Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Narendra Modi

Narendra Modi: কেদারে গিয়েও রাজনীতি করায় নিশানায় মোদী

বিজেপি নেতারা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রীর কেদারনাথ সফরে উত্তরাখণ্ডের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশেও রাজনৈতিক ফায়দা মিলবে।

রীতি: কেদারনাথ মন্দিরে পুজো দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার।

রীতি: কেদারনাথ মন্দিরে পুজো দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২১ ০৭:৪৯
Share: Save:

দীপাবলির সকালে তিনি ছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের নওশেরাতে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে। ফৌজি পোশাকে। মুখে ছিল সেনার বীরত্বের জয়গান।

দীপাবলির পরের দিন সকালে তাঁকে দেখা গেল কেদারনাথে। কপালে চন্দন। হাতে আরতির থালা। মুখে ধর্ম, দেশের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যর গুণগান। নরেন্দ্র মোদী আজ কেদারনাথ থেকে অযোধ্যা, কাশী, মথুরাকে এক বিন্দুতে নিয়ে এলেন। মেলালেন শিব, কৃষ্ণ, রামকে।

উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড— উত্তর ভারতের দুই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে আজ প্রধানমন্ত্রী কেদারনাথে দিয়ে আদি শঙ্করাচার্যর মূর্তি স্থাপন করে, তাঁর পুনর্নির্মিত সমাধির উদ্বোধন করেছেন। কী ভাবে ২০১৩-র প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরে তাঁরই নজরদারিতে কেদারনাথের পুনর্নির্মাণ হয়েছে, তার বর্ণনা করেছেন। একই সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় রামমন্দিরের নির্মাণ, বারাণসীতে বিশ্বনাথ করিডর তৈরি ও মথুরায় উন্নয়নের কাজ কী রকম হচ্ছে, তার কাহিনী শুনিয়েছেন।

এর আগে ২০১৯-এ লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের আগে কেদারে গিয়ে ধ্যান করেছিলেন মোদী। তা নিয়ে বিরোধীদের বক্তব্য ছিল, নেহাতই প্রচার পেতে ওই কাণ্ড করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এ বারের কেদারনাথ-সফরের পরে কংগ্রেসের অভিযোগ, তিনি বিজেপির বিপণন করতে কেদারধামে গিয়েছিলেন। মন্দিরে গিয়ে রাজনীতির প্রচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে দুষেছে কংগ্রেস। কেদারনাথে পুজোআচ্চার পরে মন্দিরের সামনেই এক অনুষ্ঠানে মোদী বলেন, “এক সময় আধ্যাত্মিকতাকে, ধর্মকে গৎবাঁধা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা হত।” তাঁর দাবি, “এখন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ধর্মবিশ্বাসের কেন্দ্রগুলি গৌরব ফিরে পেয়েছে।” উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, প্রবীণ কংগ্রেস নেতা হরিশ রাওয়তের অভিযোগ, “প্রধানমন্ত্রী কেদারনাথে রাজনৈতিক বক্তৃতা করেছেন। তাঁর দলের বিপণন করেছেন।”

কংগ্রেস যা-ই বলুক, বিজেপি নেতারা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রীর কেদারনাথ সফরে উত্তরাখণ্ডের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশেও রাজনৈতিক ফায়দা মিলবে। ২০২২-এর গোড়ায় ওই দুই রাজ্যেই বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে অখিল ভারতীয় আখাড়া পরিষদের সমর্থন নিশ্চিত করা যাবে।

প্রধানমন্ত্রীর কেদারনাথ সফরে গিয়ে যখন আদি শঙ্করাচার্যর মূর্তির সামনে ধ্যানে বসেছেন, তখন গোটা দেশে বিজেপি নেতারা শঙ্করাচার্যের ভারত পরিক্রমার সঙ্গে জড়িত ধর্মীয় স্থলগুলিতে ছড়িয়ে পড়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতীয় দর্শন মানব কল্যাণের কথা বলে। জীবনকে পূর্ণতার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখে। আদি শঙ্করাচার্য সমাজের সামনে এই সত্য তুলে ধরেছিলেন।

বিজেপি নেতারা বলছেন, আদি শঙ্করাচার্য বিদেশি শত্রুর মোকাবিলায় হিন্দুদের হয়ে লড়াইয়ের জন্য আখাড়া ব্যবস্থা তৈরি করেছেন। এখন আখাড়ার সংখ্যা চার থেকে তেরোয় পৌঁছেছে। এই সব আখাড়া পরিচালনার জন্য তৈরি হয়েছে অখিল ভারতীয় আখাড়া পরিষদ। শুধু উত্তর ভারত নয়, গোটা দেশেই এই আখাড়াগুলির অনুগামী ছড়িয়ে রয়েছেন। উত্তরপ্রদেশ-উত্তরাখণ্ডের ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী আজ কেদারনাথে দাঁড়িয়ে এই সাধুসন্তদের আস্থা ও আখাড়াগুলির সমর্থন নিশ্চিত করে ফেললেন।

২০১৭-র বিধানসভা ভোটে ৭০ আসনের উত্তরাখণ্ড বিধানসভায় ৫৭টি আসনে জিতে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বকে হিমালয়ের কোলে অবস্থিত এই রাজ্যের সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সামাল দিতে দু’বার মুখ্যমন্ত্রীর মুখ বদল করতে হয়েছে। আজ প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময়ও কেদারে অনেক সাধারণ মহিলা বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন।

ধর্মীয় পর্যটন থেকে আয়ের উপরে নির্ভরশীল উত্তরাখণ্ডের মানুষের মন জয়ে আজ প্রধানমন্ত্রীর বলেছেন, ভবিষ্যতে কেদারনাথে ভক্তরা কেবল-কারে করে পৌঁছে যাবেন। তার কাজ শুরু হয়েছে। হেমকুণ্ড সাহিবের দর্শনের জন্য রোপওয়ে তৈরি হচ্ছে। চারধাম সড়ক প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। জাতীয় সড়কের মাধ্যমে চার ধামকে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। যদিও কেদারে ২০১৩-র বিপর্যয়ের পরেও সেখানে পাহাড়-অরণ্য ধ্বংস করে এ ভাবে প্রকল্প গড়া নিয়ে তীব্র আপত্তি রয়েছে পরিবেশবিদদের। তাঁদের আশঙ্কা, এর ফলে আগামী দিনে আরও বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়বে দেবভূমি। পরিবেশ ধ্বংসের পাশাপাশি সেখানকার মানুষের রুটি-রুজিতেও টান পড়বে।

বিজেপির চিন্তার কারণ হল, উত্তরাখণ্ডে বিজেপি সরকারের পরিবহণ মন্ত্রী যশপাল আর্য সম্প্রতি কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। এ দিকে কংগ্রেসের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়ত সম্প্রতি এআইসিসি-তে পঞ্জাবের দায়িত্ব থেকে রেহাই পেয়ে নিজের রাজ্যে মন দিয়েছেন। উত্তরাখণ্ডের চারধামে দেবস্থান বোর্ড গঠন করতে গিয়েও বিজেপি সরকার পুরোহিত, সাধুসন্তদের ক্ষোভের মুখে পড়েছে। ফলে বিজেপি বেকায়দায় রয়েছে। সেই চাপ কাটিয়ে বিজেপির পালে হাওয়া তুলতেই প্রধানমন্ত্রী আজ কেদারে গিয়ে জনসভা করেছেন বলে কংগ্রেসের অভিযোগ।

উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস নেতা, দলের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য প্রমোদ তিওয়ারির অভিযোগ, “ধর্মীয় স্থলকে রাজনীতির বাইরে রাখা উচিত। সেখানে পুজো-প্রার্থনা করা হয়। কিন্তু চার ধামের এক ধাম কেদারধামে যে ভাবে রাজনৈতিক বক্তৃতা করা হয়েছে, তা প্রধানমন্ত্রীকে শোভা পায় না।’’ তিওয়ারির মতে, এর ফলে আশীর্বাদের বদলে বাবা কেদারনাথের ক্রোধের শিকার হবে বিজেপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Kedarnath
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE