Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

আয় বৃষ্টি ঝেঁপে

এই লেখা যখন লিখছি, চাতক পাখির মত বৃষ্টির জন্য হাহাকার করছে মহারাষ্ট্রের মানুষ। চারিদিক ঝলসে দিচ্ছে প্রখর সূর্যের দাবদাহ। গত দু’বছর এখানে আশানুরূপ বৃষ্টি হয় নি। ফলে জলের ঘাটতি রয়েই গেছে। মুম্বইয়ের অনেক হাউসিং সোসাইটিতেই জলের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ রয়েছে সুইমিং পুলগুলোও।

পারমিতা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৬ ০০:২০
Share: Save:

এই লেখা যখন লিখছি, চাতক পাখির মত বৃষ্টির জন্য হাহাকার করছে মহারাষ্ট্রের মানুষ। চারিদিক ঝলসে দিচ্ছে প্রখর সূর্যের দাবদাহ। গত দু’বছর এখানে আশানুরূপ বৃষ্টি হয় নি। ফলে জলের ঘাটতি রয়েই গেছে। মুম্বইয়ের অনেক হাউসিং সোসাইটিতেই জলের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ রয়েছে সুইমিং পুলগুলোও। নাওয়া খাওয়ার জলই মেলে না, তায় আবার সুইমিং পুল। এ বছর বৃষ্টির অপেক্ষায় দিন গুনছে সকলে। মুম্বইয়ে বছরে চারমাস বৃষ্টি। বাকি সময় এক বুঁদ পানিও ঝরে না আসমান থেকে। ঘোর গ্রীষ্মের দুপুরগুলো রাক্ষসীর মত গিলে খেতে আসে পথচারী মানুষ বা পশুপক্ষীকে। আকাশটা ধোঁয়া ধোঁয়া – তাপ ঝরিয়ে ঝরিয়ে ক্লান্ত, ধূসর নীল। আকাশটাকে তখন আর মনে হয় না ক্যানভাস – কোন কল্পনা আঁকিবুঁকি কাটে না সেখানে। আসলে গ্রীষ্মের আগুনঝরানো দিনগুলোতে কল্পনার তো কোনও অবকাশই নেই।

এই সময় ছোটবেলার কথা মনে পড়ে খুব। ছোটবেলার সেই নানারঙের দিনগুলোর কথা – যে দিনগুলোয় ইচ্ছে করলেও আর ফিরে যাওয়া যাবে না। গরমের দিনে ফেরিওয়ালা আসত মাথায় করে কুলফি মালাইয়ের ঝাঁকা নিয়ে। কুলফিগুলো ছাঁচের মধ্যে রাখা থাকত – লাল কাপড় দিয়ে ঢাকা। কেউ ডাকলে ঝাঁকাটা মাথা থেকে নামিয়ে ছাঁচ থেকে ছুরি দিয়ে কুলফি বার করে কেটে কেটে দিত। উফফ্, গরমের দিনে সেই কুলফিই জিভে জল আনত।

আর ছিল আইসক্রিম। স্কুলের সামনে ঢাকা বাক্সে করে আইসক্রিমওয়ালা নিয়ে আসত লাল, সবুজ, খয়েরি, সাদা রঙের আইসক্রিম। কত আর দাম ছিল – পাঁচ বা দশ পয়সা! হামলে পড়ে কিনত পড়ুয়ারা। বাড়িতে মায়ের বারণ, ‘ওরে খাস না রে, কিসব নোংরা জল দিয়ে বানায় ওসব...’ আর মনে থাকত না।

এখন পাঁচ, দশ পয়সার আইসক্রিম! অতীত হয়ে গেছে।

আমাদের ছেলেমেয়েরা নামী ব্র্যাণ্ডের ভ্যানিলা, স্ট্রবেরি, চকোলেট – এইসব আইসক্রিম খেয়ে বড় হচ্ছে। ওদের বোঝার সাধ্য নয় ঐ পাঁচ দশ পয়সার কাঠি আইসক্রিমের মোহ!

এখনও স্পষ্ট মনে পড়ে – ছবির মত আঁকা হয়ে গেছে মনের গভীরে – সেই ফুলে ছাওয়া কৃষ্ণচূড়া গাছ, তার এক পাশে আমার প্রাইমারি স্কুল আর অন্য পাশে সেকেন্ডারি স্কুল। সেই কৃষ্ণচূড়া গাছের তলায় বসত আইসক্রিমওয়ালা আর সে আসামাত্রই ছেলেমেয়েরা ঘিরে ধরত তাকে। টিফিন টাইমে ঐ কাঠি আইসক্রিম কিনে চুষতে চুষতে স্কুলের সামনের মাঠে গাছের ছায়ায় চু কিৎকিৎ খেলা। আইসক্রিম চুষতে চুষতে উপরের অংশটা ক্ষয়ে গিয়ে কাঠি বেরিয়ে গেলে দু’হাতে কাঠি ধরে আইসক্রিমের শেষ কণাটুকু জিভের ভেতর মিলিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত শান্তি থাকত না। আইসক্রিম অবশ্য নামেই - ক্রিম কিছুই থাকত না, ঢনঢন করত শুধু আইস। কিন্তু তাতেই কি উৎসাহ। আসলে তখন তো প্রায় কারো বাড়িতেই ফ্রিজ ছিল না, বরফের স্বাদই তাই অমৃত ঠেকত। ঘরে ঘরে ফ্রিজ ছিল না, টিভি ছিল না, মোবাইল ফোন তো দূর অস্ত, ল্যান্ডফোন যার বাড়ীতে থাকত, সে তো যেন অন্য গ্রহের মানুষ – এমনটাই মনে হত আমাদের ছোটদের।

তখন গরমের দুপুরগুলো টেলিভিশন অধিকার করে নেয়নি। মা, ঠাকুমারা দুপুরগুলো তুলে রাখতেন বড়ি, আমসত্ত্ব দেওয়া বা সেলাই ফোঁড়াই কি গল্পের বই পড়ার জন্য। কলাইয়ের ডাল রাতভর ভিজিয়ে শিল নোড়ায় বেটে খুব করে ফেটিয়ে বেশ এক গামলা নিয়ে যাওয়া হত ছাদে। কড়া রোদে সাদা পরিষ্কার কাপড় বিছিয়ে টোপা টোপা ফুটফুটে সাদা বড়ি দেওয়া হত। সারা দুপুর দু’তিন দিন ধরে রোদ পেত সেই বড়ি। তারপর কাপড় থেকে একটা একটা করে বড়ি তুলে কৌটোয় রাখতে খুব মজা লাগত। আর ছিল গরমের দিনে ঠাকুমার আমসত্ত্ব তৈরি। আমাদের গ্রামের বাড়িতে ছিল বড় আমবাগান আর বাড়ির পেছনেই দিশি আমের একটা গাছ – নাম ছিল তার মিঠুয়া। ছোট ছোট আম হত কিন্তু গুড়ের মত মিষ্টি। আমের মরশুমে ফলও দিত গাছটা প্রচুর। আমরা ছোটরাই ছ’সাতটা করে খেতুম সেই আম। এছাড়াও বাগানের আমও আসত। এই আমগুলোর মধ্যে যেগুলো একটু দাগি – পরিষ্কার কাপড়ে সেগুলোর ক্কাথ কচলিয়ে ছেঁকে নেওয়া হত। তারপর আবার গন্তব্য সেই ছাদ, যেখানে সারাদিন অঢেল রোদ্দুরে শুকোত কাপড়ের ওপর পাতলা করে বিছিয়ে দেওয়া সেই আমের ক্কাথ। তৈরি হত আমসত্ত্ব। শুকিয়ে গেলে সেই আমসত্ত্ব ভাঁজ করে ঠাকুমা রেখে দিত হাঁড়িতে। আমরা মাঝে মাঝে লুকিয়ে চুরিয়ে আমসত্ত্ব চাখার সুযোগ মোটেই হাতছাড়া করতুম না।

আর একটা প্রাকৃতিক দৃশ্যও উপভোগ করতাম সে সময়ে। গ্রামে কালবৈশাখি ঝড়ের মাতন। সারাদিনের গুমোট গরমের শেষে বিকেলে ঘনিয়ে উঠত কালো মেঘ পশ্চিম আকাশে। প্রকৃতি কেমন যেন থম মেরে থাকত। ঝড়ের আগে যেমন সব কিছু স্তব্ধ হয়ে যায়। তারপর হঠাৎ গোঁ গোঁ করে মাতাল হাওয়া ছুটে আসত দশ দিক কাঁপিয়ে। উঁচু উঁচু নারকোল গাছগুলো আন্দোলিত হত। গাছের শাখায় শাখায় তখন ঝড়ের প্রলয় লীলা। ঝড়ে টুপ টাপ খসে পড়ত আম। সকলে দৌড়ত আম কুড়োবার জন্য। আর তখনই ঝড়ের সাথে পাগলি মেয়ের মত আসত এলোপাথাড়ি বৃষ্টি। গরমের প্রবল দাপট তখন একরাশ ভেজা হাওয়ায় ক্লান্ত, পরাহত। কিন্তু গরমের দাপট কমলে কি হবে, ঝড়ের মাতনে তখন বিদ্যুৎ গেছে চলে। চারিদিকে ঘনিয়ে এসেছে ঝুপঝুপে অন্ধকার। রান্নাঘরে কাঠের জ্বালের আগুন থেকে নারকোল পাতা জ্বেলে ঠাকুমা ধরিয়ে নিয়েছে লম্ফ। লম্ফর আগুনের শিখা বাতাসের ঝাপটায় উঠছে কেঁপে কেঁপে। সেই কাঁপা কাঁপা শিখায় চতুর্দিক কেমন আধা ভৌতিক। তুলসীতলার পিদিমটা নিভে গেছে। বাড়ির পেছনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে নিকষ কালো আঁধার। হ্যারিকেন জ্বালিয়ে খোলা দালানে পড়তে বসি। পড়তে বসে কানে আসে কত রকমের আওয়াজ – ঝিঁঝির ডাক, বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ, হাওয়ার শনশন বয়ে যাওয়া – সেই নানারকম শব্দের সঙ্গে মিশে যায় বাতাসের সোঁদা গন্ধ। কোথায় কতদূরে যেন শেয়াল ডেকে ওঠে; সেইসঙ্গে কুকুরের তীব্র চীৎকার। গা’টা কেমন ছমছম ক’রে ওঠে। ...ভাবলে অবাক লাগে সেই দিনগুলো এখন অতীত হয়ে গেছে। অতীত; তবু কত স্পষ্ট আর কত তীব্র এর অভিঘাত ।

এই মুম্বইয়ে কালবৈশাখী হয় না। সারা গ্রীষ্মে বৃষ্টি হয় না একফোঁটা কিন্তু যখন বৃষ্টি নামে তখন সে রণরঙ্গিনী - আকাশে আকাশে মেঘের দামামা বাজিয়ে অট্টহাসি হেসে সে জানিয়ে দেয়; আমি এসেছি।

বৃষ্টি আসতে আর তো দেরি নেই, এ কাগজ যখন আপনারা পড়বেন, তখন হয়তো আকাশ জুড়ে মেঘের ঘনঘটা। এলোপাথাড়ি বৃষ্টি নামবে মুম্বইয়ের বহুতল, সমুদ্র-খাড়ি, পাহাড় ভাসিয়ে। আসুক, আসুক বৃষ্টি। ধারাস্নানে শীতল হোক রুক্ষ শহরটা।

আবার মন চলে যায় সেই পিছনপানে......যখন প্রথম আষাঢ়ের মেঘ জমত আকাশ ছেয়ে; অবারিত ধানক্ষেতে পড়ত মেঘের ছায়া। আমাদের পশ্চিমবঙ্গ তো শস্যশ্যামলা – সবুজে সবুজ। মেঘের ছায়ায় সে সবুজ আরো গাঢ় হয়ে উঠত। টুপটাপ করে বৃষ্টি পড়ত লেবুপাতায় —নারকোল গাছগুলো ভিজে একসা হয়ে যেত। বাড়ির মাটির উঠোনে জমত বৃষ্টির জল। সেই জলে সারা দুপুর টাপুর টুপুর বৃষ্টি। কাগজ দিয়ে বানাতাম নৌকা। উঠোনের জলে ভাসাতাম সেই কাগজের তরী। এই একটা জায়গাতে আজকের দিনের ছোটদের সঙ্গে আমাদের মিল। ওরাও ভালবাসে কাগজের নৌকা ভাসাতে।

গ্রামের স্কুলে বর্ষার সময় আবার পনেরো দিনের ছুটি। আসলে স্কুলে যারা পড়ত, বেশিরভাগের বাড়িরই জীবিকা ছিল খেত খামারে কাজের। বর্ষার সময়ই তো ধান রোয়ার সময়। আর তা ছাড়া গ্রামদেশে জলে কাদায় এই সময়টায় রস্তাঘাটও বড় ভয়ানক হয়ে থাকত। পিচের রাস্তা তো ছিল না, ছিল মাটির রাস্তা আর মাটির রাস্তায় বৃষ্টির জল পড়লে সে যে কি অবস্থা হয়, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তার পর, একটু যখন বড় হলাম – সেই কিশোরীবেলায় বর্ষার মেঘমেদুর দুপুরে নিয়ে বসতাম জীবনানন্দ দাশের কবিতা—

হায় চিল, সোনালি ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে

তুমি আর কেঁদো না কো উড়ে উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে!

তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ মনে আসে! পৃথিবীর রাঙা রাজকন্যাদের মতো সে যে চলে গেছে রূপ নিয়ে দূরে; আবার তাহাকে কেন ডেকে আনো? কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে।’

মুম্বইয়ে যখন প্রথম আসি, বর্ষায় সে বড় ভয়ানক অভিজ্ঞতা হয়েছিল। দু’হাজার পাঁচ সালের ছাব্বিশে জুলাই; সেই দিনটার দুঃসহ স্মৃতি আজও তাড়িয়ে বেড়ায় আমাকে। ঐরকম বৃষ্টি এর আগে দেখিনি কখনও। যেন হাজার দানব মিলে তাণ্ডব চালিয়েছিল গোটা শহরটার উপর। সে কী বৃষ্টি! যেন কালান্তক যম এসে হাজির হয়েছে! বৃষ্টিতে সাদা হয়ে গেছে সমস্ত শহরটা। এক দিনের অমন মারাত্মক বৃষ্টি যে কেড়ে নিয়েছিল কত মানুষ ও জীবজন্তুর প্রাণ; এখনও ভাবলে শিউরে উঠি। সে রাতে একা কাটিয়েছিলাম ফ্ল্যাটে আর সারারাত বৃষ্টির তাণ্ডব দেখেছিলাম জানালার কাচের ভেতর দিয়ে। ভয় হয়েছিল, বুঝি বা জানালা ভেঙে ঘর ভাসিয়ে নিয়ে যাবে মাতাল দানবের দল। আমার বেটার হাফ বাড়ি ফিরতে পারেনি অফিস থেকে দুদিন। বিদ্যুৎবিহীন, বাইরের পৃথিবীর সাথে সংস্রববিহীন হয়ে কাটিয়েছিলাম একা। সে কি দুঃসহ স্মৃতি!

ওই দুঃসহ স্মৃতি ভোলা যায় না। তবু বলি, মুম্বইয়ের বৃষ্টি একেবারে অন্যরকম। মুম্বই আসার পরে পরেই সানপাড়ার যে বাড়িটায় থকতাম, সেখানে পাঁচতলার ফ্ল্যাট থেকে চোখে পড়ত দূরের খাড়ি, পাহাড় আর ম্যানগ্রোভের জঙ্গল। আর কাছেই ছিল ভাসি স্টেশনটা। দূর থেকে ম্যানগ্রোভের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ট্রেন আসত কু ঝিক ঝিক ঝিক ঝিক......। ট্রেন সর্পিল গতিতে ঢুকে যেত ভাসি স্টেশনে। বর্ষাকালে খাড়ির ওপর বিশাল আকাশ জুড়ে কোথা থেকে যে হাজির হত মেঘের দল। তারা উড়ে উড়ে ভেসে ভেসে ঠিক চলে আসত মেঘদূতের মত বৃষ্টির বার্তা বহন করে। আর যখন বৃষ্টি আসত; মনে হত দূর থেকে; ঐ ম্যানগ্রোভের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে একটা বিশাল সাদা ওড়না ভেসে আসছে হাওয়ায়। দেখতে দেখতে সেই সাদা ওড়না চলে আসত খুব কাছে আর অজস্র বৃষ্টির কণা হয়ে ঝরে পড়ত শহরের ওপর। মেঘমল্লার রাগ বেজে উঠত মনের ভেতর। একলা ঘরের বিজন অবকাশে বসতুম কবিতার বই নিয়ে। শক্তি, সুনীল, জীবনানন্দ আর ছিলেন আমাদের সকলের প্রিয় রবীন্দ্রনাথ। কবিতা পড়তে পড়তে হারিয়ে যেতাম আকাশের গহীনে। বৃষ্টিভেজা মেঘলা দুপুরগুলোয় বিগত কোন স্মৃতির মায়ায় যেতাম আচ্ছন্ন হয়ে।

মনে শক্তি কবির কবিতা তুলত অনুরণন –

জানালা খোলা, বয়েছে বাতাস

সেই বাতাসের হাতে ওড়ে বালি, সুগন্ধ সন্ধ্যার

উড়ে গিয়ে সমুদ্রের জলে

প’ড়ে গভীরতা খোঁজে
সুগন্ধ এবং ধুলোবালি!

খালি বৃষ্টি হয় এই সমুদ্রের
উপকূলে, তীরে –

এখনও রয়েছি বৃষ্টির অপেক্ষায়। এখন মুম্বইয়ের যেখানে বাস, পাহাড় ঘিরে থাকে আমায়। বৃষ্টিবিহীন দিনগুলো ছাপ ফেলেছে পাহাড়ের অবয়বে। সবুজ গাছপালা; যারা ঐ পাহাড়কে ছেয়ে থাকে বারোমাস, তারা এখন ক্রমশঃ ধূসর – অধীর আগ্রহে তাদেরও প্রতীক্ষা বৃষ্টির জন্য। অপেক্ষায় আছি কখন পাহাড়ের গাছে গাছে আটকে থাকবে মেঘ। ঝিরঝির করে ঝরাবে শুকনো পাথরের বুকে তাদের কোমল বৃষ্টিপরশ। অপেক্ষায় আছি, কখন দেখব খারঘরের রুক্ষ পাহাড়ের বুক ভরে উঠেছে সবুজের সতেজ আস্তরণে। পাহাড়ের বুক চিরে নামছে অজস্র ঝরণার ধারা। ডাকছি বৃষ্টিকে প্রাণভরে – এসো বৃষ্টি, সিক্ত করো, শীতল করো এই শহরটাকে। দগ্ধ হয়ে যাওয়া মাটিকে ভিজিয়ে তোল; যাতে মাটি ফুঁড়েওঠে অংকুর – মহীরুহ হয়ে ওঠার স্বপ্ন বুকে নিয়ে। তুমিই সৃষ্টি করতে পারো বৃষ্টি – প্রাণ!

শেষ করি জীবনানন্দ দাশের ‘জল’ কবিতার কয়েকটি পংক্তি দিয়ে —

তোমায় ভালবেসেছি আমি, তাই

অন্ধকারে ঘাসের গন্ধ পাই;

কালো বেতের ফলে নিবিড় দিন

কোথায় থেকে আবার এল ভেসে।

মনে পড়ে, জলের মতন ঘুরে অবিরল

পেয়েছিলাম জামের ছায়ার নিচে তোমার জল,

যেন তোমার আমার হাজার
বছর মিল,

মনের সঙ্গে যেমন শরীর মেশে;’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rain Monsoon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE