সকালবেলায় সংসদে প্রবেশ করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অপেক্ষমান সাংবাদিকদের দেখে বললেন, ‘‘আজ রবিবার। আজ তো ছুটি নিতে পারতেন।’’
প্রধানমন্ত্রী এসেছেন বিজেপি সাংসদদের প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দিতে। যাঁদের শনি ও রবিবারের ছুটিও কেড়ে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আজ এই বিশেষ কর্মশালার শেষ দিনে যে সমাপ্তি বক্তৃতা দিলেন প্রধানমন্ত্রী, তার পরে বিজেপি সাংসদরা বুঝছেন, তাঁদের আগামী পাঁচ
বছরের ছুটি শেষ! সদ্য দু’মাস হয়েছে লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এখন থেকেই পরের লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিতে বললেন তাঁদের!
গত দু’দিনের কর্মশালায় সাংসদদের সঙ্গেই বসছেন মোদী। যাঁরা যাঁরা তাঁর কথার নোট নিচ্ছেন, তাঁদের বলছেন, ‘‘ভাল করে শুনুন, মগজে রাখুন বিষয়গুলি।’’ আর আজকের সমাপ্তি বক্তৃতায় কোনও রাখঢাক না করেই বললেন, ‘‘এখন থেকেই ২০২৪ সালের প্রস্তুতি শুরু করে দিন। মনে কোনও অহঙ্কার আনবেন না। একজন সাধারণ কর্মীর মতোই কাজ করুন। যে বুথ আর আসনে হেরেছেন, এখন থেকেই সেখানে জোর দিন, যাতে সেখানে জয় নিশ্চিত হয়। আত্মবিশ্বাসই সব, শৃঙ্খলা মেনে চলুন।’’
বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রী টুইট করে বলেন, ‘‘সাংসদদের কার্যশালার দ্বিতীয় দিনটিও ফলপ্রসূ হয়েছে। আরও শক্তি দিয়ে কী করে ভারতের উন্নতির জন্য কাজ করা যায়, সংগঠনকে আরও মজবুত করা যায়, সে সব বিষয় তুলেছি।’’ সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী সাংবাদিকদের জানান, ‘‘নেতিবাচক মানসিকতা ছেড়ে ইতিবাচক মনোভাব রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। আজ যাঁরা সঙ্গে আছেন অথবা নেই, সে সব কথা না ভেবে ‘টিম স্পিরিট’-এর মাধ্যমে সকলের মন জয়ের কাজ করতে হবে। কর্মশালায় যা শেখানো হয়েছে, তা মাথায় রেখে এগোতে হবে।’’
অমিত শাহ আজ ব্যস্ত কাশ্মীর নিয়ে। তাই সংসদে নিজের ঘরে থাকলেও দু’পা হেঁটে সারা দিনে একবারও কর্মশালায় আসেননি। কিন্তু ছিলেন প্রধানমন্ত্রী ও অন্যরা। চেনা অনুপস্থিতির মধ্যে ছিলেন অভিনেতা-সাংসদ সানি দেওল। দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ছিলেন গোটা দিন। তিনি অমিত শাহের বই উদ্বোধন করেছেন, ভারতের রাজনীতিতে বিজেপির অবদান নিয়ে বলেছেন সাংসদদের। দলের সংগঠনের দায়িত্ব পাওয়া নতুন নেতা বি এল সন্তোষ বিজেপির সদস্য অভিযান ও সংগঠনের কর্মসূচির কথা শুনিয়েছেন সকলকে।
ভোটের জেতার পরে সংসদের সেন্ট্রাল হলেই সাংসদদের প্রধানমন্ত্রী শুনিয়েছিলেন, কী করবেন, কী করবেন না। সাধারণ মানুষের মতো বিমানবন্দরেও সাংসদরা যাতে লাইন দিয়ে যান, শরীর তল্লাশি করতে দেন, সে সব বলেছিলেন। আজও ফের বললেন। বিরোধীদের সঙ্গে বিবাদে অযথা শক্তি অপচয় না করে জনতার কাজে মন দেওয়ার দাওয়াই দেন। আর সাংসদদের মুখে লাগাম কষার জন্য বলেন, ‘‘সব কিছু বলার একটি সময় আছে। ঠিক সময়ে বলুন।’’
আর সবার শেষে পরিবারতন্ত্র নিয়ে বলেন, ‘‘পরিবারতন্ত্রে মন দেবেন না। কিন্তু পরিবারের খেয়াল রাখুন। নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন।’’ প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনে বিজেপির অনেকেই মুগ্ধ। কিন্তু মনের ভিতরে প্রশ্নও অনেকের, ‘‘পরিবারের খেয়াল রাখার সময় দিচ্ছেন কোথায়!’’