জমি বিল নিয়ে পিছিয়ে আসতে হচ্ছে। এর পর পণ্য-পরিষেবা কর চালু করতে না পারলে অর্থনীতির সুদিন ফিরিয়ে ‘আচ্ছে দিন’-এর প্রতিশ্রুতি যে ফাঁকা বুলিই থেকে যাবে, তা এ বার বুঝতে পারছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
এই পরিস্থিতিতে বুধবার অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এক দিকে পণ্য-পরিষেবা কর বা জিএসটি পাশ করানোর জন্য কংগ্রেসের সাহায্য চেয়েছেন। রাহুল গাঁধীর ‘স্যুট-বুট কি সরকার’-এর অভিযোগ খণ্ডন করতে একশো দিনের কাজ-খাদ্য সুরক্ষায় বাড়তি অর্থ বরাদ্দ করেছে মোদী সরকার। অর্থনীতিতে গতি আনতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের জন্য নতুন পুঁজির সংস্থান করা হয়েছে। পাশাপাশি, কংগ্রেসের বিরোধিতার মধ্যে রাজ্যসভাকে অপ্রাসঙ্গিক করে লোকসভায় যত বেশি সম্ভব বিল পাশ করিয়ে নেওয়া যায় কি না, সেই ভাবনাও শুরু হয়েছে।
আর্থিক বৃদ্ধির হারকে ৮ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার যে সব শর্তপূরণ আবশ্যিক বলে মনে করছেন জেটলি, তার মধ্যে পণ্য-পরিষেবা কর বা জিএসটি অন্যতম। কিন্তু, কংগ্রেস যে চরম অবস্থান নিয়ে ফেলেছে, তাতে চলতি বাদল অধিবেশনে জিএসটি বিল পাশ করানোর সম্ভাবনা প্রায় নেই। সে ক্ষেত্রে আগামী বছরের ১ এপ্রিল থেকে জিএসটি চালু করাও অসম্ভব হয়ে পড়বে। এ দিন প্রায় বিরোধী-শূন্য লোকসভায় অর্থমন্ত্রী জেটলির মুখে সেই হতাশাই ফুটে উঠেছে। কংগ্রেসের ফাঁকা আসনের দিকে তাকিয়ে জেটলি বলেন, ‘‘যদি আমার লোকসভায় অনুপস্থিত বন্ধুরা জিএসটি পাশ করাতে দেন, তা হলে অর্থনীতির বৃদ্ধির হার ১ থেকে ২ শতাংশ বাড়বে। বৃদ্ধির হার ৮ শতাংশ ছোঁবে।’’
কিন্তু, বন্ধুরা বুঝলে তো! ২৫ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করার প্রতিবাদে এ দিনও কংগ্রেস এবং অন্য বিরোধী দলগুলি লোকসভা বয়কট করেছে। অচল ছিল রাজ্যসভাও। অন্ধকারে পথ খুঁজতে মরিয়া মোদী সরকার এখন অন্যান্য বিলের মধ্যে যতগুলি সম্ভব রাজ্যসভাকে অপ্রাসঙ্গিক করে লোকসভায় পাশ করিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছে। মন্ত্রিসভার এক সদস্য বলেন, ‘‘একটি পথ হল যত বেশি সম্ভব বিলকে ‘অর্থ বিল’ হিসেবে লোকসভায় আনা। অর্থ বিল যদি রাজ্যসভায় না-ও পাশ হয়, তা হলেও সেটিকে সংসদে পাশ বলে ধরে নেওয়া হয়। বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও সংসদের গত অধিবেশনে সরকার কালো টাকা উদ্ধারের বিলটিকে অর্থ বিল করে শুধুমাত্র লোকসভাতেই নিয়ে এসেছিল।’’ কোন কোন বিল ‘অর্থ বিল’ হিসেবে নিয়ে আসা যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সমস্যা হল, জিএসটি-র মতো সংবিধান সংশোধনী বিল কংগ্রেসের সমর্থন এবং সভায় ‘শান্তি’ থাকলেই দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাশ করানো সম্ভব। জেটলির বত্তব্য, জিএসটি চালু, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে নতুন পুঁজি, আটকে থাকা প্রকল্প চালু করা এবং পরিকাঠামোয় খরচ বাড়লেই বৃদ্ধির হার ৮ শতাংশ ছোঁবে। এ দিন লোকসভায় বাজেট অতিরিক্ত ৪০,৮২২ কোটি টাকা বরাদ্দ মঞ্জুর করিয়েছেন জেটলি। যার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির পুঁজির জন্য প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হবে। জেটলি বলেন, সব মিলিয়ে ১ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা নতুন পুঁজি হিসেবে বরাদ্দ হবে। চলতি বছর ও আগামী বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকা করে বরাদ্দ হবে। তার পরের দু’বছরের ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হবে। এ ছাড়া, বাজার থেকে ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকা তোলা হবে। জাতীয় সড়ক-সহ পরিকাঠামোয় অতিরিক্ত বরাদ্দ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে আটকে থাকা প্রকল্পগুলির পর্যালোচনা করছেন। অর্থাৎ, জিএসটি ছাড়া বাকি সব শর্তই সরকার পূরণ করছে বলে তাঁর যুক্তি।
কোন পথে মোদী সরকার?
• জিএসটি ঘিরে হতাশা
• একশো দিনের কাজ-খাদ্য সুরক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধি
• তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকে বাড়তি বরাদ্দ
• রাজ্যসভাকে অপ্রাসঙ্গিক করে লোকসভায় বিল পাশের ভাবনা
জেটলি যা-ই বলুন, রাজনৈতিক চাপের মুখে মোদী-জেটলির অর্থনীতির অভিমুখ বদলে যাচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অর্থনীতিবিদেরা। তাঁদের বিশ্লেষণ, মোদী সরকারও এখন ইউপিএ-সরকারের মতো সামাজিক উন্নয়নে জোর দিচ্ছে। এ দিন যে বাজেট অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ হয়েছে, তার প্রায় ২৮ শতাংশ অর্থ খরচ হবে একশো দিনের কাজ ও খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পে। রাহুল গাঁধী মোদী সরকারকে ‘স্যুট-বুট কি সরকার’ বলে আখ্যা দিয়ে প্রচারে নেমেছেন। জমি বিলের ক্ষেত্রেও শিল্পপতিদের দাবি মেনে কৃষকদের বঞ্চিত করার অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস। সামাজিক প্রকল্পে বরাদ্দ কাটছাঁট করা নিয়েও লাগাতার প্রচার করছে কংগ্রেস। বিহার নির্বাচনের আগে এ দিন কার্যত সেই অভিযোগের জবাব দিতেই জেটলি একশো দিনের কাজে অতিরিক্ত ৭ হাজার কোটি বরাদ্দ করেছেন। খাদ্য সুরক্ষায় ৪,৪৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ বেড়েছে। আইসিডিএস-এ বেড়েছে ৩,৬০০ কোটি টাকা। ফলে মোদী সরকারের অর্থনীতির অভিমুখই পাল্টে যাচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলছেন সমালোচকরা।
কংগ্রেসের নেতারা অভিযোগ করছেন, মোদী সরকার কাজের থেকে প্রচার ও বিপণনেই ব্যস্ত। এ দিন জেটলি তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের জন্য বাজেটের বাইরে ১১,১১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। লোকসভায় বিজু জনতা দলের ভর্ত্রুহরি মেহতাব সে দিকে ইঙ্গিত করেই প্রশ্ন তুলেছেন, এত অতিরিক্ত অর্থ কেন বরাদ্দ করা হচ্ছে? জেটলি নিজে তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের দায়িত্বে। অস্বস্তিতে পড়ে জেটলি জবাব দেন, প্রসার ভারতী এবং মন্ত্রকের পুরনো কিছু পাওনা মেটাতে এই অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে। কংগ্রেসের নেতারা কিন্তু বলছেন, আসলে বিহার ভোটের আগে মোদী সরকারের ঢাক পেটাতেই এই অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy