মাস দুয়েক আগে পহেলগাম-কাণ্ডের পরে যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে। কাশ্মীর নিয়ে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল জনমানসে। যার ফলে জোর ধাক্কা খেয়েছে কাশ্মীরের পর্যটন। ভরা মরসুমেও গত দু’মাসে কাশ্মীরকে এড়িয়ে চলেছেন পর্যটকেরা। তবে এ বার সেই ভয়কে খানিক পিছনে ফেলে, কাশ্মীর দিয়েই পর্বতাভিযানের পরিকল্পনা করছেন বাঙালি আরোহীরা। লাদাখ ও হিমাচলের স্পিতি জেলার সীমান্তে মন্টো শৃঙ্গে (৬৩৩১ মিটার) আগামী অগস্টে শেরপাহীন অভিযান করতে চলেছেন পর্বতারোহী রুদ্রপ্রসাদ হালদার-সহ ১২ জন আরোহীর দল।
দক্ষিণ-পূর্ব লাদাখে মন্টো শৃঙ্গের এক দিকে তিব্বত সীমান্ত, অন্য দিকে হিমাচলের স্পিতি জেলা। লেহ শহরের থেকে ২১০ কিলোমিটার দূরে, সোমো রিরি হ্রদের পাশে করজোক গ্রাম থেকে ওই শৃঙ্গের দিকে এগোতে হয়। এর জন্য কাশ্মীরের পথ দিয়ে, শ্রীনগর-কার্গিল-লেহ হয়ে করজোক গ্রামে পৌঁছনোর প্রাথমিক পরিকল্পনা করে রেখেছেন দলনেতা রুদ্রপ্রসাদ ও সহকারী দলনেতা সত্যরূপ সিদ্ধান্ত। তাঁদের সঙ্গী তুহিন ভট্টাচার্য, চয়ন চট্টোপাধ্যায়, নৈতিক নস্কর, ঋক রায়, দেবাশিস মজুমদার, অরুণাভ সাঁপুই, সৌম্যকান্তি বিশ্বাস, ভাস্কর হালদার, নিরঞ্জন পাল এবং অনির্বাণ তালুকদার। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে কর্মরত রুদ্রপ্রসাদ বলছেন, ‘‘জুলাই মাসে বৃষ্টিতে মানালির দিকে ধস নামে, রাস্তার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তাই মানালির দিক দিয়ে ঢোকার বদলে আপাতত কাশ্মীর দিয়েই করজোক পৌঁছনোর কথা ভেবে রেখেছি। তবে অবশ্যই পরিস্থিতির দিকে নজর আছে। ফের কাশ্মীর অশান্ত হলে বা যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে প্রয়োজনে পরিকল্পনার রদবদল হবে। আশা করি, লাদাখে অশান্তির আঁচ পৌঁছবে না।’’
সত্যরূপেরা জানাচ্ছেন, লাদাখের ওই অংশের একাধিক শৃঙ্গে আজও কোনও অভিযান হয়নি। ২০০৩ সালে দেশের একটি পর্বতারোহণ ক্লাবের সদস্যেরা এখানে অভিযানে চালাতে এসে পথ ভুলে অন্য দিকে চলে যান। ফলে মন্টোতে এর আগে কারও পা পড়েনি। দলনেতার কথায়, ‘‘বহু আগে এ দিকের পথ তিব্বতের সঙ্গে বাণিজ্যিক কারণে ব্যবহার হলেও এখন এই অঞ্চলে কেউ যায় না। তাই শুধু পাহাড় চড়া নয়, জায়গাটাকে ভাল করে দেখাও আমাদের লক্ষ্য। এর আগে বেশ কিছু পাহাড়ে শেরপাহীন অভিযান করে আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। তাই এ বারের অভিযানেও শেরপাহীন অ্যালপাইন স্টাইলে করতে চলেছি।’’
বছ দুয়েক আগে সোনারপুরের ওই পর্বতারোহণ ক্লাবের তরফে কাশ্মীরের কিস্তোয়ার জেলার ব্রহ্মা শৃঙ্গে অভিযান চালিয়ে সাফল্যের মুখ দেখেছিলেন রুদ্রপ্রসাদ ও তাঁর দলবল। কিস্তোয়ারকে পর্যটন ও পর্বতারোহণের মানচিত্রে তুলে আনতে কাশ্মীরি প্রশাসন সে বার সর্বতো ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। তাই এ বারও অভিযানে যেতে কাশ্মীরি প্রশাসন এবং ভারতীয় সেনার অনুমতির উপরে ভরসা করছে দল।
‘অপারেশন সিঁদুর’ আপাতত স্থগিত হলেও পহেলগামে হামলাকারী জঙ্গিরা এখনও অধরা। এই অবস্থায় কাশ্মীর দিয়ে দুর্গম স্থানে অভিযান কতটা নিরাপদ? সপ্তশৃঙ্গজয়ী সত্যরূপ বলছেন, ‘‘ভারত সরকার কাশ্মীর পরিস্থিতি ফের স্বাভাবিক করতে চেয়ে ট্রেন পরিষেবা চালু করেছে। চাইছে, পর্যটকেরা কাশ্মীরে ফিরুক। পরিস্থিতি আর উত্তপ্ত না হলে আশা করা যায়, আগামী মরসুমে কাশ্মীরকে ফের আপন করে নেবেন পর্যটকেরা। সেনার তরফে নিরাপত্তার কড়াকড়িও বেড়েছে কাশ্মীরে। সেই ভরসাতেই যাচ্ছি।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)