Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সিধু-ক্যাপ্টেন টক্করের ছায়া পঞ্জাব ম্যাচে

ক্যাপ্টেন আগেভাগে জানিয়ে রেখেছেন, এটাই তাঁর শেষ ম্যাচ। বার্তাটি স্পষ্ট, একটু খোলা হাতে খেলে ম্যাচটা জিততে চান তিনি। কিন্তু নির্বাচক কমিটি ভেবেছে অন্য রকম। ঠিক মাঠে নামার আগে ক্যাপ্টেন দেখলেন, দলে ঢুকে পড়েছেন বিপক্ষ শিবিরের উচ্চাকাঙ্ক্ষী, ওজনদার এক খেলোয়াড়! নতুন পিচে যিনি ইনিংস শুরু করবেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩২
Share: Save:

ক্যাপ্টেন আগেভাগে জানিয়ে রেখেছেন, এটাই তাঁর শেষ ম্যাচ। বার্তাটি স্পষ্ট, একটু খোলা হাতে খেলে ম্যাচটা জিততে চান তিনি। কিন্তু নির্বাচক কমিটি ভেবেছে অন্য রকম। ঠিক মাঠে নামার আগে ক্যাপ্টেন দেখলেন, দলে ঢুকে পড়েছেন বিপক্ষ শিবিরের উচ্চাকাঙ্ক্ষী, ওজনদার এক খেলোয়াড়! নতুন পিচে যিনি ইনিংস শুরু করবেন।

ক্যাপ্টেন মানে পাটিয়ালার রাজা তথা পঞ্জাব কংগ্রেসের সভাপতি অমরেন্দ্র সিংহ। রাজ্যে ভোট ৪ ফেব্রুয়ারি। তার ক’দিন দলে ঢুকে নভজ্যোত সিংহ সিধু ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হওয়ার দৌড়ে তাঁকে টক্কর দেবেন, এটা ক্যাপ্টেনের ভাল না লাগারই কথা। ফলে সিধু দলে আসার পর থেকে এই ক’দিনে এক বারও দিল্লিতে পা রাখেননি অমরেন্দ্র। সিধুও মুখে বলছেন যাব যাব, কিন্তু এখনও রাজ্যে দলের বর্ষীয়ান কান্ডারির সঙ্গে একটি বার দেখা করে আসেননি। ভোটে দলের দুই প্রধান মুখের এই আড়াআড়ি দলের ভোট-ভাগ্য বিগড়ে দেবে না তো! এই চিন্তাটা ছায়া ফেলছে কংগ্রেস শিবিরে।

এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে পঞ্জাবে ক্ষমতাশালী শাসক শিবিরের বিরুদ্ধে জনতার ক্ষোভকে ব্যালটে পরিণত করতে সমস্যা হওয়ার কথা নয় বলেই মনে করছেন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু তাঁরাও এখন বুঝতে পারছেন, পঞ্চনদের তীরে কংগ্রেসের ভাগ্য শেষ পর্যন্ত কতটা সুপ্রসন্ন হবে, তার অনেকটাই নির্ভর করছে দলের দুই হেভিওয়েট নেতার যুগলবন্দির উপরে। দলের সকলেই জানেন, দুই ব্যক্তিত্বের মধ্যে চোরা টেনশন রয়েছে। এর আগে পঞ্জাবের মাটিতেই সিধুর সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াই হয়েছে অমরেন্দ্রের। গত লোকসভা ভোটে যে অমৃতসরে দাঁড়িয়ে ক্যাপ্টেন অরুণ জেটলিকে হারান, সেখানে বিজেপির হয়ে সিধুরই দাঁড়ানোর কথা ছিল। রাজনৈতিক শত্রুতার সেই ইতিহাস তো রয়েছেই। কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি কখনওই চাননি তাঁর সাম্রাজ্যে এসে ভাগ বসাক এমন কোনও ব্যক্তিত্ব, যাঁর উপস্থিতির ওজন যথেষ্ট। তাই প্রথম থেকেই তিনি সিধুকে দলে নেওয়া নিয়ে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস হাইকমান্ডের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পর, নরম হতে বাধ্য হন তিনি। কিন্তু বিষয়টি এখনও হজম হচ্ছে না ক্যাপ্টেনের। কারণ এটাও অজানা কিছু নয় যে, সিধু উচ্চাকাঙ্ক্ষী। উপমুখ্যমন্ত্রী পদটির দিকে নজর রয়েছে তাঁর। ভোটে প্রকাশ সিংহ বাদলদের হটাতে পারলে সরকারের দু’ম্বর পদটি সিধুকে ছেড়ে দিতে ক্যাপ্টেন রাজি হবেন কি না, তা নিয়ে ঘোর সন্দেহ রয়েছে।

যদিও এ নিয়ে শেষ কথা বলবেন সনিয়া ও রাহুল গাঁধীই। আপাতত দেখানো হচ্ছে কংগ্রেসের সংসার সুখেরই। সিধুর অন্তর্ভুক্তিকে প্রকাশ্যে অন্তত স্বাগতই জানিয়েছেন ক্যাপ্টেন। সঙ্গে এ-ও জানিয়েছেন যে, সিধুকে পূর্ব-অমৃতসরের আসনটি দেওয়া হবে লড়ার জন্য। সিধুও কিন্তু ক্যাপ্টেন সম্পর্কে কোনও বেসুরো বা বিতর্কিত মন্তব্য করছেন না। তাঁকে উপমুখ্যমন্ত্রী করা হবে কি না জানতে চাওয়া হলে সিধু তা এড়িয়ে যাচ্ছেন। এই প্রসঙ্গে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে সিধুর জবাব, ‘‘গেহু খেত মে, বচ্চা পেট মে, অভি তুম বিহা কি বাত করতে হো!’’ গাছে কাঁঠাল দেখেই গোঁফে তেল দিতে রাজি নন বুঝিয়ে দিলেও সিধু কিন্তু উড়িয়েও দেননি প্রসঙ্গটি।

অমরেন্দ্রই বরং কিছুটা সিধেসাপটা জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও পদ পাইয়ে দেওয়ার শর্তে সিধুকে দলে নেওয়া হয়নি। ক্যাপ্টেনের কথায়, ‘‘নভজ্যোতের কংগ্রেসে আসা নিয়ে কোনও গোপন চুক্তি (ডিল) হয়নি। সিধু ও তাঁর বাবা আদতে কংগ্রেসিই ছিলেন। সিধু নিজেও বলেছেন এটা তাঁর ঘরে ফেরা।’’

ঘনিষ্ঠ-মহলে সিধুকে জোকার বলতেও ছাড়েন না অমরেন্দ্র। কিন্তু তাঁর টক্করটা শুধু বিপক্ষের বাদল-শিবির বা নিজ দলের এই ক্রিকেটার-অভিনেতাটির সঙ্গে নয়, নিজের ভাবমূর্তির সঙ্গেও। তাঁর রাজকীয় মেজাজ, আমজনতার সঙ্গে দূরত্ব নিয়ে যে ক্ষোভ যে রয়েছে, সনিয়া-রাহুলরা তা জানেন। যে কারণে এখনও তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হয়নি। ক্যাপ্টেনকে নিয়ে ক্ষোভ যাতে মাত্রা না ছাড়ায় সে জন্য আসরে নেমেছেন প্রিয়ঙ্কা বঢরা ও রাহুল। সিধু-ক্যাপ্টেন দু’জনের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছেন।

নিজের ভাবমূর্তির সমস্যাটা নিজেও জানেন ক্যাপ্টেন। আবেগ-তাসে তা মেটানোর চেষ্টায় সম্প্রতি সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন, দীর্ঘ, বিতর্কিত এবং বর্ণময় রাজনৈতিক জীবনের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছেন তিনি। এটাই তাঁর শেষ নির্বাচন। এবং শেষ ম্যাচটি জিততে রাহুল তথা গাঁধী পরিবারকে শিরোধার্য করেই এগোচ্ছেন তিনি। অমরেন্দ্রর কথায়, ‘‘ইস্তাহারের গোটাটাই রাহুলের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে। কৃষকদের আত্মহত্যা, পঞ্জাবের মাদকের সমস্যা মেটানো নিয়ে রাহুলের ভাবনার ভিত্তিতেই ভোটে লড়ছে দল।’’ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় বাদল সরকারের বিরুদ্ধে জনসাধারণের ক্ষোভ রয়েছে যথেষ্ট। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ‘উড়তা পঞ্জাব’ ছবির চিত্রনাট্য, যাকে কাজে লাগাতে গোটা রাজ্যে প্রচার চালাচ্ছেন ক্যাপ্টেন। তাঁর কথায়, ‘‘আপ, বিজেপি এবং অকালিকে দৌড় করাব আমরা। পঞ্জাবে আমরা ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছি ওরা সেটা বুঝবে।’’ রাজনীতির পর্যবেক্ষকদেরও অনেকে মনে করছেন, পঞ্জাবে অকালি-বিজেপি এবং আপের সঙ্গে ত্রিমুখী লড়াইয়ে কংগ্রেসই সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছে। শেষ বেলায় কংগ্রেসের শিবিরে শুধু ভাবনা, অমরেন্দ্র-সিধুর যুগলবন্দিতে তাল যেন না কাটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE