোদন অনুযায়ী সেই গ্যাংয়ের মধ্যে ভারতীয় গুপ্তচরের (তারই সাঙ্কেতিক নাম ‘ধুরন্ধর’) অনুপ্রবেশ এবং তার মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় জাল নোট পাচার বা জঙ্গি হামলার পরিকল্পনার আগাম খবর পাওয়া। অর্থাৎ, কালক্রমে পাকিস্তানের জেহাদি এবং জঙ্গি নেটওয়ার্ক ধ্বংস করা। স্পাই থ্রিলারের প্লট হিসাবে মারকাটারি, সন্দেহ নেই। সঙ্গে পাক সন্ত্রাসবাদ, দেশপ্রেম, ভারতে বিভিন্ন পাকিস্তানি জঙ্গি হামলার আসল ফুটেজ-সহ রূপান্তরের অনুপান গুলে দেওয়া হয়েছে। এই ঝাঁঝালো ককটেলে নেশা হওয়া অনিবার্য। হচ্ছেও।

এই পর্যন্ত ঠিকই আছে। কিন্তু মাধবনের চরিত্র যখন বলে, ‘‘হিন্দুস্তানিরাই হিন্দুস্তানিদের সবচেয়ে বড় শত্রু’’, তখন আচম্বিতে একটা ঝটকা লাগে। মনে হয়, তার মানে কি আমাদের দেশবাসী আমার শত্রু? আমার পাশের লোকটা আমার শত্রু? আমার পড়শি আমার শত্রু? একটি সর্বজনগ্রাহ্য ছবিতে এমন বিপজ্জনক সংলাপ কি সত্যিই থাকতে পারে, যা আমাকে আমারই দেশের মানুষকে সন্দেহ করতে শেখায়?

অথবা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাবাহিনীর প্রধান (মাধবন) কি দেশের তৎকালীন শাসনকালের কথা উল্লেখ করে বলতে পারেন, এর পরে আমাদের ‘ভাল দিন’ আসবে! অথবা ২৬/১১-র মুম্বই হামলার সময় পাক জঙ্গি এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগকারীদের কথোপকথনের প্রতিলিপি লাল রঙের স্লাইডের উপর দেখিয়ে এবং সঙ্গে শুনিয়েও সেই দিনগুলো মনে করিয়ে দেওয়া। কিংবা সংসদে পাক জঙ্গিদের হামলার ফুটেজ এবং রূপান্তর দেখানো। তথ্য হিসাবে ঠিকই আছে। কিন্তু তার সঙ্গে এটা বলাও কি খুব জরুরি ছিল যে, অমুক বছর থেকে অমুক সময়কাল পর্যন্ত এই ঘটনাগুলো ঘটেছে? ঘটনাচক্রে, যে সময়কালে দেশের শাসনভার বিজেপির হাতে ছিল না।

আরও পড়ুন:

সম্ভবত ছিল। কারণ, গুপ্তচর থ্রিলারের আবডালে ‘ধুরন্ধর’ একটি প্রচারধর্মী ছবিই বটে। খুবই সূক্ষ্ণ ভাবে এবং আলতো পায়ে সৃষ্টি এবং প্রচারের মধ্যকার ভেদরেখা পেরিয়েছেন পরিচালক আদিত্য। এতটাই বেড়াল-পায়ে সেই গমন যে, আপাতদৃষ্টিতে চোখেও পড়ে না। যেমন এই ছবিতে কৌশলে বলা হয়েছে সেই কথাটা, হুবহু যে বাক্যটি বেশ কয়েক মাস আগে কলকাতায় কয়েক জন সম্পাদকের সঙ্গে এক ঘরোয়া নৈশভোজে মিলিত হয়ে পাকিস্তান সম্পর্কে বলেছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, ‘‘আগের সরকারের আমলে যা হয়েছে, হয়েছে। অব হম উসকে ঘর মে ঘুসকে মারেঙ্গে! আগে যা হয়েছে হয়েছে, এবার আমরা ওদের ঘরে ঢুকে মারব!’’ যেমন রণবীর সিংহের চরিত্রের ‘মিশন’গত পরিচয় দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘ঘায়েল হুঁ, ইস লিয়ে ঘাতক হুঁ’। অর্থাৎ, ‘আমি আহত, তাই পাল্টা মারছি’।

‘শঠে শাঠ্যং সমাচরেৎ’-এর এই দর্শন সারা দেশে যে খুব খাচ্ছে, অপারেশন সিঁদুরের জয়জয়কারই তার প্রমাণ। কিন্তু সেই ঢক্কানিনাদে আমরা ভুলতে বসেছি যে, চোখের বদলে চোখ নিতে থাকলে দুনিয়াটাই অন্ধ হয়ে যাবে!

পুনশ্চ: ‘ধুরন্ধর’ নিয়ে তিনটি আলাদা এবং স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া শুনলাম। এক, ছবিটা ‘ডিস্টার্বিং’। দুই, ছবিটা আসলে একটা তথ্যচিত্র। ডকুমেন্টারি। তিন, ছবিটা দুরন্ত স্পাই থ্রিলার। আরও দু’-তিন বার দেখা যায়। শুনে মনে হল, আদিত্য ধর আর যা-ই হোন, তিনি বিবেক অগ্নিহোত্রী নন। তিনি আসল ‘ধুরন্ধর’। তিনি একটি ভাল দেখতে বিপজ্জনক ছবি বানিয়ে বাজারে ছেড়েছেন। যাকে যে যার ইচ্ছেমতো কৌটোয় পুরে নিয়ে মাঝেমধ্যে ঢাকনি খুলে দেখে নিতে পারে।

Dhurandhar Dhurandhar Controversy Bollywood Film Aditya Dhar Ranveer Singh Akshay Kumar R Madhavan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy