কংগ্রেস মুক্ত উত্তর-পূর্ব গঠনের লক্ষ্যে বিজেপির নেতৃত্বে তৈরি হয়েছে ‘নর্থ ইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালেয়েন্স’ (নেডা)। তার অনুষ্ঠানিক সূচনার জন্য আগামী বুধবার গুয়াহাটি আসছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। কিন্তু তার আগেই ওই যৌথ মঞ্চ থেকে সরে গেল অসমের প্রতিবেশী দুই রাজ্যের দুই শরিক।
অসমে বিজেপি-অগপ-বিপিএফ জোটের সরকারের শপথগ্রহণের দিন অমিত শাহ ‘নেডা’ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। শপথের দিন অসমে হাজির ছিলেন প্রতিবেশী রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রী, অন্য দলের নেতারা। অমিত শাহ তাঁদের জানান, বিজেপির নেতৃত্বে উত্তর-পূর্ব থেকে কংগ্রেসকে পুরোপুরি মুছে ফেলতে হলে সব অ-কংগ্রেসি রাজ্যকে একজোট হতে হবে। কেন্দ্রের সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যে উন্নয়নের মন্ত্র হাতিয়ার করেই লড়বে ‘নেডা’র শরিকরা।
বর্তমানে উত্তর-পূর্বে কংগ্রেস সরকার চলছে মিজোরাম, মণিপুর ও মেঘালয়ে। এর মধ্যে মেঘালয় ও মণিপুর কংগ্রেসে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব তুঙ্গে। ইম্ফল পুরভোটে কংগ্রেসকে সমানে সমানে টক্কর দিয়েছে বিজেপি। অরুণাচলে বিজেপির সমর্থনে ক্ষমতাসীন পিপিএ সরকারের উপরেও পুরোপুরি বিজেপি সরকার হয়ে যাওয়ার জন্য চাপ বাড়ছে। গুয়াহাটি পুরসভাও দখল করে নিয়েছে বিজেপি। এই অবস্থায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দ্রুত মঞ্চ গড়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ‘অল-আউট’ আক্রমণে নামতে চাইছে। অনুষ্ঠানে মেঘালয়ের এনপিপি, ইউডিপি, অসমের জোট শরিকরা, অরুণাচলের পিপিএ, নাগাল্যান্ডের এনপিএফ যোগ দিতে চলেছে। বিজেপির দাবি, কার্বি আংলংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক মানসিং রংপিও বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন।
মেঘালয় কংগ্রেস অন্তর্দ্বন্দ্বের কথা উড়িয়ে দিলেও রাজ্যের পর্যবেক্ষক সি পি জোশীর বৈঠকে বিক্ষুব্ধ নেতাদের অনুপস্থিতি সে কথা ফের প্রমাণ করেছে। বিজেপি ও নেডা যে কংগ্রেসের পক্ষে বিপজ্জনক তা মেনে নিয়েছেন খোদ জোশীও। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি যে আগ্রাসন নিয়ে উত্তর-পূর্ব দখল করতে নেমেছে তা কংগ্রেসের কাছে চিন্তার বিষয়। কংগ্রেসকে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে, সুপরিকল্পিত ভাবে লড়তে হবে।’
কিন্তু যৌথ মঞ্চ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হওয়ার আগেই শুরু হয়েছে মন কষাকষি। প্রথমে মেঘালয়ের এইচএসপিডিপি ও গত কাল মিজোরামের জোরাম ন্যাশনালিস্ট পার্টি জানিয়েছে, তারা ওই যৌথ মঞ্চে থাকবে না।
মিজোরামের জোরাম ন্যাশনাল পার্টি (জেডএনপি) বিজেপির পুরনো শরিক। তারা ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন ও ২০১৫ সালের আইজল পুরভোটে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে লড়েছিল। কিন্তু জেডএনপি সভাপতি তথা সাংসদ লালডুহাওমা জানান, কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর দু’বছর ধরে বিজেপি গোপনে হিন্দুত্বের আদর্শ প্রচার করে চলেছে। তারা গোমাংস নিষিদ্ধ করেছে। খ্রিস্টান উপাসনাস্থলে হামলায় প্রশ্রয় দিয়েছে। যোগ দিবস বাধ্যতামূলক করে শিক্ষাক্ষেত্রকেও গেরুয়াকরণের চেষ্টা করছে। বিজেপির আলোয় ফিরছে তন্তুজ, মঞ্জুষা এই নীতি নিয়ে সরব হয়েছে মিজোরামের সব বড় গির্জার যৌথ মঞ্চ এমকেএইচসি। এই পরিস্থিতিতে তারা আর নেডার অংশ বা বিজেপির শরিক থাকবে না।
অন্য দিকে, মেঘালয়ের অন্যতম বড় বিরোধী দল এইচএসপিডিপি জানিয়েছে, ২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটে তারা একাই লড়বে। দলের সভাপতি আরডেন্ট বাসাইয়াওমোইত জানান, দল বিজেপি ও কংগ্রেসের মতো জাতীয় দলগুলি থেকে সম দূরত্ব বজায় রাখবে। কারণ, জাতীয় দলগুলির সঙ্গে এইএসপিডিপির নিজস্ব ও রাজ্যের নীতি-আদর্শে ফারাক রয়েছে। তফাৎ রয়েছে কর্মসূচিতেও।
অসমেও নেডা এবং শাসক জোটের শরিক অসম গণ পরিষদ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিজেপির সমালোচনায় মুখর। অগপ বিধায়ক তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল মহন্ত প্রকাশ্যে বলেন, ‘‘শরিকদের না জানিয়েই জনবিরোধী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বিজেপি। তারা শরিকদের কোনও কোআর্ডিনেশন কমিটিও তৈরি করেনি।’’ কেন্দ্রের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতিমতো হাজার কোটি টাকা না পেয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন অপর জোট শরিক বিপিএফ প্রধান হাগ্রামা মহিলারিও।
অবশ্য বিজেপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শান্তনু ভরালি ও অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা মহন্তর মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন। হিমন্ত জানান, মন্ত্রিসভার সদস্য অগপর দুই মন্ত্রীর সম্মতিতেই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিজেপি কোনও সিদ্ধান্ত নিলেই অগপ সভাপতি তথা মন্ত্রী অতুল বরাকে তা জানায়। দলকে তা জানানোর দায়িত্ব বরার। ভরালি বলেন, ‘‘শীঘ্রই জোটের কমিটি তৈরি করা হবে। জোট শরিকদের এমন কোনও কাজ করা বা কথা বলা উচিত নয় যা থেকে বিরোধীরা উৎসাহিত হয় বা শাসকজোটের ভাবমূর্তি খারাপ হয়। কোনও বক্তব্য থাকলে আগে শরিকদের মধ্যে আলোচনা করা উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy