Advertisement
E-Paper

ব্যাঙ্ক-দুর্নীতি রুখতে আইন বদলের প্রস্তাব

দশকের পর দশক ধরে চলে আসছে কর্পোরেট ঋণ নেওয়ার একই পদ্ধতি। ব্যাঙ্কগুলি থেকে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ হিসেবে বিভিন্ন সংস্থার ঘরে যায়, তার অনেকটাই চলতি পদ্ধতির ফাঁক গলে অনাদায়ী থেকে যায়। ব্যাঙ্কের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘নন পারফর্মিং অ্যাসেট’ (এনপিএ)।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৮ ০৪:৩৫
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দশকের পর দশক ধরে চলে আসছে কর্পোরেট ঋণ নেওয়ার একই পদ্ধতি। ব্যাঙ্কগুলি থেকে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ হিসেবে বিভিন্ন সংস্থার ঘরে যায়, তার অনেকটাই চলতি পদ্ধতির ফাঁক গলে অনাদায়ী থেকে যায়। ব্যাঙ্কের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘নন পারফর্মিং অ্যাসেট’ (এনপিএ)। ‘অসহায় দর্শক’ থেকে যায় কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকও। সাম্প্রতিক নীরব মোদী এবং মেহুল চোক্সী-কাণ্ড ঋণ-দুর্নীতির এই তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করেছে। এর থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার কোম্পানি আইন সংশোধনের পথে এগোচ্ছে মন্ত্রক।

কোনও সংস্থা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিলে এক মাসের মধ্যে সেই তথ্য (কর্পোরেট পরিভাষায় ‘চার্জ-১’) কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রককে জানাতে হয়। একই ভাবে, ঋণ শোধ করার তথ্যও (‘চার্জ-৪’) ৩০ দিনের মধ্যে জমা দিতে হয় মন্ত্রকের কাছে। কোনও কারণে নির্দিষ্ট ওই সময়সীমার মধ্যে এই তথ্য দেওয়া সম্ভব না হলে ‘চার্জ-৮’ এর অধীনে সময়সীমা বাড়ানোর আর্জি করতে পারেন সংস্থার কর্তৃপক্ষ। সে ক্ষেত্রে জরিমানা-সহ সর্বোচ্চ ২৭০ দিনের মধ্যে ঋণ গ্রহণ বা পরিশোধের তথ্য দাখিলের অনুমতি দেয় মন্ত্রক। সেই সময়সীমাও মানতে না পারলে ‘ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইবুনাল’-এর থেকে পৃথক ভাবে অনুমতি নেওয়ার একটা সুযোগ থাকে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে।

মন্ত্রকের কর্তাদের অনেকেই মনে করছেন, এই সময়সীমার মধ্যেই যাবতীয় গোলমাল হয়ে চলেছে। তাঁদের ব্যাখ্যা, ধরা যাক কোনও সংস্থা নির্দিষ্ট কোনও সম্পত্তির বিনিময়ে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছে। শোধ না-করার উদ্দেশ্য থাকলে তথ্য দাখিলের প্রশ্নে তারা প্রথমে ৩০ এবং পরে ২৭০ দিনের সময়সীমা লঙ্ঘন করতে পারে। এবং সেই সময়ের মধ্যে ওই একই সম্পত্তি দেখিয়ে একাধিক ব্যাঙ্ক থেকে আরও ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। শেষে যখন তারা তথ্য দাখিল করে, তখন আর কর্পোরেট মন্ত্রকের কিছুই করার থাকে না।

মন্ত্রকের তথ্য বলছে, ২০০৯ থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে মেহুলের সংস্থা ‘গীতাঞ্জলি জেমস লিমিটেড’-এর নেওয়া ঋণের পরিমাণ ১৪ হাজার ২৬৪ কোটি ২২ লক্ষ ৮৫ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা! ঋণ পাওয়ার জন্য অস্থাবর সম্পত্তিও ব্যাঙ্কগুলিকে দেখিয়েছিলেন গীতাঞ্জলি-কর্তা। কর্পোরেট বিশেষজ্ঞদের একাংশের প্রশ্ন, চলতি পদ্ধতি এবং আইনের ফাঁক গলে একই সম্পত্তি একাধিকবার দেখিয়েই কি মাত্র সাত বছরের মধ্যে অত পরিমাণ ঋণ নিতে পেরেছিল সংস্থাটি? এই ব্যাপারে ব্যাঙ্কগুলির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, ঋণ নেওয়া বা পরিশোধের তথ্য কোনও সংস্থাকে যেমন দাখিল করতে হয়, তেমনই ব্যাঙ্কগুলিরও দায়িত্ব তা সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলিতে জানিয়ে দেওয়া।

সূত্রের খবর, দেশের সব ‘রিজিওনাল ডিরেক্টর’ (আরডি) এবং ‘রেজিস্ট্রার অব কোম্পানিজ’-কে (আরওসি) মন্ত্রক জানিয়েছে, এই প্রবণতা বরদাস্ত করা হবে না। মন্ত্রকের কর্তারা মনে করছেন, অবিলম্বে ঋণ-তথ্য দাখিলের পদ্ধতির পরিবর্তন করা না হলে দুর্নীতি ঠেকানো যাবে না। সেই কারণে ২০১৩ সালের কোম্পানি আইন সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে মন্ত্রক। আধিকারিকদের অনেকেই মনে করছেন, এর ফলে পরবর্তী কালে ঋণ নেওয়া এবং পরিশোধের তথ্য দাখিলের ক্ষেত্রে এতটা শিথিলতা না-ও থাকতে পারে। পাশাপাশি, ব্যাঙ্কগুলির দায়বদ্ধতাও আরও বেঁধে দিতে পারে সংশ্লিষ্ট আইন।

Bank Fraud Law Corporate Loan Nirav Modi Mehul Choksi Vijay Mallya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy