Advertisement
E-Paper

সেলিম-রাজনাথে ধুন্ধুমার, অসহিষ্ণু সংসদই

সোমবার একটি সাময়িকপত্রকে উদ্ধৃত করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে আক্রমণ করেন সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম। বিজেপি পাল্টা দাবি করে, ওই তথ্য ঠিক নয়। সেলিম তাঁর মন্তব্য ফিরিয়ে না-নিলে সংসদ অচল করে দেওয়া হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:২৮

অসহিষ্ণুতা নিয়ে বিতর্কেই অসহিষ্ণু হয়ে পড়ল সংসদ!

সোমবার একটি সাময়িকপত্রকে উদ্ধৃত করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে আক্রমণ করেন সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম। বিজেপি পাল্টা দাবি করে, ওই তথ্য ঠিক নয়। সেলিম তাঁর মন্তব্য ফিরিয়ে না-নিলে সংসদ অচল করে দেওয়া হবে। কিন্তু সেলিম নিজের অবস্থান থেকে নড়েননি। তাঁর সমর্থনে আবার এগিয়ে আসেন তৃণমূলের সৌগত রায়। সব মিলিয়ে হইহট্টগোলে দফায় দফায় মুলতুবি করতে হয় লোকসভার অধিবেশন। পরে গোটা পর্বটাই সভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দিয়ে দেন স্পিকার। আর রাতে সাময়িকপত্রটি বিবৃতি দিয়ে জানায়, ভুলটি তাদেরই। ওই মন্তব্য রাজনাথের নয়।

দিনটা অবশ্য শুরু হয়েছিল সহিষ্ণুতার আবহেই। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার বার্তা আগেই দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সূত্র ধরেই অসহিষ্ণুতা নিয়ে আলোচনা মেনে নেয় সরকার। সিপিএম, কংগ্রেসকে আগে বলতে দেওয়ার দাবিও মেনে নেওয়া হয়। সমাজের কিছু অংশে যে অসহিষ্ণুতা রয়েছে, রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে তা কবুল করেন প্রবীণ বিজেপি নেতা ও মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু। সেই সব অসহিষ্ণুতা চিহ্নিত করে কঠোর হাতে দমন করা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তবে একই সঙ্গে নায়ডুর অভিযোগ ছিল, অসহিষ্ণুতার ঘটনাকে অহেতুক বড় করে দেখানো হচ্ছে।

তাতেও অবশ্য আলোচনার তাল কাটেনি। কিন্তু বিতর্ক উস্কে দেন মহম্মদ সেলিম। তিনি দাবি করেন, ২০১৪-র লোকসভা ভোটে মোদী জিতে আসার পরেই রাজনাথ বলেছিলেন— আটশো বছর পরে দেশে কোনও হিন্দু শাসক এলেন। বিজেপি অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই এর বিরোধিতা করে জানায়, রাজনাথ নন, এই মন্তব্য করেছিলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদ্য প্রয়াত নেতা অশোক সিঙ্ঘল। রাজনাথ নিজেও বলেন, ‘‘আমি অত্যন্ত ব্যথিত। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এতটা ব্যথিত আমি আর কখনও হইনি। যদি কোনও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন, তা হলে তাঁর পদে থাকার কোনও অধিকার নেই।’’ সেলিমকে মন্তব্য ফিরিয়ে নেওয়ার অনুরোধও করেন রাজনাথ। কিন্তু সেলিম গোঁ ধরে থাকেন। বলেন, এই তথ্য সংবাদমাধ্যমেই প্রকাশিত। পাল্টা সুর চড়াতে থাকে বিজেপি-ও। শাসক শিবির থেকে রাজীবপ্রতাপ রুডি, গণেশ সিংহ, মীনাক্ষি লেখির মতো সাংসদরা সংসদ অচল করে রাখেন। সেলিমের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ আনার হুমকিও দেন তাঁরা।

এরই মধ্যে কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই সেলিমের পাশে দাঁড়ান সৌগত রায়। আগাম নোটিস ছাড়া কোনও সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট তুলে ধরা যায় না— এই অভিযোগে যখন সরব বিজেপি শিবির, তখনই নিয়মাবলী হাতে উঠে দাঁড়ান সৌগতবাবু। সংসদীয় আইন তুলে ধরে স্পিকারকে বলেন, কোনও সংবাদমাধ্যমের অংশবিশেষ বিতর্কের সময় উল্লেখ করতে হলে আগে থেকে নোটিস দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তাঁর মতে, সেলিম বেআইনি কিছু করেননি।

সৌগতবাবুর এই মন্তব্যের পরে আরও তপ্ত হয়ে ওঠে লোকসভা। দীর্ঘক্ষণ ধরে দু’পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। কিন্তু এই ডামাডোলের মধ্যে যে বঙ্গের এক বাম নেতা ঘণ্টা তিনেক প্রচারের আলোয় রয়ে যাচ্ছেন, তা মোটেই ভাল ভাবে নেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, নবান্ন থেকে আসা নির্দেশেই সংসদে বিরুদ্ধ মত জানাতে থাকেন তৃণমূলের সাংসদরা। সেলিম-রাজনাথ তরজাতে অসহিষ্ণুতা বিতর্ক লঘু হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘এত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে সবিস্তার আলোচনা প্রয়োজন ছিল। সিপিএম-বিজেপি মিলে সেটাই করতে দিচ্ছে না।’’ একই অভিযোগে সরব হন আর এক তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীও।

সংসদে শাসক-বিরোধী তুলকালামের পরে রাতে অবশ্য তথ্যগত ভুলের কথা স্বীকার করেছে সেলিম-উদ্ধৃত ওই সংবাদমাধ্যম। তাদের অনলাইন সংস্করণে জানানো হয়েছে, আটশো বছর পরে দেশে হিন্দু শাসক আসার কথা বলেছিলেন অশোক সিঙ্ঘল। রাজনাথ নন। তাঁদের প্রতিবেদনে ভুল তথ্য প্রকাশিত হওয়ার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন ওই সংবাদমাধ্যম কর্তৃপক্ষ।

তত ক্ষণে ক্ষতি অবশ্য যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে।

mohammed salim rajnath singh war of words loksabha parliament hindu ruler
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy