চোত্তাখোলার মৈত্রী উদ্যান। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী
মুক্তিযুদ্ধের স্মারক গড়ছে ত্রিপুরা। দক্ষিণ বিলোনিয়ার রাজনগর ব্লকের চোত্তাখোলায় তৈরি হচ্ছে ৫২ ফুট উচ্চতার সৌধ। তাকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান’।
একাত্তরে রাজধানী আগরতলা থেকে ১৩২ কিলোমিটার দূরে রাজনগর গ্রামে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের একটি শিবির ছিল। চোত্তাখোলার ওই শিবির থেকে বাংলাদেশের ফেনি, কুমিল্লা, চৌদ্দগ্রাম কাছাকাছি। ফলে যাগোযোগের ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পেতেন মুক্তিযোদ্ধারা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কও কাছে। সেই সড়কে পাকিস্তান সেনার কনভয়ে হামলা চালাতেন মুক্তিযোদ্ধারা।
আগরতলায় ২০০১ সালে ভারত-বাংলা মৈত্রী উৎসব পালন করা হয়| সেই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মন্ত্রী অসম আব্দুর রব সামিল হয়েছিলেন। সে সময়ে তিনি চোত্তাখোলা শিবিরের নানা অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনিও বেশ কিছু দিন ওই শিবিরে ছিলেন। এর পরে ২০০৯ সালে রাজনগরের বিধায়ক সুধন দাস বাংলাদেশের বিজয় দিবসে ঘোষণা করেন, চোত্তাখোলায় ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি উদ্যান’ গড়ে তোলা হবে। প্রায় ২০ হেক্টর জায়গা নিয়ে উদ্যানটি তৈরির চিন্তাভাবনা করা হয়। বাগানের ওই জমির মধ্যে রয়েছে সাতটি টিলা ও একটি ঝর্না। পরে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য বাদল চৌধুরী ও জিতেন চৌধুরীকে নিয়ে জায়গাটি দেখে যান। এর পর উদ্যানের নাম বদলে করা হয় ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান’। ২০১০ সালে ১১ নভেম্বর বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী দীপু মণি ওই উদ্যানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার পরে নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
ছ’বছর পরে সেই নির্মাণ কাজ এখন একেবারেই শেষ পর্যায়ে। বাংলাদেশের সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে চোত্তাখোলাতেও ৫২ ফুটের একটি স্মারক তৈরি করা হচ্ছে। সুধনবাবু জানান, ফাইবার গ্লাসের ভাস্কর্যে টিলার উপর মুক্তিযুদ্ধের নানা মুহূর্ত ফুটিয়ে তুলছেন আগরতলা আর্ট কলেজের ছাত্ররা। প্রবেশপথে থাকবে প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবর রহমানের দু’টি মূর্তি। আগরতলা আর্ট কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অভিজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনাদের ত্রাণসামগ্রী বিতরণ, শরনার্থী শিবির, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধক্ষেত্রের নানা ছবি তুলে ধরা হচ্ছে। উদ্যানের মধ্যে থাকা জলাশয়টির উপর তৈরি করা হয়েছে ঝুলন্ত সেতু। যুদ্ধের সময় টিলার উপরে তৈরি করা মুক্তিযোদ্ধাদের বাঙ্কারগুলি একই ভাবে রেখে দেওয়া হয়েছে|’’
মৈত্রী উদ্যানে ভাস্কর্য পার্ক গড়ে তুলতে খুলনার ‘গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ’ ও জাদুঘর অছি পরিষদের সাহাষ্য নিচ্ছে ত্রিপুরা সরকার। শিল্পী হাশেম খানের ‘গণহত্যা ৭১’, শ্যামল চৌধুরীর ‘শরণার্থী শিশু’-র পাশাপাশি তেজস হালদার ও মাহমুদুল হাসানের ৪টি ভাস্কর্য সেখানে থাকছে। মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যসচিব যশপাল সিংহ সম্প্রতি ওই উদ্যানের কাজ দেখে যান। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, তিন মাসের মধ্যে সব কাজ শেষ করে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy