গুড়গাঁওয়ের নাম বদলে গুরুগ্রাম করেছে হরিয়ানার বিজেপি সরকার। অনুমোদনের জন্য সেই নাম পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রের কাছে। এই নামবদল নিয়েই এ বার ফ্যাসাদে পড়লেন নরেন্দ্র মোদীরা।
গুড়গাঁওয়ের নাম গুরুগ্রাম হওয়ার পিছনে মূলত সঙ্ঘ পরিবারের চাপই কাজ করেছে বলে বিজেপি সূত্রে খবর। সঙ্ঘের যুক্তি ছিল, কুরুক্ষেত্র হরিয়ানা রাজ্যের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ভরকেন্দ্র। তাই মহাভারতের গুরু দ্রোণাচার্যের নামে গুড়গাঁওয়ের নাম গুরুগ্রাম রাখা হোক। সঙ্ঘের নেতাদের আরও দাবি, অতীতে স্থানীয় বাসিন্দারা এই এলাকাকে গুরুগ্রামই বলতেন। ব্রিটিশ শাসকরা তাঁদের ভুল উচ্চারণের ফলে নাম বদলে দেন।
কিন্তু বিজেপি সরকারের এই সিদ্ধান্তে বেজায় অসন্তুষ্ট সিপিএম, কংগ্রেস আর অরবিন্দ কেজরীবালের আপ। প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশের দলিত সমাজের একাংশও।
কিন্তু কেন?
বিরোধীদের মতে, দ্রোণাচার্যকে নিয়েও পুরাণের কাহিনিতেই বিতর্ক রয়েছে। দ্রোণাচার্য একলব্যর আঙুল কেটে নিয়েছিলেন। তাঁকে ধনুর্বিদ্যায় শিক্ষা দেননি। কারণ একলব্য উচ্চবর্ণের প্রতিনিধি ছিলেন না। ফলে বিজেপির গায়ে ফের ‘দলিত-বিরোধী’ তকমা লাগাতে তৎপর বিরোধীরা। আসন্ন পঞ্জাব নির্বাচনে বিষয়টি রাজনৈতিক তাস হিসেবে ব্যবহার করতে চান কেজরীবাল। তবে বেশ কিছু সংস্কৃত পণ্ডিত মনে করছেন, গুরুগ্রাম নামকরণে দ্রোণাচার্যর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন থাকলেও অতীতের অস্পৃশ্যতার প্রতি সমর্থন নেই।
বিজেপির নেতাদেরও যুক্তি, নরেন্দ্র মোদী নিজে বার বার অম্বেডকরকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। লন্ডনে, নাগপুরে, দাদরিতে অম্বেডকরের নামে স্মৃতিসৌধ-সংগ্রহশালা তৈরি করা হচ্ছে। অম্বেডকরের নামে ডাকটিকিট ও মুদ্রা হবে। এমনকী অম্বেডকরকে মরণোত্তর ভারতরত্ন দেওয়ার প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে। এ সময়ে গুরুগ্রাম শব্দটি নিয়ে রাজনীতি করা অনুচিত।
তবে বামপন্থী ইতিহাসবিদরা জানাচ্ছেন পুরাণের কাহিনিতে নানা ধরনের স্ববিরোধিতা রয়েছে। তাই রামায়ণ-মহাভারতের কাহিনির ভিত্তিতে নামকরণ করা মানেই ইতিহাস মেনে চলা নয়।
দ্বিতীয়ত নামকরণ ধীরেসুস্থে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে করা ভাল বলে মনে করেন অনেকে। তা না হলে অন্য রাজ্যগুলিতেও নাম পরিবর্তনের দাবি উঠবে। যেমন হিমাচল প্রদেশের রাজ্য বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা আমন পুরি শিমলার নাম বদলে শ্যামলা করার দাবি জানিয়েছেন। হিমাচলের প্রাচীন কালীপ্রতিমার নাম শ্যামলা। সুভাষচন্দ্র বসুর নামে হিমাচলের ডালহৌসি এলাকার নাম রাখার দাবি রয়েছে। আবার শিমলার ঐতিহাসিক পিটারহফ বহুতলের নাম বাল্মীকি ভবন রাখতে চান অনেকে। কাংড়া জেলার নুরপুরের নামও বদলানোর দাবি উঠেছে। কারণ নুরজাহানের নামে নুরপুরের নামকরণ হয় বলে মনে করা হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নুরজাহানের কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই।
এখানেই শেষ নয়। রাজস্থান-পঞ্জাব সীমানায় হরিয়ানার মেওয়াত জেলার নাম নুহ্ হয়েছে। এই মুসলমান প্রধান এলাকায় বিজেপি বিরোধী মনোভাব চরমে। মুসলিম নুহ্ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অত্যাচারের ঐতিহাসিক প্রমাণ আছে। আপের মুখপাত্র আর এস রাথির দাবি, ‘‘উন্নয়ন না করে নতুন নামকরণ করে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে বিজেপি। বিতর্ক সৃষ্টি করে উন্নয়নের বিষয়টিকে আড়াল করা হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদী কী করবেন? বিজেপি নেতারা জানাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী সঙ্ঘের সুরেই সুরমেলাতে প্রস্তুত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy