একেই বোধহয় বলা যায় পচা শামুকে পা কাটা!
বিজেপি-র কেন্দ্রীয় দফতরের সামনে দাঁড়িয়ে দলের এক শীর্ষনেতার আজকের সর্বশেষ মন্তব্য: ‘‘সময় যখন খারাপ যায়, গালের ফুসকুরিও সেপটিক হয়ে যায়।’’ ওই নেতাটিকে হায়দরাবাদের দলিত নিপীড়ন নিয়ে সারা দিন ধরে চ্যানেলে চ্যানেলে দলকে রক্ষা করতে হচ্ছে। কিন্তু তাঁর ‘মনের কথা’টি জানিয়ে বিজেপি নেতাটি বললেন, ‘‘আপনাদের জানা উচিত, বিজেপি আসলে দলিত-বিরোধী রাজনীতি করে না!’’
উত্তর-পূর্বাঞ্চল সফর সেরে প্রধানমন্ত্রী দিল্লি ফিরে এসেই আজ বেশ কয়েক জন শীর্ষমন্ত্রীর কাছে এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যে ভাবে পুরো বিষয়টি হায়দরাবাদ ও দিল্লিতে দলের নেতারা সামলানোর চেষ্টা করেছেন, সেটি মোটেই প্রশংসনীয় নয়। বন্দারু দত্তাত্রেয় থেকে স্মৃতি ইরানি— পুরো বিষয়টি তিল থেকে তাল করা হয়েছে। বিজেপি-র মুখপাত্রেরা বলছেন, ‘‘আমরাও জানি না, ঠিক কী ভাবে বিষয়টির মোকাবিলা করব। সরকারের পক্ষ থেকে যদি দলের মুখপাত্রদের দুই মন্ত্রীর ভিতরকার চিঠিচাপাটির কথা দলকে সবিস্তার জানানো না হয়, পটভূমি ব্যাখ্যা না করা হয়, তা হলে আমরাই বা কী ভাবে বিরোধীদের উত্তাল অভিযোগের জবাব দেব?’’ সেই কারণে মূল বিষয়ে না গিয়ে বিজেপি-র মুখপাত্র নলিন কোহলি বলতে শুরু করেছেন, রাহুল গাঁধীর নির্বাচনী কেন্দ্রে স্মৃতি ইরানি বেশি যেতে শুরু করেছেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ হচ্ছে। এটি আসলে কোনও দলিত রাজনীতির বিষয়ই নয়।
প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল অবশ্য বলছে, দলিত ছাত্রের আত্মহত্যা একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। প্রথমেই হায়দরাবাদের স্তরে সব ভুলে এই ঘটনার তীব্র অনুতাপ ব্যক্ত করে বিজেপি-র স্থানীয় নেতাদের উচিত ছিল, সেই ছাত্রের পরিবার এবং বন্ধুদের পাশে দাঁড়ানো। এই ‘মানবিক’ রাজনীতির নমুনা বন্দারু দত্তাত্রেয়র মতো কেন্দ্রের প্রবীণ শ্রমমন্ত্রীও দেখাননি।
আরএসএস সূত্র বলছে, সঙ্ঘ পরিবারের মতাদর্শ আসলে অবিভক্ত হিন্দু সমাজের পুনরুত্থান। এই কারণে আরএসএস দলিত সমাজকে হিন্দু সমাজের অন্যতম অঙ্গ হিসেবে দেখে। এই সুসংহত হিন্দু পরিবারের রাজনীতির সব থেকে বড় প্রমাণ বঙ্গারু লক্ষণের মতো নেতাকে ২০০০ সালে বিজেপি-র সভাপতি পদে নিযুক্ত করা। গোবিন্দাচার্য থেকে শুরু করে বিনয় কাটিয়ার, উমা ভারতী পর্যন্ত বিভিন্ন নেতাকে সামনে এনে বিজেপি এই ‘ব্রাহ্মণ্যতন্ত্র’র অপবাদ ঘোচাতে চেয়েছে বহু বছর ধরে। যদিও মায়াবতীর মতো নেত্রী দলিত সমাজের কাছে পাল্টা বার্তা দেন: হে দলিত, তুমি আগে দলিত, তার পর হিন্দু। মনুবাদী উচ্চবর্ণের নেতারা তোমার দলিত সত্ত্বাকে ভুলিয়ে হিন্দু উচ্চবর্ণের আধিপত্যে তোমাকে ক্রীতদাস করে রাখতে চায়।
উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল, রাহুল গাঁধী থেকে শুরু করে মমতার দুই প্রতিনিধি, এমনকী, কেজরীবালও হায়দরাবাদে পৌঁছে গেলেও মায়াবতী কিন্তু সেখানে যাননি। উল্টে তিনি কলকাতায় গিয়ে রাজ্য সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন।
নরেন্দ্র মোদী উত্তর-পূর্বে গিয়ে উন্নয়নের স্লোগান গিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আর কিছু নয়, শুধু উন্নয়ন-উন্নয়ন-উন্নয়ন। তিন বার এই শব্দটি উচ্চারণ করে তিনি সেখানে জানিয়েছিলেন, তাঁর প্রধান আলোচ্যাসূচি এটাই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বললে কী হবে? মোদী বিরোধী মঞ্চ গঠনে অগ্রণী রাহুল গাঁধী। কেজরীবাল থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোদী-বিরোধী মঞ্চ করতে তৎপর। সীতারাম ইয়েচুরির হায়দরাবাদে যাওয়ার কথা। রাজনীতির আগুনে নির্বাচনের রুটি সেঁকতে মোদী-বিরোধী দলগুলি সক্রিয় হবে, এটা স্বাভাবিক। যদিও নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, আমাকে ফুল দিও না, কাঁটাতেই অভ্যস্ত। কিন্তু বিজেপি-র শীর্ষনেতারা স্বীকার করছেন, সরকার, দল এবং সঙ্ঘ পরিবারের মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং পরিস্থিতি সামলানোর অযোগ্যতা এখন মোদী সরকারকেও বেশ চাপের মুখে ফেলে দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy