Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Narendra Modi

Narendra Modi: গলা বসে গিয়েছে, ক্লান্ত শরীর, মোদীর সাড়ে চার মাসের বিরামহীন প্রচার কি ‘অপারেশন-২৪’

আজ মেডিক্যাল কলেজ, তো কাল পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ে। কিছু বাদ নেই। যেখানেই নতুন প্রকল্প, সেখানেই নরেন্দ্র মোদী। হয় ফিতে কাটা, না হলে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন।

শেষবেলার প্রচার। শনিবার বারাণসীতে নরেন্দ্র মোদী।

শেষবেলার প্রচার। শনিবার বারাণসীতে নরেন্দ্র মোদী। ছবি— পিটিআই।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২২ ০৬:৩২
Share: Save:

গলা যে বসে গিয়েছে। এত পরিশ্রম কি শরীরে সয়!

সওয়ালেই সয়। শরীরের নাম মহাশয়। আর এই মহাশয়ের নাম তো নরেন্দ্র মোদী।

সোমবার উত্তরপ্রদেশে সপ্তম ও শেষ দফার ভোটগ্রহণ। আজ সন্ধ্যা ছ’টায় প্রচারে ইতি পড়ল। সেই সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর উত্তরপ্রদেশের প্রায় সাড়ে চার মাসের ভোট প্রচারেও ইতি পড়ল। বিজেপি নেতারাও মানছেন, ২০১৪ ও ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন বাদ দিলে, প্রধানমন্ত্রী আর কোনও রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে এত সময় দেননি। পশ্চিমবঙ্গেও নয়।

উত্তরপ্রদেশে প্রচারের ঢাকে কাঠি পড়েছিল গত বছর দুর্গাপুজো মিটতেই। বিজয়া দশমী ছিল ১৫ অক্টোবর। তারপর ২০ অক্টোবর নরেন্দ্র মোদী গিয়েছিলেন কুশীনগরের বিমানবন্দর উদ্বোধন করতে। তারপর থেকেই চলছে। আজ মেডিক্যাল কলেজ, তো কাল পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ে। পরশু গোরক্ষপুরের এমস, তার পরের দিন বাহরাইচের সেচের খাল। কিছু বাদ নেই। যেখানেই নতুন প্রকল্প, সেখানেই নরেন্দ্র মোদী। হয় ফিতে কাটা, না হলে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন।

অমিত শাহ আগেই বলে দিয়েছিলেন, বাইশের ভোটে উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ জিতলে চব্বিশের লোকসভায় নরেন্দ্র মোদীর জয়ের পথ তৈরি হবে। বিরোধীরা তাই বলছেন, যোগী আদিত্যনাথকে জেতাতে নয়, নরেন্দ্র মোদী আসলে নিজে তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য পরিশ্রম করছেন। কারণ, উত্তরপ্রদেশে হারলেই নতুন করে বিজেপি-বিরোধী আবহ তৈরি হবে। পশ্চিমবঙ্গের ভোটের পরে যেমনটা হয়েছিল।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি হারলেও নরেন্দ্র মোদীর উপরে দায় এসে পড়েনি। কারণ, বাংলার ভোটের মাঝখানেই কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় তিনি আর প্রচারে যেতে পারেননি। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে তা হয়নি। মোদী নিজেই রাজ্যের সাংসদ। কোভিডের তৃতীয় ঢেউ এলেও প্রচারে তেমন বাধা পড়েনি। এমনকি, রাশিয়ার হামলার পরে ভারতীয় পড়ুয়ারা ইউক্রেনে আটকে পড়লেও মোদী প্রচার থামাননি। বিরোধীদের গঞ্জনা সত্বেও। উল্টে ইউক্রেনে উদ্ধার অভিযানের বড়াই করেও রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করেছেন। বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতার বক্তব্য, ‘‘সন্ত্রাসবাদ, জাতীয়তাবাদ, অযোধ্যা, রামচন্দ্র, ইউক্রেন, টিকা— নরেন্দ্র মোদী হাতের সব তাস খেলে দিয়েছেন। ফলে বিজেপি হেরে গেলে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা নিয়েও বিরোধীরা প্রশ্ন তোলার সুযোগ পেয়ে যাবেন।’’

কেন্দ্রীয় স্বরা‌ষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অবশ্য উল্টো দাবি করেছেন। তাঁর মন্তব্য, নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা এখন সর্বোচ্চ শিখরে। ভোটে তার সরাসরি ফায়দা পাচ্ছে বিজেপি। শনিবারও মোদী বারাণসীতে ইউক্রেনের উদ্ধার অভিযানের কথা বলেছেন। বিরোধীরা এর অন্ধ-বিরোধিতা করছে বলে দুষেছেন। শাহের যুক্তি, ‘‘পড়ুয়াদের উদ্ধারে মোদীজির তৎপরতার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে ভোটে। দেশে ফেরা পড়ুয়ারা মোদীজিকে শুধু ধন্যবাদই জানাননি। নির্বাচনে জয়ের আগাম অভিনন্দনও জানিয়ছেন।’’

নির্বাচন কমিশন ৮ জানুয়ারি উত্তরপ্রদেশ ও বাকি চার রাজ্যের ভোট ঘোষণা করেছিল। তার আগেই জনসভার সংখ্যার মাপকাঠিতে অখিলেশ যাদব, প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরাকে অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন মোদী। ভোট ঘোষণার পরে বিজেপির মঞ্চ থেকে তাঁর কেন্দ্রের সরকার, রাজ্যের যোগী সরকারের গুণগান, ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারের সুবিধা প্রচার করেছেন মোদী। বিজেপি নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়। উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব, মণিপুর, গোয়া ভোটের প্রচারেও প্রধানমন্ত্রী যথেষ্ট সময় দিয়েছেন।

আজ প্রচারপর্ব শেষ হওয়ার আগে নিজের লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীতে ঘাঁটি গেড়েছিলেন মোদী। গতকাল ছিল রোড শো। রাতে খিড়কিয়া ঘাটের পাপ্পুর দোকানে চায়ে গলা ভেজান। পাশে গোপালের দোকানে গিয়ে মিষ্টি পান মুখে দেন। আবার মাঝরাতে বারাণসী ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে কাজকর্ম দেখতে বেরিয়ে পড়েন। আজ গ্রামীণ বারাণসীতে জনসভা করেছেন। সেখানে ভবিষ্যৎবাণী করেছেন, ‘‘আয়েঙ্গে তো যোগী হি!’’

বিজেপির অনেকের আশঙ্কা, উত্তরপ্রদেশে দল আবার ক্ষমতায় ফিরলেও আসন কমতে পারে। মোদী আজ বারাণসীর বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আলাপচারিতা করেছেন। বিজেপিকে ক্ষমতায় ফেরানোর আর্জি জানিয়ে, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজনের কথাও বলেছেন। তাঁর যুক্তি, সরকার মজবুত হলেই কড়া সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। বৈঠকে হিন্দুস্তানি সঙ্গীতশিল্পী চন্নুলাল মিশ্র থেকে বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির উপাধ্যক্ষ সুধীর জৈন, বারাণসীর বিখ্যাত পানওয়ালা অশ্বিনী চৌরাসিয়া থেকে চা-বিক্রেতা পাপ্পুও হাজির ছিলেন। যাঁর দোকানে গত রাতে মোদী চা খেয়েছিলেন।

কেন প্রধানমন্ত্রীকে নিজের কেন্দ্রে এই ভাবে জনসংযোগ করতে হচ্ছে? বিজেপির একটি সূত্র বলছে, বিজেপির বিধায়কদের গত পাঁচ বছরে জনসংযোগে ঘাটতি ছিল। মোদীকে তা পূরণ করতে হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছিল, উত্তরপ্রদেশে পশ্চিমাঞ্চলে কৃষক আন্দোলন ও সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে রাষ্ট্রীয় লোক দলের জোট হওয়ায় সমস্যা হবে। কারণ, জাঠ, যাদব, ওবিসি, মুসলিম ভোট এককাট্টা হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে যাবে। ভোট এগোতে দেখা গিয়েছে, পূর্বাঞ্চলেও স্বস্তি নেই। সমাজবাদী পার্টি এবার আর শুধু নিজেদের যাদব ও মুসলিমদের পার্টি হিসেবে তুলে ধরেনি। অখিলেশ ছোট ছোট জাতিভিত্তিক দলগুলির সঙ্গে জোট করেছেন। উল্টো দিকে বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, বেওয়ারিশ পশু নিয়ে ক্ষোভ বিজেপির বোঝা। তাই গলা বসে গেলেও নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে প্রচারে ঢিলে দেওয়া সম্ভব হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi UP Election 2022
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE