Advertisement
E-Paper

চাপের মুখে স্বপ্নভঙ্গ, পথ খুঁজছেন মোদী

জমি বিল নিয়ে পিছিয়ে আসতে হচ্ছে। এর পর পণ্য-পরিষেবা কর চালু করতে না পারলে ‘অচ্ছে দিন’-এর প্রতিশ্রুতি যে ফাঁকা বুলিই থেকে যাবে, তা এখন বেশ টের পাচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এই পরিস্থিতিতে আজ অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি পণ্য-পরিষেবা কর বা জিএসটি বিল পাশ করাতে কংগ্রেসের সাহায্য চেয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৫ ০৩:১৮

জমি বিল নিয়ে পিছিয়ে আসতে হচ্ছে। এর পর পণ্য-পরিষেবা কর চালু করতে না পারলে ‘অচ্ছে দিন’-এর প্রতিশ্রুতি যে ফাঁকা বুলিই থেকে যাবে, তা এখন বেশ টের পাচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।

এই পরিস্থিতিতে আজ অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি পণ্য-পরিষেবা কর বা জিএসটি বিল পাশ করাতে কংগ্রেসের সাহায্য চেয়েছেন। রাহুল গাঁধীর ‘স্যুট-বুট কি সরকার’-এর অভিযোগ খণ্ডন করতে একশো দিনের কাজ, খাদ্য সুরক্ষায় বাড়তি অর্থ বরাদ্দ করেছে মোদী সরকার। অর্থনীতিতে গতি আনতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের জন্য নতুন পুঁজির সংস্থান করা হয়েছে। পাশাপাশি, কংগ্রেসের বিরোধিতার মধ্যে রাজ্যসভাকে কার্যত অপ্রাসঙ্গিক করে, লোকসভায় যত বেশি সম্ভব বিল পাশ করিয়ে নেওয়া যায় কি না, সেই ভাবনাও শুরু হয়েছে।

আর্থিক বৃদ্ধির হারকে ৮ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার যে সব শর্তপূরণ আবশ্যিক বলে মনে করছেন জেটলি, তার মধ্যে পণ্য-পরিষেবা কর বা জিএসটি অন্যতম। কিন্তু কংগ্রেস যে চরম অবস্থান নিয়ে ফেলেছে, তাতে চলতি বাদল অধিবেশনে জিএসটি বিল পাশ করানোর সম্ভাবনা প্রায় নেই। সে ক্ষেত্রে আগামী ১ এপ্রিল থেকে জিএসটি চালু করাও অসম্ভব। প্রায় বিরোধী-শূন্য লোকসভায় অর্থমন্ত্রী জেটলির মুখে আজ ছিল সেই হতাশা। কংগ্রেসের ফাঁকা আসনের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, ‘‘যদি লোকসভায় অনুপস্থিত বন্ধুরা জিএসটি পাশ করাতে দেন, তা হলে অর্থনীতির বৃদ্ধির হার ১ থেকে ২ শতাংশ বাড়বে। বৃদ্ধির হার ৮ শতাংশ ছোঁবে।’’

কিন্তু ‘বন্ধু’-রা বুঝলে তো! ২৫ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করার প্রতিবাদে আজও কংগ্রেস ও অন্য বিরোধী দলগুলি লোকসভা বয়কট করেছে। অচল ছিল রাজ্যসভাও। অন্ধকারে পথ খুঁজতে মরিয়া মোদী সরকার এখন যতগুলি সম্ভব বিল লোকসভায় পাশ করিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছে। মন্ত্রিসভার এক সদস্য বলেন, ‘‘একটি পথ হল, যত বেশি সম্ভব বিলকে ‘অর্থ বিল’ হিসেবে লোকসভায় আনা। অর্থ বিল যদি রাজ্যসভায় না-ও পাশ হয়, তা হলেও সেটিকে সংসদে পাশ বলে ধরে নেওয়া হয়।’’ কোন কোন বিল এ ভাবে পাশ করানো যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কিন্তু সমস্যা হল, জিএসটি-র মতো সংবিধান সংশোধনী বিল লোকসভা ও রাজ্যসভায় ‘শান্তি’ থাকলেই দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাশ করাতে হবে। সে জন্য কংগ্রেস ও অন্য বিরোধীদের সমর্থন জরুরি। আজ লোকসভায় বাজেট অতিরিক্ত ৪০,৮২২ কোটি টাকা বরাদ্দ মঞ্জুর করিয়েছেন জেটলি। যার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির পুঁজির জন্য প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হবে। জাতীয় সড়ক-সহ পরিকাঠামোয় অতিরিক্ত অর্থ রাখা থাকছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে আটকে থাকা প্রকল্পগুলির পর্যালোচনা করছেন। অর্থাৎ জিএসটি ছাড়া বাকি সব শর্তই সরকার পূরণ করছে
বলে যুক্তি জেটলির।

তবে জেটলি যা-ই বলুন, রাজনৈতিক চাপের মুখে মোদী সরকারের অর্থনীতির অভিমুখ বদলে যাচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অর্থনীতিবিদরা। তাঁদের বিশ্লেষণ, এনডিএ সরকার এখন ইউপিএ-র মতোই সামাজিক উন্নয়নে জোর দিচ্ছে। আজ যে বাজেট অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ হয়েছে, তার প্রায় ২৮ শতাংশ খরচ হবে একশো দিনের কাজ ও খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পে। রাহুল গাঁধী মোদী সরকারকে ‘স্যুট-বুট কি সরকার’ বলেছেন। জমি বিলের ক্ষেত্রেও শিল্পপতিদের দাবি মেনে কৃষকদের বঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক প্রকল্পে বরাদ্দ কাটছাঁট করা নিয়েও লাগাতার প্রচার চলছে। শেষপর্যন্ত জমি বিল থেকে পিছিয়ে আসতে হয়েছে। আর বিহার ভোটের আগে বিরোধীদের অভিযোগের জবাব দিতেই জেটলি আজ একশো দিনের কাজে অতিরিক্ত ৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। খাদ্য সুরক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে ৪,৪৯৫ কোটি টাকা। আইসিডিএস-এ বেড়েছে ৩,৬০০ কোটি টাকা। ফলে মোদী সরকারের অর্থনীতির অভিমুখই পাল্টে যাচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।

বিরোধীদের অভিযোগ, মোদী সরকার কাজের থেকে প্রচার ও বিপণন নিয়েই বেশি ব্যস্ত। আজ জেটলি তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের জন্যও বাজেটের বাইরে ১১,১১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। লোকসভায় বিজু জনতা দলের ভর্ত্রুহরি মেহতাব সে দিকে ইঙ্গিত করে প্রশ্ন তুলেছেন, এই টাকা কেন বরাদ্দ করা হচ্ছে? জেটলি নিজেই তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের দায়িত্বে। অস্বস্তিতে পড়ে তিনি জবাব দেন, প্রসার ভারতী ও মন্ত্রকের বকেয়া কিছু মেটাতেই এই টাকা রাখা হচ্ছে।

কংগ্রেসের নেতারা কিন্তু বলছেন, আসলে বিহার ভোটের আগে মোদী সরকারের ঢাক পেটাতেই টাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

land bill gst modi pressure opposition vs modi gst bill modi urging opposition help modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy