এসআইআর বা ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন নিয়ে আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে কোনও আলোচনায় রাজি হবে না নরেন্দ্র মোদী সরকার। তার বদলে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনকে পাখির চোখ করে জাতীয়তাবাদের আবেগ উস্কে দিয়ে মোদী সরকার সংসদে ‘বন্দে মাতরম্’-এর সার্ধশতবর্ষ নিয়ে আলোচনা করাবে। সেই আলোচনায় কংগ্রেসের দিকে নতুন করে সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগ তুলে বলা হবে, মুসলিমদের চাপে কংগ্রেস ১৯৩৭ সালে ‘বন্দে মাতরম্’-এর গুরুত্বপূর্ণ স্তবক বাদ দিয়েছিল। একই সঙ্গে তৃণমূল সংসদে এসআইআর-এর বিরুদ্ধে সরব হলে বিজেপি শিবির পাল্টা অভিযোগ তুলবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল অনুপ্রবেশকারীদের রক্ষাকরতে চাইছে।
আগামী সোমবার, ১ ডিসেম্বর থেকে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে। তার আগে রবিবার মোদী সরকার সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছে। একই দিনে কংগ্রেসও রণকৌশল ঠিক করার জন্য সংসদীয় দলের বৈঠকে বসবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা ইতিমধ্যেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের বাড়িতে রণকৌশল বৈঠক করেছেন। সেখানেই ঠিক হয়েছে, পরমাণু বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে আমেরিকার পরমাণু চুল্লি আমদানির রাস্তা খোলা, বিমা ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ বিদেশি লগ্নি, উচ্চশিক্ষায় একটিই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মতো দশটি বিল পেশ করা হবে। তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার সংসদে ‘বন্দে মাতরম্’-এর সার্ধশতবর্ষ নিয়ে আলোচনা হবে। সেখানে বন্দে মাতরম্-এর সমস্ত স্তবকই সংসদে তুলে ধরবে মোদী সরকার। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘বন্দে মাতরম্’-এর সার্ধশতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ স্তবক বাদ দেওয়ার জন্য জওহরলাল নেহরুকে নিশানা করেছিলেন। বলেছিলেন, ১৯৩৭ সালে কংগ্রেসের অধিবেশনে জাতীয় গান ‘বন্দে মাতরম্’-এর শুধুমাত্র প্রথম দু’টি স্তবক গ্রহণ করে, বাকি গুরুত্বপূর্ণ স্তবক বাদ দিয়ে দেশভাগের বীজ বপন করা হয়েছিল। এরপরে আরএসএসের শতবর্ষ উপলক্ষে মোহন ভাগবতের বক্তৃতা অনুষ্ঠানে বন্দে মাতরম্-এর ছ’টি স্তবকই গাওয়া হয়।
তৃণমূল কংগ্রেস ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে নির্বাচন কমিশনের সার্বিক ভূমিকা নিয়ে আলোচনার দাবি তুলবে। সেখানে এসআইআর-এর প্রসঙ্গ তুলে ধরা হবে। তৃণমূলের সঙ্গে ডিএমকে, সমাজবাদী পার্টিও একই দাবি তুলবে। কিন্তু মোদী সরকারের সূত্রের বক্তব্য, ভোটার তালিকায় সংশোধন স্বাধীন সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন কমিশনের কাজের মধ্যে পড়ে। তা নিয়ে সংসদে কাটাছেঁড়া করা সম্ভব নয়।
এর আগে সংসদের বাদল অধিবেশনের সময়ে বিহারের এসআইআর নিয়ে আলোচনার দাবির সামনেও মোদী সরকার একই অবস্থান নিয়েছিল। এখনও সরকারের যুক্তি, নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে আলোচনা করা গেলেও সংসদে নির্বাচন কমিশনের প্রশাসনিক কাজ নিয়ে আলোচনা করা যায় না।সংসদের অধিবেশনের আগে রাজ্যসভার নিয়মমাফিক রুটিন বুলেটিনে প্রতিবারের মতোই বলা হয়েছিল, সংসদে ‘বন্দে মাতরম্’, ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান দেওয়া চলবে না। তা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে কংগ্রেস প্রশ্ন তোলায় মোদী সরকারের যুক্তি, ২০১২ সালে ইউপিএ সরকারের সময়েই এই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। সে সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস ইউপিএ সরকারের শরিক ছিল।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)