Advertisement
E-Paper

পুরনো পথে ফিরুক রেল, চাইছেন মোদী

শূন্য রেল লাইনের উপর দিয়ে ক্যামেরার গতি ক্রমে বাড়ছে। সেই সঙ্গে চড়ছে ‘দোহাই আলি’-র সঙ্গত! গতি বেড়ে ক্যামেরা ক্রমশ আছড়ে পড়ল কাঠের গুঁড়ির উপর। সীমান্তে আটকে গেল রেললাইন। পর্দা জুড়ে অন্ধকার। ও-পারে বাংলাদেশ (তখনও পূর্ব পাকিস্তান)!

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৫ ০৩:৩১
কোমলগান্ধার ছবির সেই দৃশ্য।

কোমলগান্ধার ছবির সেই দৃশ্য।

শূন্য রেল লাইনের উপর দিয়ে ক্যামেরার গতি ক্রমে বাড়ছে। সেই সঙ্গে চড়ছে ‘দোহাই আলি’-র সঙ্গত! গতি বেড়ে ক্যামেরা ক্রমশ আছড়ে পড়ল কাঠের গুঁড়ির উপর। সীমান্তে আটকে গেল রেললাইন। পর্দা জুড়ে অন্ধকার। ও-পারে বাংলাদেশ (তখনও পূর্ব পাকিস্তান)!

ঋত্বিক ঘটকের ‘কোমলগান্ধার’ ছবির সেই বিখ্যাত দৃশ্য। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাক যুদ্ধের সময় সীমান্তের কাঠের গুঁড়িতে আটকে যাওয়া সেই সব শূন্য লাইনগুলিতে রেল চলার স্বপ্ন এ বার অন্যতম থিম হয়ে উঠতে চলেছে মোদীর আসন্ন ঢাকা সফরে। শুধু সমঝোতাপত্র সই করাই নয়, হাতে কলমে দ্রুত কী ভাবে কাজ শুরু করে দেওয়া যায়— সে ব্যাপারে রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুকে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন মোদী। কিছু দিন আগে দিল্লির একটি অনুষ্ঠানে প্রভু নিজেই জানিয়েছিলেন, রেলমন্ত্রী হিসাবে এ ব্যাপারে যা করার তিনি করবেন। হাই-কমিশন সূত্রের খবর, মোদী-হাসিনা বৈঠকের পর খুব শীঘ্রই বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক নয়াদিল্লি সফরে আসছেন। মোদীর সফরের প্রাক্কালে ঢাকার তরফে জানানো হয়েছে, খুলনা-যশোর-বেনাপোল-কলকাতা রুটে দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু করার জন্য আলোচনা হবে দু’দেশের মধ্যে।

বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, এ ব্যাপারে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে যৌথ আর্থিক কমিশনের একাধিক বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। দু’দেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে রেল যোগাযোগের সম্ভাবনা নিয়েও সবিস্তার আলোচনা হয়েছে। ইতিহাস বলছে, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর হঠাৎই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে রেল যোগাযোগ। সেই রেলপথগুলিতে আগাছা জন্মেছে দশকের পর দশক, চাকা গড়ায়নি। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর আবার বিষয়টি আলোচনায় আসে। কিন্তু কাজ এখনও বিশেষ এগোয়নি।

আগামী ৬ তারিখ ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে থাকবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। দু’দেশের মধ্যে পুরনো রেল যোগাযোগ ফিরিয়ে আনতে মমতাও সমান আগ্রহী। তাঁর নির্দেশে তৃণমূলের তৎকালীন রেলমন্ত্রী মুকুল রায় এ বিষয়ে সক্রিয় হয়েছিলেন। অসমের করিমগঞ্জ জেলার মহিশাসন স্টেশন থেকে বাংলাদেশ হয়ে কলকাতা পর্যন্ত একটি পরিত্যক্ত রেললাইন এখনও রয়েছে। এই রেলপথটি ফের চালুর বিষয়ে আলোচনা শুরু হয় সে সময়ই। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরে গিয়ে হাসিনার সঙ্গে এ ব্যাপারে বিশদে আলোচনা করেছিলেন। এই রেললাইন চালু হলে দক্ষিণ অসম, মণিপুর, ত্রিপুরা ও মিজোরামের সঙ্গে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগ যে উন্নত হবে, এটা নয়াদিল্লির বিবেচনায় রয়েছে। মোদী সরকার বিষয়টি এখন বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।

স্বাধীনতার আগে উত্তরবঙ্গ থেকে বর্তমান বাংলাদেশ হয়ে কলকাতা পর্যন্ত একটি জনপ্রিয় রেল যোগাযোগ ছিল। সেটিকেও আবার চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। কোচবিহার বা শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশের উত্তর ভাগের নীলফামারি, ইশ্বরদি হয়ে কলকাতা পর্যন্ত এই রেলপথে ফের চাকা গড়ানো যায় কি না— কূটনৈতিক সূত্রের খবর, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মোদীর আসন্ন ঢাকা সফরের মূলমন্ত্র— দু’দেশের মধ্যে সব ধরনের যোগাযোগ বাড়ানো। পুরনো রেল লাইনগুলিকে চালু করার বিষয়টি এত দিন গয়ংগচ্ছ ভাবে চলার পর এ বার এই প্রচেষ্টায় গতি আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি আগরতলা থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার রেল যোগাযোগের বিষয়টিও আলোচনা হবে আসন্ন শীর্ষ বৈঠকে। ভারতীয় বিনিয়োগে এই রেললাইন পাতার কাজ শুরু হয়েও বন্ধ হয়ে রয়েছে জমি অধিগ্রহণের সমস্যায়। সেটিকে দ্রুত শেষ করার কথা থাকছে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বিবৃতিতে। আরও একটি নতুন রেল যোগাযোগ তৈরি করার সম্ভাবনা নিয়ে গত মার্চ মাসে একদফা বৈঠক হয়ে গিয়েছে দু’দেশের মধ্যে। প্রস্তাবিত কলকতা-খুলনা সরাসরি রেল যোগাযোগের বিষয়ে এখনও ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ছাড়পত্র দেয়নি। মোদীর সফরে এ ব্যাপারেও অগ্রগতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

Narendra Modi Prime Minister India Rail Bangladesh Agni Ray
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy