Advertisement
E-Paper

সংরক্ষণ চেয়ে মিলল বেটি বাঁচাও

ওঁরা এসেছিলেন নিজেদের দাবি নিয়ে। উল্টে অনুরোধ করে বসলেন প্রধানমন্ত্রী। বললেন, আপনাদের দাবি বিবেচনা করে দেখব। কিন্তু তার আগে আমার কথাটাও মেনে নিতে হবে। ‘না’ শুনব না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪৫

ওঁরা এসেছিলেন নিজেদের দাবি নিয়ে। উল্টে অনুরোধ করে বসলেন প্রধানমন্ত্রী।

বললেন, আপনাদের দাবি বিবেচনা করে দেখব। কিন্তু তার আগে আমার কথাটাও মেনে নিতে হবে। ‘না’ শুনব না।

হকচকিয়ে যান জাঠ নেতারা। জাঠেদের সংরক্ষণের দাবি নিয়ে অনেক দিন ধরেই সরব তাঁরা। এ বারে হরিয়ানায় বিজেপি সরকার আসার পর তাঁরা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন নিজেদের দাবি নিয়ে। আলোচনা সবে শুরু হবে, তখনই নরেন্দ্র মোদী জাঠ নেতাদের বলেন, দাবির কথা শুনব। কিন্তু হরিয়ানায় আপনাদের এলাকাতেই তো সব থেকে বেশি কন্যাভ্রূণ হত্যা হয়। সেটা আটকানোর দায়িত্ব কিন্তু আপনাদেরই নিতে হবে।

এর পরে দু’সপ্তাহও কাটেনি। জাঠ নেতারা খাপ সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ মেনে কন্যাসন্তান বাঁচাতে বিশেষ অভিযান শুরু করা হবে। এর মধ্যে অবশ্য আর একটি ঘটনাও ঘটে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টে ওবিসির অধীনে জাঠদের সংরক্ষণের জন্য রিভিউ পিটিশন দায়ের করেছে। তার পরেই উৎসাহিত নেতারা প্রধানমন্ত্রীর মন রাখতে তৎপর হলেন। অখিল ভারতীয় জাঠ মহাসভার সভাপতি ওম প্রকাশ মান বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে সংরক্ষণের ব্যাপারে উদ্যোগী হয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর কথা রেখেছেন। এ বারে আমাদের দায়িত্ব পালনের পালা। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ মেনে আমরা ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ অভিযান শুরু করছি ১৮ এপ্রিল থেকে।’’

হরিয়ানার বিজেপির নেতা ক্যাপ্টেন অভিমন্যুও জাঠদের ওই প্রতিনিধি দলে সামিল হয়েছিলেন। তিনি বলেন, হরিয়ানার ১২টি জেলায় লিঙ্গবৈষম্য ভয়াবহ আকার নিয়েছে। বহু বছরের মনোভাবই এ জন্য দায়ী। প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত ভাবে অনুরোধ করায় এ বারে সেই মানসিকতা বদলের চেষ্টা হচ্ছে। খাপ সদস্যরা স্থির করেছেন, প্রতিটি গ্রামে বিশেষ টিম গড়ে তোলা হবে। কন্যাভ্রূণ হত্যা বন্ধ করতে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রচার করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকার তো বটেই, রাজ্য সরকারও এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে। সরকার গ্রামে-গ্রামে যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে, তাতে সামিল হবেন জাঠ নেতারা।

কন্যাভ্রূণ হত্যা বন্ধ করতে তিনি কী ভাবে জাঠ নেতাদের অনুরোধ করেছেন, সে কথা বেঙ্গালুরুতে বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকে যোগ দিতে আসা নেতাদের জানান মোদী। এই সূত্র ধরেই প্রধানমন্ত্রী বিজেপির নেতাদের ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ অভিযানে শরিক হওয়ার আবেদন জানান। বিজেপির এক শীর্ষ সূত্রের মতে, এর পিছনে দলের অন্য রণকৌশলও আছে। বিজেপি ও সঙ্ঘ- উভয়ে মিলেই স্থির করেছে, কট্টর হিন্দুত্বের প্রচার থেকে সরে এসে এখন সামাজিক ভিত বাড়ানোর উপরে বেশি জোর দেওয়া হবে। নরেন্দ্র মোদী থেকে মোহন ভাগবত, গোটা গেরুয়া শিবির এখন এই কৌশলে ভর করেই চলছে।

সে কারণেই নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ সম্প্রতি দলের জন্য এমন কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন, যেখানে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে সামাজিক কাজে দলের কর্মী-নেতাদের সামিল হতে বলা হয়েছে। সমাজে অস্পৃশ্যতা বন্ধের অভিযানে নেমেছে সঙ্ঘ। ক্ষমতায় আসার পর থেকে স্বচ্ছতা অভিযান, গঙ্গা সাফাইয়ের মতো আপাত-অরাজনৈতিক কর্মসূচি হাতে নিয়ে সমাজের বিভিন্ন বর্গকে সামিল করতে চেয়েছেন মোদী। এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ভিত বাড়ানোর কৌশল নিয়েছেন তিনি। সেই পরিধি আরও বাড়াতে চান তিনি।
দেশের একশোটি জেলাকে বেছে নিয়ে ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ অভিযান শুরু হয়েছে। যার মাধ্যমে জাঠ ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যেও নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে তৎপর বিজেপি নেতৃত্ব। সঙ্ঘও এখন হিন্দুদের সংগঠিত করতে সামাজিক কর্মসূচির আশ্রয় নিচ্ছে। মোদী সরকারের উন্নয়নের গতি যাতে ধাক্কা না খায়, সে জন্য সঙ্ঘ ও বিজেপি— কোনও পক্ষই হিন্দুত্ব নিয়ে অহেতুক বিতর্ক চাইছে না।

jat leaders prime minister narendra modi beti bachao beti padhao Amit Shah BJP NDA abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy