E-Paper

জনজাতি কেন্দ্রে সৈফ, সীমাঞ্চলে অন্য ধারা

নদীর ধারের মনিহারিতে অন্য এক লড়াইয়ে নেমেছেন সৈফ আলি খান। নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগে তাঁর অর্ধেক লড়াই জেতা হয়ে গিয়েছে। বাকিটা সচেতনতা তৈরি ও অধিকার আদায়ের।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৫ ০৬:৫৮
মনিহারির পথে প্রচারে সৈফ আলি খান।

মনিহারির পথে প্রচারে সৈফ আলি খান। —নিজস্ব চিত্র।

ফেরি পার করলে ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ। গঙ্গা আর কোসি নদীর সাঁড়াশি আক্রমণে বন্যা এবং ভাঙন প্রায় নিয়মিত ঘটনা। ছোট্ট শহরে বিপজ্জনক ভাবেই বাঁচতে অভ্যস্ত লোকে।

নদীর ধারের মনিহারিতে অন্য এক লড়াইয়ে নেমেছেন সৈফ আলি খান। নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগে তাঁর অর্ধেক লড়াই জেতা হয়ে গিয়েছে। বাকিটা সচেতনতা তৈরি ও অধিকার আদায়ের। হাতে ৮৯ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পত্তি এহং ঘড়ি চিহ্ন নিয়ে ভোটের ময়দানে নেমে যাওয়া সৈফ চান, তাঁর পথ ধরে অধিকার বুঝে নিক অন্যেরাও।

তফসিলি জনজাতির জন্য সংরক্ষিত মনিহারি আসনে এ বার প্রার্থী ২৮ বছরের মুসলিম যুবক সৈফ! হিন্দি বলয়ে জনজাতি আসনে মুসলিম প্রার্থী হওয়ার ঘটনা কখনও ঘটেছে কি না, মনে করতে পারছেন না কেউ! মানতেও চাইছেন না অনেকেই। মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়ে যেমন কংগ্রেসের বর্তমান বিধায়ক, প্রাক্তন আইপিএস মনোহর প্রসাদ সিংহ সৈফের প্রার্থী-পদ চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। মুসলিম প্রার্থী এসটি শংসাপত্র নিয়ে এসেছেন, মেনে নিতে ধাক্কা লাগে বৈকি! আপত্তি অবশ্য টেকেনি। এনসিপি-র প্রার্থী হয়ে বৈদ্যুতিন ভোট-যন্ত্রে নাম ও ছবি তুলে ফেলেছেন সৈফ।

পাশের পশ্চিমবঙ্গে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) তালিকায় কেন মুসলিম গোষ্ঠীকে রেখে সংরক্ষণ দেওয়া হয়েছে, সেই প্রশ্ন তুলে বিস্তর হইচই পাকিয়েছেন বিজেপি নেতারা। কাটিহারের এই ছোট্ট শহরেও তাঁদের ভূমিকা একই। সৈফ তাঁদের জন্য বলছেন, ‘‘সংবিধানটা একটু ভাল করে পড়ে নিলেই এর উত্তর পাওয়া যায়! আমরা যেমন বানজ়ারা সম্প্রদায়ভুক্ত, যারা এক সময়ে ঘুরে ঘুরে জীবিকা নির্বাহ করত। কোনও এক সময়ে আমাদের পূর্বজেরা ইসলাম ধর্ম নিয়েছিলেন। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকা এই ধরনের জনগোষ্ঠী ধর্মান্তরিত হলে তাদের অনগ্রসরতা অস্বীকার করা যায় না। ছত্তীসগঢ়ে কিছু আদিবাসী গোষ্ঠী খ্রিস্টান হয়েছে কিন্তু তারা জনজাতিই আছে।’’ সৈফ জানাচ্ছেন, নানা রকম আপত্তির মুখে আইনি যুক্তির জোরেই কাটিহারের তৎকালীন জেলাশাসক তাঁকে এসটি শংসাপত্র পেতে সাহায্য করেছিলেন।

মনােনয়ন জমা দেওয়ার সময়ে সৈফ আলি খান।

মনােনয়ন জমা দেওয়ার সময়ে সৈফ আলি খান। —নিজস্ব চিত্র।

জাত-পাতের রাজনীতিতে বিভক্ত বিহারের ২৪৩ বিধানসভা আসনের মধ্যে তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত ৩৮টি আর জনজাতির জন্য সংরক্ষিত মাত্র দু’টি আসন। মনিহারি এবং কাটোরিয়া। সৈফের আক্ষেপ, ‘‘যাদব আর মুসলিম সমর্থন নিয়ে এত দূর এগোনোর পরে আরজেডি কিন্তু আমার পাশে দাঁড়াতে চায়নি। প্রশান্ত কিশোরের জন সুরাজের কাছে গিয়েছি, ওরাও যুক্তি শোনেনি। শেষ পর্যন্ত এনসিপি ভোটে লড়ার সুযোগ দিয়েছে।’’ কংগ্রেস বিধায়ক তথা প্রার্থী মনোহর প্রসাদ অবশ্য জানাচ্ছেন, সৈফের প্রথম শংসাপত্র বাতিল হয়েছিল, তাই তিনি মনোনয়নে আপত্তি তুলেছিলেন। প্রশাসনের কাছে পুরো তথ্য জেনে সে আপত্তি প্রত্যাহারও করে নিয়েছেন।

নৌকো, ভ্যানের পাশাপাশি পায়ে হেঁটে এলাকায় ঘুরছেন সৈফ। তাঁর এলাকায় শেরশাবাদী মুসলিম ভাল সংখ্যায়। যাঁদের উপরে আবার বঙ্গের প্রভাব রয়েছে। তবে কাটিহার, অররিয়া, কিসানগঞ্জ ও পূর্ণিয়া মিলে সীমাঞ্চলের যে ২৪ আসন, সেখানে মুসলিমদের বড় অংশই বিভক্ত এবং কেউ কেই সৈফের মতোই আক্ষেপ করছেন। প্রবীণ বাসিন্দা নূর আলমের কথায়, ‘‘লালুপ্রসাদ অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর থেকে আরজেডি আর মুসলিমদের গুরুত্ব দেয় না। মাল্লাদের থেকে উপমুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী ঘোষণা হল, মুসলিমদের জন্য হল না!’’ বিহারে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ১৭.৮% আর মাল্লা ২.৬%, মনে করিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। নূর বলে চলেন, ‘‘এখানে আসাদউদ্দিন ওয়েইসি রোজ রোজ এসে প্রচার করছে। আমরা বুড়োরা জানি, ওঁদের এমআইএম আর একটা ছোট আরএসএস! কিন্তু তরুণ ছেলে-মেয়েরা ওয়েইসির কথা শুনছে।’’ সম্মতি আসে চায়ের দোকানের জটলা থেকে।

বিভক্ত এই সীমাঞ্চলে অধিকারের পতাকা নিয়ে দুই নদীর মতোই ধারা মিলিয়েছেন জনজাতি মুসলিম এক প্রার্থী।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Saif Ali Khan Bihar Assembly Election 2025 Bihar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy