Advertisement
E-Paper

মেয়ে কি আর হাসবে, প্রশ্ন নির্যাতিতার মায়ের

হাসপাতালের বাতানুকূল কেবিনে কুঁকড়ে বসেছিল ন’বছরের মেয়েটা। পাশে মলিন শাড়ি পরে মা। কেবিনে ঝোলানো এলসিডি টিভিতে কার্টুন চললেও সে দিকে চোখ নেই শিশুর। ঘাটশিলার প্রত্যন্ত গ্রাম ভালুকতারা থেকে মেয়ের চিকিৎসার জন্য রাঁচির বেসরকারি হাসপাতালে এসেছে পরিবারটি। শিশুটির বাবার কথায়, ‘‘মাস দেড়েক আগে গ্রামেরই এক ট্রাকচালক মেয়েকে লজেন্স দেওয়ার নাম করে সন্ধেবেলা ভুলিয়ে নদীর ধারে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৫
বাবার কোলে মেয়ের এই ছবিই ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

বাবার কোলে মেয়ের এই ছবিই ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

হাসপাতালের বাতানুকূল কেবিনে কুঁকড়ে বসেছিল ন’বছরের মেয়েটা। পাশে মলিন শাড়ি পরে মা। কেবিনে ঝোলানো এলসিডি টিভিতে কার্টুন চললেও সে দিকে চোখ নেই শিশুর।
ঘাটশিলার প্রত্যন্ত গ্রাম ভালুকতারা থেকে মেয়ের চিকিৎসার জন্য রাঁচির বেসরকারি হাসপাতালে এসেছে পরিবারটি। শিশুটির বাবার কথায়, ‘‘মাস দেড়েক আগে গ্রামেরই এক ট্রাকচালক মেয়েকে লজেন্স দেওয়ার নাম করে সন্ধেবেলা ভুলিয়ে নদীর ধারে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। রক্তাক্ত অবস্থায় মেয়ে বাড়ি ফিরে আসে। সুরেন্দ্র সর্দার নামে ওই ট্রাকচালক ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতারও হয়। মেয়েই সুরেন্দ্রকে শনাক্ত করেছিল।’’
হাসপাতালের চিকিৎসক তথা সেন্টারের প্রধান হরবিন্দ্র পাল সিংহ বলেন, ‘‘শিশুটি পৈশাচিক অত্যাচারের শিকার। কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলেও আরও একটি অস্ত্রোপচার দরকার। ওর গোপনাঙ্গই শুধু নয়, অন্ত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পায়ুদ্বারও জখম।’’ শিশুটির বাবা জানালেন, চিকিৎসার জন্য অসুস্থ মেয়েকে কোলে নিয়ে গ্রাম থেকে চার কিলোমিটার পথ হেঁটে পৌঁছতে হতো ঘাটশিলার ডুমুরিয়া ব্লকের সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। গত কয়েক সপ্তাহ এ ভাবেই চলেছে।
ঘটনার পরের দিনই মেয়েটিকে প্রথমে ডুমুরিয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরে জামশেদপুর এবং তারও পরে রাঁচির রিমসে আনা হয়। সেখানে একটি অস্ত্রোপচারের পরে ছেড়ে দেওয়ার সময় চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, এক মাস পরে আরও একটি অস্ত্রোপচার দরকার। বাড়িতে থাকার সময় মেয়ের ক্ষতস্থানে নিয়মিত ড্রেসিং করাও প্রয়োজন।
কিন্তু কী ভাবে রোজ হাসপাতালে মেয়েকে নিয়ে আসবেন বাবা? গণ্ডগ্রামের হতদরিদ্র পরিবারটির তো বটেই, ভালুকতারার বেশির ভাগ বাসিন্দার বাড়িতেই সাইকেলও নেই। শিশুটির বাবার কথায়, ‘‘মেয়েকে কোলে নিয়ে তাই চার কিলোমিটার হেঁটে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতাম। একই ভাবে বাড়ি ফিরতাম।’’

অসুস্থ মেয়ে কোলে বাবার রোজ হেঁটে আসার খবর সপ্তাহখানেক আগে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে সেই ছবি। জেলা পুলিশ-প্রশাসনের নজরে আসে দিন দুই আগে। জেলাশাসক অমিতাভ কৌশলের অবশ্য দাবি, ‘‘ওই শিশুর চিকিৎসায় গাফিলতি কিন্তু হয়নি। ড্রেসিং করার জন্য মেয়েটির বাবাকে যে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হতো, এটা জানার পরেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’’

জেলাশাসক জানালেন, হাইকোর্টের নির্দেশে ওই শিশুর পরিবারকে দেওয়া হচ্ছে এক লক্ষ টাকা। ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে ঘরও দেওয়া হবে। নোবেলজয়ী কৈলাস সত্যার্থীও কয়েক জন প্রতিনিধিকে নিয়ে আসবেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি।

তবে বাবা-মা আশ্বস্ত হতে পারছেন না কিছুতেই। তাঁদের প্রশ্ন, মেয়ে কি আর সুস্থ হয়ে কোনও দিন খেলতে পারবে? স্কুলে যেতে পারবে? শিশুটির মা বললেন, ‘‘প্রায় দু’মাস ধরে মেয়ের মুখে হাসি নেই। কবে যে ভাল হয়ে ও গ্রামে ফিরবে, সেই আশায় দিন গুনছি।’’

rape victim rape victim girl rape victim girls mother girls smile
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy