Advertisement
১৮ মে ২০২৪

রাশ অখিলেশেরই হাতে, দাগি মুখতারকে ছেঁটে ফের বার্তা শিবপালকে

বাপ-কাকার সঙ্গে বিবাদের গোড়াটাই এ বার ছেঁটে ফেললেন অখিলেশ যাদব। মুলায়ম সিংহ যাদবের সঙ্গী অমর সিংহকে আগেই কোণঠাসা করে ফেলেছেন। এ বার অখিলেশ তাঁর কাকা শিবপালের বড় ভরসা মুখতার আনসারি আর তাঁর দলবলকেও সমাজবাদী পার্টি ছাড়তে বাধ্য করলেন। অখিলেশের ঘাড়ধাক্কা খেয়ে আজ মায়াবতীর বসপা-য় নাম লিখিয়েছেন তাঁরা।

মুখতার আনসারি

মুখতার আনসারি

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৩৭
Share: Save:

বাপ-কাকার সঙ্গে বিবাদের গোড়াটাই এ বার ছেঁটে ফেললেন অখিলেশ যাদব।

মুলায়ম সিংহ যাদবের সঙ্গী অমর সিংহকে আগেই কোণঠাসা করে ফেলেছেন। এ বার অখিলেশ তাঁর কাকা শিবপালের বড় ভরসা মুখতার আনসারি আর তাঁর দলবলকেও সমাজবাদী পার্টি ছাড়তে বাধ্য করলেন। অখিলেশের ঘাড়ধাক্কা খেয়ে আজ মায়াবতীর বসপা-য় নাম লিখিয়েছেন তাঁরা।

উত্তরপ্রদেশের কুখ্যাত গ্যাংস্টার থেকে রাজনীতিতে উঠে আসা মুখতার আনসারির সঙ্গে হাত মেলানো নিয়েই দলে মুলায়ম-শিবপালের সঙ্গে অখিলেশের প্রকাশ্য বিবাদ শুরু। বিজেপি বিধায়ক-সহ একাধিক খুন এবং অন্যান্য মামলায় গত ১১ বছর ধরে জেলে বন্দি মুখতার। জেলে বসেই তিনি বিধানসভা ভোটে লড়েন, জিতেও যান। এ হেন মুখতারের কাওয়ামি একতা দলের সঙ্গে সমাজবাদী পার্টির জোট করেন শিবপাল। সেটা গত বছর জুন মাসের কথা। তার পর অক্টোবরে শিবপাল সপার সঙ্গেই কাওয়ামি একতা দলকে মিশিয়ে নেন।

অখিলেশ জানেন, রাজ্য রাজনীতিতে তাঁর সবথেকে বড় অস্ত্র স্বচ্ছ ভাবমূর্তি। মুখতার দলে থাকলে সেই ভাবমূর্তিতে কালি লাগতে পারে। তাই প্রথমে ঘরোয়া ভাবেই বাবা-কাকার কাছে এ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। কাজ না হওয়ায় প্রকাশ্যে আপত্তি জানান। অখিলেশের বিদ্রোহের সেই শুরু।

দলের পুরো রাশ নিজের হাতে চলে আসার পর অখিলেশ প্রথমেই মুখতার-বাহিনীকে তাড়ানোর কাজ শুরু করেন। গাজিপুরের গ্যাংস্টার-রাজনীতিক মাউ সদর কেন্দ্র থেকে বারবার জিতেছেন। সেখান থেকে নিজের শিবিরের নেতা আলতাফ আনসারিকে প্রার্থী ঘোষণা করে দেন অখিলেশ। মুখতারের ভাই বা ছেলেও রাজনীতিতে রয়েছেন। তাঁদেরকেও টিকিট দিতে রাজি হননি। বাধ্য হয়ে আজ মায়াবতীর দলেই ফিরে গিয়েছেন মুখতাররা। বসপা-র টিকিটেই ১৯৯৬ সালে প্রথম বার বিধায়ক হয়েছিলেন মুখতার। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলার জেরে ২০১০-এ মায়াবতীর দল থেকে বিতাড়িত হন তিনি। এ বার সপা-তেও কল্কে মিলবে না দেখে ফের পুরনো দলের দিকে পা বাড়ালেন মুখতার। কয়েক দিন আগেই মুলায়ম শিবিরের নেতা অম্বিকা চৌধুরী বসপা-য় যোগ দিয়েছিলেন। অম্বিকার মাধ্যমেই ফের মায়াবতীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন মুখতার। যাবতীয় কলকাঠি জেলে বসেই নেড়েছেন। আজ মায়াবতী লখনউতে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখতারকে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।

সপা, বসপা দুই দলের নেতারাই বলছেন, ১১ বছর ধরে জেলে থাকলেও গাজিপুর ও সংলগ্ন এলাকায় মুখতার-বাহিনীর পেশিশক্তির সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার লোক এখনও নেই। ২০০২-এ নির্দল প্রার্থী হিসেবে বিধায়ক হন। ২০০৫-এ তাঁর বিরুদ্ধে গাজিপুরেই বিজেপি বিধায়ক কৃষ্ণানন্দ রাই-সহ ছ’জনকে গুলি করে খুন করার অভিযোগ ওঠে। পুলিশের হাতে গ্রেফতারও হন। তার পর থেকেই লখনউ জেলে বন্দি। মুখতারের

এতটাই প্রভাব যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ওই খুনের মামলা এখন দিল্লির আদালতে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। জেলে বসেই নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়ে ফের ২০০৭-এ বিধায়ক হন মুখতার। ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটেও লড়েছিলেন। তবে হেরে যান। এ বারও বাবার হয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার করছেন মুখতারের ছেলে আব্বাস।

এ দিকে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া মায়াবতী চাইছেন রাজ্যের মুসলমান ভোটকে নিজের দিকে টানতে। যার জন্য নিজের সবথেকে বড় ভোটব্যাঙ্ক দলিতদের থেকেও মুসলমানদের বেশি প্রার্থী করেছেন তিনি। সেই একই লক্ষ্যে মুখতার-বাহিনীকেও দলে ফিরিয়ে নিয়েছেন। মুখতারকে মাউ সদর থেকে টিকিট তো দেবেনই। তাঁর ভাই সিবগতুল্লাকে মহম্মদাবাদ ও ছেলে আব্বাসকে ঘোসি থেকে প্রার্থী করবেন বহেনজি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে মুখতারদের অপরাধের খতিয়ান নিয়ে। মায়াবতীর যুক্তি, মুখতারের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগই এখনও প্রমাণিত নয়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। দরকার হলে নিজের দলের লোকেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও আমি পিছপা নই। কিন্তু কেউ যদি বসপা-র ছাতায় তলায় এসে নিজেকে শোধরাতে চান, তা হলে তাঁকে সেই সুযোগ দিতে হবে।’’ অখিলেশ-ঘনিষ্ঠ সপা নেতা গৌরব ভাটিয়া সব দেখেশুনে বলছেন, ‘‘বহেনজি যদি ভাবেন দাগি অপরাধীদের দলে টেনে উনি ক্ষমতায় আসবেন, তা হলে ফল প্রকাশের পরেই তা ভুল প্রমাণিত হয়ে যাবে।’’

আর অখিলেশ এটাই চাইছিলেন। মুলায়ম-শিবপালের সঙ্গে ক্ষমতার লড়াইকে নীতির লড়াই হিসেবে তুলে ধরেছিলেন তিনি। বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, তিনি দাগি নেতাদের প্রার্থী করতে চান না। অখিলেশ ভাল করেই জানেন, তাঁর স্বচ্ছ ভাবমূর্তি আছে। তিনি উন্নয়নের চেষ্টা করেছেন, তা লোকে জানে। কিন্তু অখিলেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী থেকেও অখিলেশ নিজের বা অন্য দলের গুণ্ডাবাহিনীকে লাগাম পরাতে পারেননি। মুখতারদের তাড়িয়ে সেই অভিযোগে কিছুটা জল ঢালতে সক্ষম হলেন অখিলেশ।

অমর-বিতাড়ন, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট, এ বার মুখতারদের তাড়ানো— দলে অখিলেশের ইচ্ছা অনুযায়ী সব কিছু চলাটা স্বাভাবিক ভাবেই শিবপাল মেনে নিতে পারছেন না। লখনউয়ের বিক্রমাদিত্য মার্গে সপা-র দফতরে আজ জাতীয় পতাকা উত্তোলনের অনুষ্ঠানে দেখা মেলেনি শিবপালের। তাঁকে সরিয়ে নরেশ উত্তম পটেলকে রাজ্য সভাপতি করেছিলেন অখিলেশ। তিনিই পতাকা তুলেছেন। মুলায়মও ও পথ মাড়াননি। অখিলেশ যখন ঘর গোছাচ্ছেন, তখন বিজেপির অন্দরমহলে টিকিট বিলি নিয়ে নতুন বিবাদ শুরু হয়েছে। গত কালই লখনউতে বিজেপির দফতরে সুলতানপুরের নেতারা বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। বিজেপি সাংসদ যোগী আদিত্যনাথের কুশপুতুলও পোড়ানো হয়। অভিযোগের আঙুল বিজেপির রাজ্য সভাপতি কে শিবপ্রসাদ মৌর্য্যর দিকে। তিনি ও তাঁর আত্মীয় পঙ্কজ মৌর্য্য ঘনিষ্ঠ লোকেদের টিকিট দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। যারা বিজেপির দলের লোকও নন, বহিরাগত। কেশব-শিবিরের দাবি, কিছু ক্ষেত্রে বহিরাগতদের প্রার্থী দেওয়া হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তাঁদের জেতার আশা রয়েছে বলেই ওই সিদ্ধান্ত। তাতেও ক্ষোভ কমেনি। রায়বরেলী, কানপুর, গোরখপুর, দেওড়িয়া, কুশীনগরে বিজেপির রাজ্য সভাপতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। আজকেও লখনউতে বিজেপির দফতরে বিক্ষোভ দেখান দলের একাংশ। টিকিট না পাওয়ার নালিশ জানাতে সুন্দরলাল দীক্ষিত ও রামবাবু দ্বিবেদী নামের দুই নেতা কেশবপ্রসাদ মৌর্য্যর গাড়ির সামনেই শুয়ে পড়েন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mukhtar Ansari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE