Advertisement
E-Paper

আলোর পথযাত্রী!

হরমনপ্রীত কৌর-স্মৃতি মন্ধানাদের বিশ্বকাপ জেতার সম্ভাবনা নিয়ে যে বিপুল কাড়ানাকাড়া বেজেছিল, তার সিকিভাগও হয়নি রবিবার দৃষ্টিহীন মহিলা টিমের জয়ের আগে। তার কারণ একটাই— একে মহিলা, তায় দৃষ্টিহীন, তার উপর আবার ক্রিকেট।

অনিন্দ্য জানা

অনিন্দ্য জানা

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:৫৮
An opinion piece about the t20 World Cup win of the blind Indian women team

দৃষ্টিহীন মহিলা ক্রিকেটারদের বিশ্বজয়ী দল। ছবি: সংগৃহীত।

শীতের বিকেলগুলো যখন গড়িয়ে যেত সন্ধেবেলার দিকে, যখন বারান্দার হলদেটে বাল্‌বগুলো জ্বলে ওঠার সময়ও ততটা কাছিয়ে আসত না, ঠিক সেই সময়ে একটা ঝুঁঝকো আঁধার দলা পাকিয়ে ঝুলে থাকত ছোট ছোট ঘরের সিলিং থেকে। তেমনই এক প্রায়ান্ধকার ঘরের চৌকিতে বসে ব্রেল বইয়ের পাতার উপর মনোযোগী হাত বুলিয়ে বুলিয়ে পরীক্ষার পড়া তৈরি করত এক কিশোর।

সুখময় হেমব্রম। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন ব্লাইন্ড বয়েজ় অ্যাকাডেমির সেই বছরের ‘টপার’। যে আমাদের মতো চক্ষুষ্মান ছাত্রদের সঙ্গে ক্লাস নাইন এবং ক্লাস টেনে পড়াশোনা করে আমাদের সঙ্গে মাধ্যমিক দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে এসেছিল। প্রতি বছরই ব্লাইন্ড বয়েজ় অ্যাকাডেমির সবচেয়ে কৃতী দৃষ্টিহীন ছাত্রটিকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পাঠানো হত সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে। আমাদের সঙ্গেই ক্লাস করত সেই ছাত্র। আমাদের সঙ্গেই মাসিক, ষান্মাসিক এবং বাৎসরিক পরীক্ষা দিত। শুধু সঙ্গে একজন ‘রাইটার’ থাকত। যেমন থাকত মাধ্যমিকের সময়েও। সুখময় ছিল তেমনই এক দৃষ্টিহীন ছাত্র।

সুখময় জন্মান্ধ ছিল না। কিন্তু ছোটবেলায় কোনও এক কঠিন অসুখে তার দু’টি চোখেরই প্রদীপ সম্পূর্ণ নির্বাপিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই দৃষ্টিহীনতা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। অসম্ভব তীক্ষ্ণ ছিল তার ইন্দ্রিয়গত অনুভূতি। সেই অনুভূতি জাগতিক শব্দ এবং গন্ধসঞ্জাত। সুখময় আমাদের গোটা ক্লাসের সকলের উপস্থিতি নির্ভুল বলে দিতে পারত। ঘরে ঢোকামাত্র বলত, ‘‘কে? অনিন্দ্য এলি?’’ অবাক লাগত! প্রশ্ন করতাম, কী করে বুঝলি? সুখময় হাসত। সুখের হাসি। তৃপ্তির হাসি। হাত বাড়িয়ে আমার নাক ছুঁত, ছুঁয়ে দিত কপাল-গাল-গলা-চিবুক। কখনও-সখনও সুখময়ের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য পা টিপে টিপে, চোরের মতো ওর কাছাকাছি যেতাম। কথাও বলতাম না। গলা শুনে চিনে যায় যদি! কী আশ্চর্য, সুখময় প্রতিবার একইরকম ভাবে জিজ্ঞাসা করত, ‘‘অনিন্দ্য এলি?’’

ভোম্বল হয়ে বলতাম, চটির আওয়াজ করিনি তো! কী করে বুঝলি? সুখময় সেই তৃপ্তির হাসিটা ওর অন্ধ দু’চোখে মেখে বলত, ‘‘গন্ধ পেলাম যে।’’

মাধ্যমিক পরীক্ষার পর গোটা ক্লাস কে কোথায় ছিটকে পড়ল। প্রায় কারও সঙ্গেই আর যোগাযোগ রইল না। এখনও নেই। দ্বিবার্ষিক পুনর্মিলন উৎসবে গেলে অনেকের সঙ্গে দেখা-টেখা হয়। কিন্তু ওই একদিনের জন্যই। সেই সামান্য ভদ্রতামাখা কুশল বিনিময় এবং অতীতচারণের সুতো ইস্কুলের মাঠে-ভবনে সেদিনই ফেলে আসি। গত চল্লিশ বছরে সুখময়ের সঙ্গে কখনও যোগাযোগ হয়নি। এটা জেনেছিলাম যে, ‘রাইটার’ নিয়ে মাধ্যমিক দিয়ে আমাদের সঙ্গেই পাশ করেছিল সুখময়। প্রথম ডিভিশনে। ওইপর্যন্তই।

সুখময়কে ভুলেই গিয়েছিলাম। ঝপ করে মনে পড়ে গেল রবিবার বিকেলে। যখন কলম্বোর পি সারা ওভালে দৃষ্টিহীন মহিলাদের উদ্বোধনী টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতলেন ভারতের মেয়েরা। জাতীয় পতাকা নিয়ে যখন তাঁরা হাতে হাত ধরে দৌড়ে আসছিলেন মাঠের মধ্যিখানে, তখন তাঁদের দেখে কে বলবে, তাঁরা দৃষ্টিহীন। কেউ আংশিক। কেউ সম্পূর্ণ। অনুভূতিটুকুই তাঁদের সম্বল! তাঁদের উচ্ছ্বাস ধরা ছিল শুধু পরস্পরকে ছোঁয়ায় আর শব্দে। যখন বাতাসে বাড়ানো একটি হাত খুঁজছিল আর একটি হাত, দশটি আঙুল খুঁজে নিচ্ছিল আরও দশটি চেনা আঙুল, নীল জার্সির কন্যারা জড়িয়ে ধরছিলেন একে অপরকে। সেই শব্দ, সেই গন্ধ, সেই ছোঁয়ায় তাঁরা অন্ধকার পৃথিবীতেও একে অপরকে খুঁজে নিচ্ছিলেন নির্ভুল। কেউ টানটান হয়ে শুয়ে পড়ছিলেন পিচের উপর। কারও দৃষ্টিহীন চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছিল বাঁধভাঙা আনন্দাশ্রু।

দৃষ্টিহীনদের ক্রিকেট সম্পর্কে আমরা কেউই খুব একটা অবহিত নই। থাকার কথাও নয়। চোখে না দেখে ক্রিকেট কেন, কোনও খেলাই কি সম্ভব? সম্ভব। তবে তার জন্য প্রয়োজন বাঘা ইচ্ছাশক্তি। প্রয়োজন নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার উদগ্র আকাঙ্ক্ষা। দৃষ্টিহীনদের ক্রিকেট সাধারণ ক্রিকেটের পদ্ধতিতে খেলা হয় না। কারণ, দৃষ্টিহীন ক্রিকেটারেরা ‘দেখে’ খেলেন না। ‘শুনে’ খেলেন। শক্ত প্লাস্টিকের বলের ভিতরে ধাতুর গুলি (বল বিয়ারিং) থাকে। আন্ডারআর্ম বল করেন বোলারেরা। সেই বল যখন গড়িয়ে আসে, তখন তার ভিতরের বল বিয়ারিং পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা খেতে খেতে ঝুমঝুমির মতো তীক্ষ্ণ আওয়াজ করে। সেই আওয়াজ লক্ষ্য করে দৃষ্টিহীন ব্যাটারেরা ব্যাট চালান। রান নেন (পুরোপুরি দৃষ্টিহীনদের জন্য অবশ্য ‘রানার’-এর অনুমোদন রয়েছে প্লেয়িং কন্ডিশনেপাছে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটে )। সেই আওয়াজ শুনেই ফিল্ডারেরা বলের দিকে দৌড়োন, ফিল্ডিং করেন, ক্যাচ ধরেন। সেই আওয়াজ শুনেই মাঠে পরস্পরকে সচকিত করেন। ওই আওয়াজটাই তাঁদের যোগাযোগের সুতো। বা সেতু। ওই আওয়াজের ছন্দে তাঁরা ক্রিকেট খেলেন। নিজেদের শিরা-ধমনীতে ওই আওয়াজটা মিশিয়ে দিয়ে। ওই ‘শোনা’টাই তাঁদের ‘দেখা’।

এখন তাঁদের নিয়ে দেশ জুড়ে উচ্ছ্বাসের ঢল নেমেছে। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহেরা অভিনন্দনবার্তা পাঠাচ্ছেন। সংবর্ধনা হচ্ছে অকাতরে। কিন্তু হরমনপ্রীত কৌর-স্মৃতি মন্ধানাদের বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে যে বিপুল কাড়ানাকাড়া বেজেছিল, তার সিকিভাগও জোটেনি দৃষ্টিহীন মহিলা দলের রবিবেলার জয়ের আগে। কারণ একটাই— একে মহিলা, তায় দৃষ্টিহীন, তার উপর আবার ক্রিকেট! কে খোঁজ রাখতে যাচ্ছে যে, এই টুর্নামেন্টে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একটিও ম্যাচ হারেননি ভারতকন্যারা। আমিও কি রেখেছিলাম ছাই! তাঁদের যে যাত্রা নয়াদিল্লি থেকে শুরু হয়ে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় শেষ হল, তার ধারাবাহিক কোনও খবর কোনাখামচিতেও জায়গা পায়নি।

এটা সত্যি যে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে অথবা মাঝপথে শুভমন গিল, অজিঙ্ক রাহানে, জেমাইমা রদ্রিগেজ়ের মতো মূলস্রোতের ক্রিকেটতারকারা এইআপাত-অভাগী মেয়েদের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। বিশেষত জেমাইমা। কিন্তু তার চেয়েও বড় সত্যি হল, এই মেয়েরা বহির্জগৎ থেকে ভেসে আসা তরঙ্গের উপর নির্ভর করেননি। তাঁরা তাঁদের সমস্ত শক্তি উৎক্ষেপণ করেছেন তাঁদের অন্তর থেকে। বিশ্বকাপ ফাইনালে প্রতিপক্ষ নেপালকে হারানোর অনেক আগে এই কন্যারা হারিয়ে দিয়েছিলেন তাঁদের পরিপার্শ্বকে, ভুবনজোড়া প্রতিকূলতাকে, চতুর্পাশ্বের অবজ্ঞাকে এবং এই বাঁধাগতের ভাবনাকে যে, ক্রিকেট শুধু তাদের জন্য, যারা চক্ষুষ্মান।

এ শুধু ক্রিকেট টুর্নামেন্টে বিশ্বজয়ী হওয়া নয়। এ আসলে চিরকালীন আন্ডারডগের সমস্ত প্রতিবন্ধকতা উড়িয়ে-পুড়িয়ে জিতে ফেরার কাহিনি। এবং এক অবিশ্বাস্য কাহিনি! নইলে কি আর বিশ্বজয়ের পরে অধিনায়ক দীপিকা ট্রফি হাতে নিয়ে বলেন, ‘‘গ্রামে সকলে বলত, তুই তো অন্ধ! তুই আর জীবনে কী করবি? আজ আমরা দেখিয়ে দিয়েছি, আমরা কী করতে পারি!’’ কর্নাটকের এক অজগাঁয়ের মেয়ে দীপিকা খুব ছোট্টবেলায় দুর্ঘটনায় দৃষ্টিশক্তি আংশিক হারিয়েছিলেন। তার পর থেকে তাঁর দিন কেটেছে মাঠে চাষবাসে পরিবারের সদস্যদের সাহায্য করে। কখনও ভাবেননি, ক্রিকেট তাঁকে এক নতুন পরিচয় দেবে। দেবে এক অনুচ্চকিত আত্মবিশ্বাস। এখন দীপিকা ভারতের দৃষ্টিহীন মহিলা দলের অধিনায়ক। চাকরি করেন আয়কর দফতরে। তাঁর উপার্জনে তাঁর পরিবার খানিক সচ্ছলতার মুখ দেখেছে।

An opinion piece about the t20 World Cup win of the blind Indian women team

বিশ্বজয়ের পরে দেশে ফিরে সংবর্ধনা সভায় অধিনায়ক দীপিকা। ছবি: সংগৃহীত।

রবিবার বিকেলে যে ১৬ জন আংশিক বা পুরোপুরি দৃষ্টিহীন মহিলা ক্রিকেটার জাতীয় পতাকা মাথার উপর তুলে ধরে গোল্লাছুট লাগিয়েছিলেন মাঠের ভিতরে, তাঁদের প্রত্যেকের কাহিনি অধিনায়ক দীপিকার মতোই। তাঁরা কেউ জীবনে ক্রিকেট খেলার কথা ভাবেননি। বিশ্বকাপ জেতা-টেতা তো অনেক দূরের গ্রহ! তাঁরা এসেছেন আমাদের এই দেশের ন’টি রাজ্য থেকে। তাঁদের প্রত্যেকের ভাষা, ভাব, ভঙ্গি এবং জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই এক-একরকম। তাঁরা প্রত্যেকে নিজেরাই এক-একটি কাহিনি। কারও কাহিনি শুরু কৃষক পরিবারে, কারও প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্রের ঘুপচি ঘরে, কারও দৃষ্টিহীনদের জন্য আবাসিক বিদ্যালয়ে। যেখানে তাঁরা প্রান্তিকতারও শেষপ্রান্তে। যেখানে কোনও আশা নেই, কোনও প্রত্যাশা নেই, কোনও সুযোগ নেই।

কিন্তু সেই আলাদা আলাদা কাহিনি মিলিয়ে তাঁরা তৈরি করেছেন এক মহাকাব্য। এক ঐতিহাসিক জয়ের কোলাজ।

দীপিকার টিমের সহ-অধিনায়ক গঙ্গা কদম মহারাষ্ট্রের গণ্ডগ্রামের বাসিন্দা। পরিবারের ন’টি ভাইবোনের একজন। ভবিষ্যতের চিন্তায় গঙ্গার বাবা তাঁকে দৃষ্টিহীনদের স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন। সেখানে অবসর সময়ে ক্রিকেট খেলতেন। সেই ক্রিকেট খেলতে খেলতেই এক শিক্ষকের নজরে পড়ে তাঁর শ্রবণশক্তির তীক্ষ্ণতা, সহজাত প্রবৃত্তিতে তাঁর দূরত্ব মেপে নেওয়ার ক্ষমতা। সেই শিক্ষকই গঙ্গাকে বলেছিলেন সিরিয়াস ক্রিকেট খেলতে। সেই যাত্রা শিখরে পৌঁছোল রবিবার কলম্বোয়। দীপিকা-গঙ্গার সহ-ক্রিকেটার কাব্য। সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন (পরিভাষায় ‘বি ওয়ান’ খেলোয়াড়) এই কন্যার ক্রিকেটীয় ট্যালেন্ট ছিল। সাহস ছিল। কিন্তু তাঁর পরিবার তাঁকে বিদেশে যেতে দিতে রাজি ছিল না! কাব্য নিজেও খুব বেশি আশা করেননি। ভেবেছিলেন, ভাগ্যে যা আছে হবে। বহু বাধাবন্ধ পেরিয়ে এই অকুতোভয় মেয়ের কলম্বোয় আসা। রবিবার বিশ্বজয়ীর পদক গলায় ঝুলিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘এরপর হয়তো আমাদের মতো আরও অনেক মেয়ে ক্রিকেট খেলতে আসবে। তাদের বাবা-মায়েরা তাদের উৎসাহও দেবে।’’

কর্ণাটকের দীপিকা-কাব্যই হোন বা মহারাষ্ট্রের গঙ্গা, ওড়িশার বাসন্তী হাঁসদাই হোন বা অন্ধ্রপ্রদেশের করুণা কুমারী— ক্রিকেট এঁদের কাছে শুধু ক্রিকেট হয়ে থাকেনি। হয়ে উঠেছে জীবনের যুদ্ধ। শারীরিক এবং জাগতিক প্রতিকূলতাকে ছাপিয়ে যাওয়ার অভিযাত্রা।

চমৎকার লিখেছেন ‘ফার্স্ট পোস্ট’-এর প্রতিবেদক সন্দীপন বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘এঁরা প্রত্যেকে খেলাটার চেয়েও অনেক বড় লড়াই নিজেদের কাঁধে বহন করেছেন। কিন্তু সেই ভারকে বোঝা হয়ে উঠতে দেননি। বরং শক্তিতে পরিণত করেছেন। এঁদের মধ্যে অনেকে এক মাস আগেও বিমানবন্দরের ধারেপাশে যাননি, অনেকে ভাবতে পারেননি ইন্ডিয়া জার্সি পরবেন, অনেকে ভাবতে পারেননি বিশ্বকাপ খেলতে বিদেশসফরে যাবেন। তবুও তাঁরা বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলতে গিয়েছেন এবং এমন আশ্চর্য এক স্বাধীন সত্তা নিয়ে খেলেছেন, যা তাঁদেরও বিস্মিত করেছে!’

দৃষ্টিহীন মেয়েদের দলের কোচ, কর্নাটকের প্রাক্তন ক্রিকেটার চন্দু যেমন বলেছেন, ‘‘এই সীমিত সামর্থ্য নিয়ে এতদূর আসা সত্যিই অলৌকিক। যদি সরকার এবং বিসিসিআই আরও একটু সাহায্য করে, তা হলে আরও এমন অনেক মেয়ে এই খেলাটা খেলতে আসবে। আর এই খেলাটা যে ওদের জীবন বদলে দিতে পারে, সেটা তো আমি নিজের চোখে দেখছি। ওদের প্রতিভা আছে। প্যাশন আছে। আবেগ আছে। এখন একটু সাহায্য প্রয়োজন।’’

পড়তে পড়তে চার দশক আগের দৃশ্য মনে পড়ছিল। শীতের বিকেল সন্ধেবেলার দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে। বারান্দার হলদেটে বাল্‌বগুলো জ্বলে ওঠার আগে অদ্ভুত অন্ধকার বাদুড়ের মতো ঝুলে রয়েছে ঘরের সিলিং থেকে। এক প্রায়ান্ধকার ঘরের চৌকিতে বসে ব্রেল বইয়ের পাতার উপর মমতার হাত বুলিয়ে বুলিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে এক দৃষ্টিহীন কিশোর।

ক্লাসমেট দুষ্টুমি করে তার পরীক্ষা নিচ্ছে। বলছে, কী করে বুঝলি? অন্ধ কিশোর তার দৃষ্টিহীন চোখে মায়াবী হাসি মাখিয়ে বলছে, ‘‘তোর গন্ধ পেলাম যে!’’

সে চোখে দৃষ্টি নেই। কিন্তু আলো আছে। যে আঁধারমানিকের আলোয় তার নিজস্ব স্বপ্ন পথ খুঁজে নেয়। আবাসিক ইস্কুলের এজমালি ঘরের চৌকিতে বসা অন্ধ কিশোরের সঙ্গে মিলেমিশে যান কলম্বোর মাঠে নীল জার্সি পরিহিতা আলোর পথযাত্রীরা।

blind cricket Women's T20 World Cup
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy