প্রতীকী ছবি।
নতুন সংসদ ভবন নির্মাণ ও দিল্লির রাজপথের দু’পাশের এলাকা বা সেন্ট্রাল ভিস্টা ঢেলে সাজাতে মোদী সরকার প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করছে। অথচ সেই টাকা খরচ করেই ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের সিংহভাগকে কোভিডের প্রতিষেধক দেওয়া যেত। যার পুরো দায়টাই কেন্দ্র এখন রাজ্যের ঘাড়া চাপিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোদী সরকারকে বুঝতে হবে ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের সুস্থ রাখাটা অর্থনীতির স্বার্থেই দরকার। একে সামাজিক ক্ষেত্রে খরচ হিসেবে না দেখে অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার দাওয়াই হিসেবে দেখা দরকার।
মোদী সরকার জানিয়ে দিয়েছে, ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের জন্য রাজ্য সরকার বা বেসরকারি হাসপাতালকে সিরাম বা ভারত বায়োটেকের থেকে সরাসরি কোভিশিল্ড বা কোভ্যাক্সিন কিনে নিতে হবে। তার পরে রাজ্যগুলি চাইলে বিনামূল্যে টিকা দিতে পারে। সিরাম ইনস্টিটিউট প্রথমে রাজ্যের জন্য কোভিশিল্ডের প্রতি ডোজ়-এর জন্য ৪০০ টাকা দাম ঠিক করলেও গত কাল তা কমিয়ে ৩০০ টাকা করেছিল। আজ ভারত বায়োটেকও রাজ্যের জন্য কোভ্যাক্সিনের দাম ৬০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৪০০ টাকা করেছে। অবশ্য বেসরকারি হাসপাতালের জন্য প্রতিষেধকের দাম কমায়নি তারা।
আজ কংগ্রেসের রাহুল গাঁধী ফের দাবি তুলেছেন, দেশের সকলের জন্য বিনামূল্যে প্রতিষেধকের বন্দোবস্ত করতে হবে। এ দিন সকাল পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ৭০ লক্ষ ১৮-৪৪ বছর বয়সি মানুষ কোউইনে নাম তুলেছেন। কিন্তু টিকার নিশ্চয়তা মেলেনি। প্রায় সব রাজ্যই জানিয়ে দিয়েছে, ১ মে থেকে টিকাকরণ শুরু করা যাবে না।
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব সুজাতা রাওয়ের মতে, বিনামূল্যে প্রতিষেধকের পাশাপাশি দেশের জনসংখ্যার একটা বড় অংশকে প্রতিষেধক দিয়ে যাতে সংক্রমণ রোখা যায়, সেটাও সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত। এই ‘হার্ড ইমিউনিটি’র লক্ষ্যে পৌঁছতে কেন্দ্র যদি ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সি মানুষের ৭০ শতাংশকেও বিনামূল্যে প্রতিষেধক দেয়, তার জন্য ২০ থেকে ২৬ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হওয়া উচিত নয়। এই খরচ অবশ্য শুধুই প্রতিষেধকের জন্য। তার সঙ্গে টিকা পরিবহণ, মজুতের খরচ থাকবে। কিন্তু বিরোধীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ইতিমধ্যেই বাজেটে প্রতিষেধকের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। প্রয়োজনে আরও বরাদ্দ হবে বলেও জানিয়েছেন।
সুজাতার ব্যাখ্যা, কেন্দ্র এখন ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সকলকেই প্রতিষেধক নেওয়ার ছাড়পত্র দিয়েছে। দেশে ১৮ বছরের বেশি বয়সিদের সংখ্যা প্রায় ৯৬ কোটি। এর মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মী, ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার, ৪৫ বছরের বেশি বয়সিদের প্রায় ৩৪ কোটি মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়ার খরচ কেন্দ্রই নেবে। এঁদের অনেকে ইতিমধ্যেই প্রতিষেধক পেয়ে গিয়েছেন। বাকি প্রায় ৬২ কোটি মানুষের মধ্যে কেন্দ্র যদি ৭০ শতাংশ মানুষকেও প্রতিষেধক দিতে চায়, তা হলে প্রায় ৪৪ কোটি মানুষকে প্রতিষেধক দিলেই
চলে। এঁদের অনেকে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে প্রতিষেধক নেবেন। কিছু প্রতিষেধক নষ্ট হবে। সুজাতার হিসেবে, ধরা যাক, ৮০ কোটি ডোজ় প্রতিষেধক দরকার। সব মিলিয়ে ৪৫ বছরের বেশি বয়সি ও ৪৫ বছরের কমবয়সিদের ৭০ শতাংশ মানুষের জন্য ১৩০ কোটি ডোজ় প্রতিষেধক দরকার। কেন্দ্র যদি ১৫০ টাকা দরে প্রতিষেধক কেনে, তা হলেও এই ১৩০ কোটি ডোজ় কিনতে ১৯,৫০০ কোটি টাকা দরকার। টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থার মুনাফার কথা ভেবে ২০০ টাকা দর ঠিক হলেও ২৬ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য শমিকা রবির মতে, এই অতিমারি সরকারের জন্য একটা জরুরি বার্তা। কারণ এত দিন স্বাস্থ্য পরিষেবাকে সামাজিক ক্ষেত্র বলে অবহেলা করা হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যক্ষেত্র অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যক্ষেত্রকে অর্থনীতির ভিত হিসেবে দেখলে সেখানে আরও বরাদ্দ করতে হবে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের বক্তব্য, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা সত্বেও মোদী সরকার অতিমারির বছরে বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ করেনি। চলতি বছরেও স্বাস্থ্য খাতে যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ হয়নি।
অর্থনীতির মূল্যায়নকারী সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, কোভিডের সংক্রমণ ফের বাড়তে শুরু করায় আবার অর্থনীতিতে ধাক্কা লাগবে। গোটা দেশে লকডাউন জারি না হওয়ায় হয়তো গত বছরের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে না। কিন্তু বিভিন্ন রাজ্য নিজের মতো লকডাউন করায় অর্থনীতির গতিতে হোঁচট লাগবেই। অর্থনীতিবিদদের মতে, স্বাস্থ্য খাতে আরও বরাদ্দ বাড়িয়ে কোভিডের দ্বিতীয় ধাক্কা নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে অর্থনীতিতে ধাক্কাও সামাল দেওয়া যেত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy