Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মোদী কি ফের এড়াবেন প্রণবের ইফতার, জল্পনা

গোটা রাজধানী যখন ইফতার রাজনীতিতে মশগুল, সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে কোনও ইফতার পার্টি এ বারেও দিচ্ছেন না। এমনকী আগামিকাল রাষ্ট্রপতির ইফতারের আমন্ত্রণ থাকলেও সেখানে তাঁর যাওয়াটা ‘অনিশ্চিত’ বলে জানাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৬
Share: Save:

গোটা রাজধানী যখন ইফতার রাজনীতিতে মশগুল, সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে কোনও ইফতার পার্টি এ বারেও দিচ্ছেন না। এমনকী আগামিকাল রাষ্ট্রপতির ইফতারের আমন্ত্রণ থাকলেও সেখানে তাঁর যাওয়াটা ‘অনিশ্চিত’ বলে জানাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়।

প্রায় সাড়ে তিন দশক আগে দিল্লিতে ইফতার পার্টির চল শুরু করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী। প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় অটলবিহারী বাজপেয়ীও নিয়মিত ইফতার পার্টি দিতেন। এমনকী হাল আমলেও শাহনওয়াজ হোসেন, নাজমা হেপতুল্লার মতো বিজেপির সংখ্যালঘু নেতা-নেত্রীরা দিল্লিতে ইফতার পার্টি দিতেন। কিন্তু মোদী ক্ষমতায় আসার পর সেই চলও বন্ধ হয়েছে। শাহনওয়াজ এখন দিল্লি ছেড়ে পটনায় ইফতার দিচ্ছেন। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে মোদী কোনও ইফতার দিতেন না, কোনও ইফতারে পার্টিতে যোগদানও করতেন না। গত বছরেও রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দেওয়া ইফতার এড়িয়ে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সময় তিনি ছিলেন মুম্বইয়ে। কিন্তু আগামিকাল পুরোদস্তুর দিল্লিতেই থাকছেন মোদী। তবু তাঁর সচিবালয় জানাচ্ছে, ইফতারে প্রধানমন্ত্রীর যাওয়া ‘অনিশ্চিত’।

কেন? প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রের খবর, আগামিকাল সকালে নীতি আয়োগের পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে যোগ দেবেন মোদী। দুপুরে বিজ্ঞান ভবনে ‘দক্ষ ভারত’-এর অনুষ্ঠানে যাবেন। আর সন্ধে ৭টার সময় উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে একটি ‘বিশেষ’ বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী। আর ঠিক এই সময়টাতেই রাষ্ট্রপতি ইফতারের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাঁকে। রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্র বলছে, প্রায় সাড়ে তিনশো বিশিষ্ট ব্যক্তি এই ইফতারে আমন্ত্রিত। তাঁদের মধ্যে উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিভিন্ন দলের নেতা-নেত্রী, মুসলিম দেশের রাষ্ট্রদূতেরা, মন্ত্রিসভার সদস্যেরা রয়েছেন। এ ছাড়া প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী, লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এইচ এল দাত্তুকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

সেই ইফতারে মোদীর যাওয়ার সম্ভাবনা যে ক্ষীণ, তা উত্তর-পূর্বের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের ঘোষণাতেই স্পষ্ট বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফে কতকটা বেনজির ভাবেই আজ এই সংক্রান্ত প্রেস বিবৃতিতে বৈঠকের সময়টা (সন্ধে ৭টা) উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে বৈঠকটি ‘গুরুত্বপূর্ণ’। যদিও সূত্রের খবর, যাঁদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা, উত্তর-পূর্বের সেই মুখ্যমন্ত্রীদের একাংশ চাইছেন, রাষ্ট্রপতির ইফতারের জন্যই বৈঠকটা একটু পিছিয়ে দিন মোদী। উত্তর-পূর্বের কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীরাই এই দলে পড়ছেন। অনেকের মতে, এই মুখ্যমন্ত্রীরা বিলক্ষণ জানেন, প্রণববাবুর ইফতারে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব হাজির থাকবেন। তাই চাইছেন মোদী ইফতারে যান। সে ক্ষেত্রে তাঁরাও একটু ঘুরে আসতে পারেন রাইসিনায়।

আর মোদী যদি না যান? তা হলে কটাক্ষের অস্ত্র নিয়ে তৈরিই রয়েছে বিরোধীরা। ক’দিন আগে খবর ছড়িয়ে পড়ে, ঈদের আগে কাশ্মীরে গিয়ে ইফতারে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে বিজেপির তরফে জম্মু-কাশ্মীরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা রাম মাধব সেই দাবি খণ্ডন করেন। এ বার কাল মোদী ইফতারে না গেলে আগেভাগেই জবাবের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রাখছে বিজেপি। দলের এক নেতা বলেন, ‘‘ইফতারের আয়োজন করা কারও সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। এটি নিতান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। তা ছাড়া, নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্র ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’। প্রধানমন্ত্রী ক’দিন আগেই ত্রিশ জন সংখ্যালঘুর সঙ্গে নিজের বাসভবনে বৈঠক করেছেন। কেন্দ্রের সংখ্যালঘু মন্ত্রকও নিরন্তর কাজ করে চলেছে। এর অন্য অর্থ খোঁজা উচিত নয়।’’

দলের একাংশ অবশ্য চাইছে, বিতর্ক এড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী এক বার ঘুরে আসুন। তবে অন্য অংশের যুক্তি, গত কাল সনিয়া গাঁধীও তো ইফতার দিয়ে বিরোধী জোটকে ঐক্যবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। তাতে কী লাভ হল? লালু-মুলায়ম-বামেরা কেউ গেলেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নিজে আসেননি। ফলে সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতিতে সওয়ার হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে যে তাস সনিয়া খেলতে চেয়েছিলেন, সেটি ব্যর্থ হল বলে তাঁদের মত। বস্তুত, গত বছর সনিয়া যখন ইফতার দিতে চেয়েছিলেন, সেই সময় কংগ্রেসের মধ্যেই দ্বিমত ছিল। সদ্য লোকসভা নির্বাচনে হেরে এ কে অ্যান্টনি দলকে সতর্ক করেছিলেন, মানুষ কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষ নীতিকে ‘সংখ্যালঘু তোষণ’ হিসেবে দেখছে। তার পর ক্রমশ দেখা যায় মোদী ইফতার দিলেন না। রাষ্ট্রপতি ভবনও এড়িয়ে গেলেন। তখন কৌশল পাল্টে সনিয়া ইফতার দেন। এ বারেও দিয়েছেন। এখন দেখার, কাল মোদীর অবস্থান বদলায় কি না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE