E-Paper

ধনখড়-বিদায়ের সূত্রপাত লুকিয়ে জামাই-বৃত্তান্তেই

দিন দশেক কেটে গিয়েছে জগদীপ ধনখড় উপরাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তারপর থেকে তিনি এক বারও মুখ খোলেননি। প্রকাশ্যেও আসেননি। মোদী সরকার তথা বিজেপিও ধনখড়কে বিদায়ী সংবর্ধনা বা তাঁর সম্মানে নৈশভোজে উদ্যোগী হয়নি।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২৫ ০৯:১৫
জগদীপ ধনখড়।

জগদীপ ধনখড়। —ফাইল চিত্র।

মরুরাজ্য রাজস্থানে লুকিয়ে রয়েছে উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে জগদীপ ধনখড়ের ইস্তফার রহস্য!

দিন দশেক কেটে গিয়েছে জগদীপ ধনখড় উপরাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তারপর থেকে তিনি এক বারও মুখ খোলেননি। প্রকাশ্যেও আসেননি। মোদী সরকার তথা বিজেপিও ধনখড়কে বিদায়ী সংবর্ধনা বা তাঁর সম্মানে নৈশভোজে উদ্যোগী হয়নি। দিল্লির রাজনৈতিক শিবির সূত্রের খবর, বিজেপির সঙ্গে ধনখড়ের ‘তিক্ততা’-র শুরু গত লোকসভা নির্বাচনের সময়, ধনখড়ের রাজ্য রাজস্থান থেকেই। আবার রাজস্থানেই এই ‘তিক্ততা’ চরমে উঠেছিল।

কী নিয়ে এই তিক্ততা?

জগদীপ ধনখড়ের দাদা রণদীপ ধনখড়ের জামাই রাহুল কাসবাঁ ২০১৪ থেকেই রাজস্থানের চুরুর সাংসদ ছিলেন। কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনের সময় বিজেপি তাঁকে প্রার্থী করেনি। রাজস্থানের বিজেপির প্রভাবশালী নেতা রাজেন্দ্র রাঠোর তার আগে বিধানসভা নির্বাচনে চুরুর অন্তর্গত বিধানসভা কেন্দ্র তারানগর থেকে হেরে যান। রাঠোরের সন্দেহ হয়, ধনখড় পরিবারের কাসবাঁ তাঁকে অন্তর্ঘাত করে হারিয়েছেন। এর পরেই বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের কোপে পড়েন কাসবাঁ। কংগ্রেস সূত্রের দাবি, জগদীপ ধনখড় নিজে প্রবল চেষ্টা করেছিলেন তাঁর দাদার জামাইয়ের টিকিট বাঁচাতে। কিন্তু পারেননি। প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরে দেখা যায়, বিজেপি কাসবাঁকে টিকিট দেয়নি।

এর পরে কাসবাঁ কংগ্রেসের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কংগ্রেস তাঁকে চুরু থেকে প্রার্থী করে। কাসবাঁ বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়ে ফের সংসদে জিতে আসেন। রাজস্থানের রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন, জগদীপ ধনখড় নিজে পরিবারের জামাই কাসবাঁর সঙ্গে কংগ্রেস নেতৃত্বের যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁকে যাতে কংগ্রেস চুরু থেকে প্রার্থী করে, তা-ও নিশ্চিত করেছিলেন। রাজস্থানে অশোক গহলৌতের কংগ্রেস সরকারের আমলে জগদীপ ধনখড়ের দাদা রণদীপ ধনখড়কে রাজস্থান পর্যটন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যানও করা হয়েছিল।

বিজেপি রাজস্থান, হরিয়ানা, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে জাঠ ভোটব্যাঙ্কের মন জয় করতে জগদীপ ধনখড়কে প্রথমে রাজ্যপাল, তার পরে উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ করেছিল। তার ফলে লোকসভা ও রাজ্যসভা, সংসদের দুই কক্ষ পরিচালনার দায়িত্ব রাজস্থানের দুই ভূমিপুত্রের হাতে চলে যায়। উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হয়েছিলেন ধনখড়। তার আগেই লোকসভার স্পিকারের দায়িত্ব পেয়েছিলেন রাজস্থানের কোটার সাংসদ ওম বিড়লা। গত ১২ জুলাই, তাঁর ইস্তফার মাত্র ন’দিন আগে ধনখড় কোটায় গিয়ে সেখানকার কোচিং সেন্টার ‘পোচিং সেন্টার’ হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন। কোটার অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হল ডাক্তারি-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রবেশিকার কোচিং সেন্টার। পরীক্ষার্থীদের আত্মহত্যা নিয়ে সমস্যায় থাকা কোটার কোচিং সেন্টারের প্রধানরা উপরাষ্ট্রপতির এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হন। কংগ্রেস শিবির মনে করছে, সেই ক্ষোভের আঁচ লোকসভার স্পিকারের কাছেও পৌঁছেছিল। তার ফলে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেও ধনখড়ের ‘তিক্ততা’ চরমে উঠেছিল।

রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে আজ মন্তব্য করেছেন, বিদায়ী উপরাষ্ট্রপতি বিরোধীদের সংসদে মুখ খুলতে দিতেন না। কিন্তু তিনি নিজে যখন মন খুলে কথা বলতে শুরু করলেন, তখন তাঁকে হুঁশিয়রি দেওয়া হল। তাঁর উপরে চাপ তৈরি করা হল। খড়্গের মতে, বিজেপি কী ভাবে সমস্ত প্রতিষ্ঠান জবরদখল করেছে, ধনখড়ের ইস্তফা তার প্রমাণ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jagdeep Dhankhar Vice President resignation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy