Advertisement
E-Paper

অঙ্ক জোগাড়ে মরিয়া সীতার ভাগ্যে আজ কী

বুড়ো হাড়ে ভেলকি! সিপিএমের শীর্ষপদের জন্য কুস্তির শেষ রাউন্ডে খেলা জমিয়ে দিলেন দুই ‘বুড়ো’। এক জন ভি এস অচ্যুতানন্দন। অন্য জন এস রামচন্দ্রন পিল্লাই। রবিবার সকালেই সিপিএমের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা হবে। তার আগে আজ দলের যাবতীয় রীতিনীতিকে বিশাখাপত্তনমের সমুদ্রে ছুড়ে ফেলে দিয়ে সীতারাম ইয়েচুরিকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানালেন প্রবীণ নেতা অচ্যুতানন্দন।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৫ ০২:২২
রবিবার বিশাখাপত্তনমে সিপিএমের জনসভা। শহর জুড়ে তারই প্রচার। তবে বক্তার তালিকায় নেই এস আর পিল্লাইয়ের নাম। — নিজস্ব চিত্র।

রবিবার বিশাখাপত্তনমে সিপিএমের জনসভা। শহর জুড়ে তারই প্রচার। তবে বক্তার তালিকায় নেই এস আর পিল্লাইয়ের নাম। — নিজস্ব চিত্র।

বুড়ো হাড়ে ভেলকি!

সিপিএমের শীর্ষপদের জন্য কুস্তির শেষ রাউন্ডে খেলা জমিয়ে দিলেন দুই ‘বুড়ো’। এক জন ভি এস অচ্যুতানন্দন। অন্য জন এস রামচন্দ্রন পিল্লাই।
রবিবার সকালেই সিপিএমের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা হবে। তার আগে আজ দলের যাবতীয় রীতিনীতিকে বিশাখাপত্তনমের সমুদ্রে ছুড়ে ফেলে দিয়ে সীতারাম ইয়েচুরিকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানালেন প্রবীণ নেতা অচ্যুতানন্দন। অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি ছেড়ে বেরিয়ে এসে যে ৩২ জন সিপিএম তৈরি করেছিলেন, সেই দলের একমাত্র জীবিত সদস্য। কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাসে এ এক অভূতপূর্ব ঘটনা।
রবিবার সকালে নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের পরই বিকেলে জনসভা। রামকৃষ্ণ বিচে মঞ্চ বাঁধার কাজ চলছে। রোজ ভোরে এই বিচেই হাঁটতে আসছেন সীতারাম। শহর জুড়ে পোস্টার-ব্যানার। প্রধান বক্তাদের নামের তালিকায় মাত্র চার জন। প্রকাশ কারাট, সীতারাম ইয়েচুরি, বৃন্দা কারাট ও মানিক সরকার। সাধারণ সম্পাদক পদে সীতারাম ইয়েচুরির প্রতিদ্বন্দ্বী এস রামচন্দ্রন পিল্লাইয়ের নাম কোথাও নেই। পিল্লাইয়ের নাম কেন বাদ গেল? পিল্লাই নিজেই জানালেন, ‘‘আমরাই ঠিক করেছি কারা বক্তা হবেন।’’ কিন্তু পার্টি কংগ্রেসের শেষে জনসভায় নতুন সাধারণ সম্পাদক বক্তৃতা দেবেন, এটাই রীতি। তবে কি আগেই সাধারণ সম্পাদক পদের দৌড় থেকে সরে দাঁড়ালেন তিনি? পিল্লাই মুখে বললেন, এমন কোনও দৌড় হচ্ছে না। কিন্তু ইঙ্গিত দিলেন, সাধারণ সম্পাদক হলে মঞ্চে ওঠাটা তুচ্ছ বিষয়। তা সে পোস্টার-ব্যানারে নাম থাকুক, ছাই না থাকুক।
সিপিএমের ইতিহাসে এ এক বিরল পরিস্থিতি। যে কোনও পার্টি কংগ্রেসে নতুন সাধারণ সম্পাদক কে হবেন, তা আগেই সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। এ বারই ব্যতিক্রম। নাটক চলছে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। শনিবার রাতে পলিটব্যুরো বৈঠক। রবিবার সকালে পার্টি কংগ্রেসে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন। তার পর নতুন সাধারণ সম্পাদক ও পলিটব্যুরোর নাম ঘোষণা নিয়ে নাটক ‘ক্লাইম্যাক্স’-এ পৌঁছবে।
কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘‘সাধারণ সম্পাদক পদের লড়াইটা শুধুই ব্যক্তির লড়াই নয়, রাজনৈতিক লাইনের লড়াই। কারাটের মতো পিল্লাইও ভোটের লড়াই ভুলে, কংগ্রেস বা আঞ্চলিক দলের সঙ্গে আঁতাঁতের দরজা বন্ধ করে দলের নিজস্ব শক্তি বৃদ্ধিতে বিশ্বাস করেন। কিন্তু ইযেচুরি দলের শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি পরিস্থিতি অনুযায়ী রাজনৈতিক রণকৌশল বদলে বিশ্বাস করেন। পার্টি কংগ্রেসের আজ যে রাজনৈতিক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, তাতে পিল্লাইয়ের মতেরই প্রতিফলন ঘটেছে। সে দিক থেকে পিল্লাই এগিয়ে। কিন্তু গত ২৫ বছরের রাজনৈতিক রণকৌশলের পর্যালোচনায় কারাট-পিল্লাই প্রথমে মত দিয়েছিলেন, রাজনৈতিক রণকৌশলেই ভুল রয়েছে। সেই মত উড়িয়ে দিয়ে ইয়েচুরি বলেছেন, রণকৌশল নয়, তার রূপায়ণে ভুল। সে দিক থেকে আবার ইয়েচুরি কারাট-পিল্লাইকে পিছনে ফেলেছেন। সব মিলিয়ে সাধারণ সম্পাদক পদের দৌড়ে কে এগিয়ে, তা স্পষ্ট হয়নি।’’
এর মধ্যেই আজ সকালে ইয়েচুরির সঙ্গে দেখা করেন অচ্যুতানন্দন। জানান, তিনি চান সীতারামই নতুন সাধারণ সম্পাদক হোন। কারণ দল চালাতে অপেক্ষাকৃত নতুন মুখ দরকার। তাই তিনি সীতারামেরই জয় চাইছেন। সীতারাম তাঁকে বলেন, তাঁর জয় অচ্যুতানন্দনেরও জয় এবং গোটা দলের জয়। আসল কাণ্ডটা হয় তার পর। অচ্যুতানন্দন বেরিয়ে এসে সীতারামকে সমর্থনের কথা প্রকাশ্যে জানিয়ে দেন।
অচ্যুতানন্দনের কথা শুনে অবশ্য পিল্লাই কোনও মন্তব্য করতে চাননি। কিন্তু সিপিএমের পলিটব্যুরো সূত্রের খবর, এখন অনেক কিছুই নির্ভর করছে কেরলের পলিটব্যুরো সদস্যরা কী করবেন, তার উপর। অচ্যুতানন্দন পলিটব্যুরোয় নেই। কেরল পার্টিতেও তিনি কোণঠাসা। কিন্তু তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী পিনারাই বিজয়ন এস আর পিল্লাইয়ের পক্ষে। সীতারামের পক্ষে নন। পিনারাই আগামী বছর কেরল বিধানসভা ভোটে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে চান। পিল্লাই সাধারণ সম্পাদক পদে বসলে তিনি যথেষ্ট স্বাধীনতা পাবেন। সে ক্ষেত্রে কেরলের নতুন রাজ্য সম্পাদক কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন এবং আর এক নেতা এম এ বেবি কী করবেন, তার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করছে। ইয়েচুরি পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি কারাট-পিল্লাইয়ের রাজ্য কেরলের একাংশের সমর্থন আদায় করতে পারলে দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে যাবেন। তবে এই সব অঙ্কের ভিতরে প্রকাশ কারাটের ভুমিকা বিরাট ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাঁর জোরই বেশি। কাল যে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হবে, বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সেই প্রস্তাবিত তালিকা কারাটই দলের সামনে নিয়ে আসবেন। এত দিন দলের সংগঠনের কাজে থাকা পিল্লাইকে সমর্থন করে এসেছেন প্রকাশ। এখন ইয়েচুরির পক্ষে সমর্থনের অঙ্ক খতিয়ে দেখেই পরের পদক্ষেপ করবেন তিনি।
অনেকেই মনে করছেন, পিল্লাই যদি দেখেন সকলে তাঁকে সমর্থন করছেন না, তা হলে তিনি নিজেই লড়াইয়ে যেতে চাইবেন না। আবার সীতারামও তাঁর পক্ষে ঐকমত্য না হলে বিষয়টাকে ভোটাভুটি পর্যন্ত নিয়ে যেতে চাইবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অচ্যুতানন্দন অবশ্য সীতারামকে আগেভাগে খেলা না ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
সাতাত্তুরে পিল্লাই না বাষট্টির সীতারাম--বিশাখাপত্তনমে বিজয়ের হাসি কে হাসেন, এখন তার অপেক্ষা।

new cpm general secretary V. S. Achuthanandan S. Ramachandran Pillai cpm party congress Sitaram Yechury premangshu choudhuri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy