এনডিএ সরকারের দু’বছর পূর্তিতে সহারনপুরের জনসভায় মোদী। বৃহস্পতিবার পিটিআইয়ের ছবি।
ওবামা ছেড়ে এ বার জেএফকে।
লোকসভা প্রচারের সময় বারাক ওবামার আদলে নরেন্দ্র মোদী বলতেন, ‘‘ইয়েস উই ক্যান ডু! উই উইল ডু ইট!’’ আর আজ সরকারের দু’বছর পূর্তি উপলক্ষে বলছেন, ‘‘সরকার তো মানুষের জন্য কাজ করবেই। কিন্তু মানুষকেও দেশের জন্য কাজ করতে হবে!’’
ঠিক যে ভাবে জন এফ কেনেডি বলতেন, ‘‘আপনার দেশ আপনার জন্য কী করতে পারে— এই প্রশ্ন করবেন না। বরং বলুন— আপনি দেশের জন্য কী করতে পারেন!’’
দু’বছরে নজরকাড়া বদল কি শুধু এ’টুকুই? না হলে উত্তরপ্রদেশের সহারনপুরে এসে দু’বছরের রিপোর্ট কার্ড পেশের সময় প্রধানমন্ত্রী কিন্তু এ বারেও ‘অচ্ছে দিন’-এর কোনও হদিশ বাতলাতে পারলেন না। আর সে কারণেই বোধ হয় সাফল্যের ফর্দ দেওয়ার সময় বিরোধীদের প্রতি তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ব্যঙ্গ-কটাক্ষ উহ্যই থেকে গেল। বরং বললেন, সরকারের কাজে তীক্ষ্ণ নজর থাকাটা ভাল।
অথচ যে ভোটমুখী রাজ্য উত্তরপ্রদেশকে মোদী নিজের দু’বছরের সাফল্য মেলে ধরার জন্য বেছে নিয়েছিলেন, সেখানে উৎসাহের কোনও ঘাটতি ছিল না। মানুষ মুখিয়ে ছিলেন মোদীর মুখ থেকে ঝাঁঝালো বক্তৃতা শুনতে। গেল বার সরকারের এক বছর পূর্ণ হওয়ার সময়ও যে ঝাঁঝ ছিল মোদীর অভিব্যক্তিতে, এ বার তা যেন নেই। মাত্র এক বার বলেই ক্ষান্ত হলেন— ‘‘দেশ বদলালেও কিছু লোকের মস্তিষ্ক বদলাচ্ছে না!’’
কিন্তু মোদী জানেন, দু’বছরের রিপোর্ট কার্ড পেশ করার থেকেও এখন সামনে বড় চ্যালেঞ্জ উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন। তাই নিজেকে ‘ইউপিওয়ালা’ বলেই শুরু করলেন বক্তৃতা। উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকেও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। তার পর একে একে গরিব, শোষিত, বঞ্চিত, কৃষক ও মহিলাদের জন্য এ যাবৎ ঘোষিত প্রকল্পের ফিরিস্তি। গত বারের মতো এ বারেও দুর্নীতিমুক্ত সরকার দেওয়ার কৃতিত্ব দাবি করলেন। বললেন, ‘‘দু-তিন বছর আগেও খবরের কাগজ খুললেই শুধু সরকারের একের পর এক দুর্নীতির খবর চোখে পড়ত। এখন আর তা থাকে না। এটাই পরিবর্তন!’’ এ সবের মধ্যে নতুন শুধু চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান—
প্রতি মাসের ৯ তারিখে গরিব অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা করুন। গোটা দেশে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের অবসরের বয়স ৬৫ করার পক্ষেও সওয়াল করলেন প্রধানমন্ত্রী কিন্তু দু’বছর পূর্তির মঞ্চ হিসেবে সহারনপুরকে কেন বেছে নেওয়া হল? এর পিছনে অনেকে অন্য গন্ধও পাচ্ছেন। বছর কয়েক আগেই গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়েছিল এই সহারনপুর। মোদী না বললেও রাজনাথ তাঁর বক্তৃতায় রামের প্রসঙ্গ তুলেছেন। মোদীর কপ্টার ধুলো উড়িয়ে মাটি ছোঁয়ার আগেও মঞ্চ থেকে বার বার উড়ে এসেছে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি। আবার এই মঞ্চ থেকেই ‘ভারত মাতা কি জয়’ ধ্বনি তুলেছেন মোদী।
বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ কালই দাবি করেছিলেন, উত্তরপ্রদেশে দলের জমি তৈরি আছে। সংগঠনকে শুধু ঝালিয়ে নিতে হবে। সরকারের দু’বছরকে সামনে রেখেই এ বারে উত্তরপ্রদেশের যাবতীয় রণনীতি তৈরি হচ্ছে। মোদী এ দিন এ রাজ্যের চিনিকলের মালিকদেরও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, কৃষকদের প্রতি কোনও অনাচার বরদাস্ত করা হবে না। আগামী ১৫ দিনে কেন্দ্রের প্রায় ৩০ জন মন্ত্রী রাজ্যের সর্বত্র চষে বেড়াবেন। আর আজ সেই যুদ্ধেরই সূচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy