Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

অস্থিরতার আবহে সেতু মিনারেল ব্রিজ

জঙ্গি দমনে সেনা হামলা নিয়ে টানাপড়েনের প্রেক্ষাপটে ভারত ও মায়ানমারের মধ্যে সেতুবন্ধন করল নবনির্মিত মিনারেল ব্রিজ। নাগাল্যান্ড ও মায়ানমারের সীমান্তে তেজু নদীর উপরে সবচেয়ে লম্বা এই সেতু ও চিজুতি সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে আজ মণিপুর ঘেঁসা ফেক জেলার সীমান্তে হাজির হন মায়ানমারের সাগাইং রাজ্যের লায়সির বিধায়ক অং উইন ও তাঁর নয় সঙ্গী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৫ ০৩:১৯
Share: Save:

জঙ্গি দমনে সেনা হামলা নিয়ে টানাপড়েনের প্রেক্ষাপটে ভারত ও মায়ানমারের মধ্যে সেতুবন্ধন করল নবনির্মিত মিনারেল ব্রিজ। নাগাল্যান্ড ও মায়ানমারের সীমান্তে তেজু নদীর উপরে সবচেয়ে লম্বা এই সেতু ও চিজুতি সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে আজ মণিপুর ঘেঁসা ফেক জেলার সীমান্তে হাজির হন মায়ানমারের সাগাইং রাজ্যের লায়সির বিধায়ক অং উইন ও তাঁর নয় সঙ্গী। সীমান্তে গড়ে ওঠা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্রের কাজ, নতুন সড়ক নির্মাণ ও দুই দেশ মিলিয়ে চলা অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখেন তাঁরা। মায়ানমারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ছিলেন নাগাল্যান্ডের শিক্ষামন্ত্রী ইতাচু ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সি এল জন।. দুই দিকের বিধায়করাই হাতে হাত মিলিয়ে নাগাদের উন্নয়ন বজায় রাখার অঙ্গীকার করেন। এই উদ্যোগ নাগা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি দিল্লির উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়ার প্রক্রিয়ার অঙ্গ বলেই মনে করা হচ্ছে।

উইন জানান, আয়তনে মায়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্য সাগাইং খনিজ সম্পদ ও কৃষিতে খুবই সমৃদ্ধ। কিন্তু, সেখানে উন্নয়ন পরিকাঠামোর বড়ই অভাব। মায়ানমার সরকার নাগা অধ্যুষিত সাগাইং-এ উন্নয়নমূলক কাজ চালাচ্ছে.। কিন্তু, ভারত সরকার সীমান্ত যোগাযোগ পরিকাঠামো গড়ে তুললে তবেই দু’দিকের নাগাদের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় হবে। আবার সাগাইং প্রদেশে রয়েছে উত্তর-পূর্বের জঙ্গিদের মিলিত ঘাঁটি। তাই ওই এলাকা কৌশলগত ভাবে ভারত ও মায়ানমার সরকারের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

আজ উত্তর-পূর্ব সফর সেরে দিল্লি ফিরে গিয়েছেন উত্তর-পূর্ব উন্নয়ন দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ। তাঁর সঙ্গেই এসেছিলেন ভারত-নাগা শান্তি আলোচনার মধ্যস্থতাকারী আর এন রবি। তাঁরা মণিপুর, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল ঘুরে দেখেন। নাগাল্যান্ডে জিতেন্দ্র সিংহ জানিয়েছেন, জঙ্গিরা নতুন করে যে সন্ত্রাসের রাস্তা নিয়েছে তাতে এই এলাকার উন্নয়ন ধাক্কা খেতে পারে।. তবে কেন্দ্র উত্তর-পূর্বের উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। মায়ানমার সীমান্তে জঙ্গি হামলা বা মায়ানমারে ভারতীয় সেনা হামলার জের কেন্দ্রের অ্যাক্ট-ইস্ট নীতিতে পড়বে না। খাপলাং গোষ্ঠীর সঙ্গে ফের লড়াই শুরু হলেও এনএসসিএনের অন্য গোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তি আলোচনা ঠিক পথে এগোচ্ছে বলেও দাবি জিতেন্দ্রর। মণিপুরে ইউনাইটেড নাগা কাউন্সিলের
সঙ্গে বৈঠকে জিতেন্দ্র ও রবি আশ্বাস দেন, ভারত-নাগা সমস্যার সমাধানে দিল্লি আন্তরিক। ইউনাইটে়ড নাগা কাউন্সিলের তরফে তাঁদের জানানো হয়, শান্তি প্রক্রিয়া ভেস্তে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে।. মায়ানমার সীমান্তে সেনা অভিযানের জেরে সীমান্তের গ্রামবাসীরাও ঘরছাড়া হয়ে রয়েছেন।. জিতেন্দ্র দুটি বিষয় নিয়েই হস্তক্ষেপের আশ্বাস দেন। রবি জানান, খাপলাং বাহিনী একতরফা ভাবে সংঘর্ষবিরতি ভেঙে নাশকতা চালাচ্ছে।. কেন্দ্র কিন্তু তাদের সঙ্গে আলোচনাই করতে চেয়েছিল। জিতেন্দ্র মণিপুর ছাড়ার পরেই, ইউনাইটেড নাগা কাউন্সিল মণিপুরে বসবাসকারী নাগাদের জন্য পৃথক প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করার দাবিতে পথ অবরোধের ডাক দেয়।.

উন্নয়ন ও শান্তির বার্তার পাশাপাশি খাপলাং গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযানও জারি রেখেছে কেন্দ্র। আজ মণিপুরে যৌথ বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে চান্ডেল জেলার আমামচাট অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত খাপলাং বাহিনীর স্বঘোষিত চেয়ারম্যান খুমলো আমি আনাল ওরফে অ্যাম্বিশন। লামফেল সুপার মার্কেট এলাকায় নবচন্দ্র নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল খুমলো। পুলিশ কম্যান্ডোদের হাতে ধরা পড়েছে খাপলাং বাহিনীর আর এক সক্রিয় সদস্য পাংমেই কালিংগং। পুলিশ ও আসাম রাইফেলসের যৌথ অভিযানে পূর্ব ইম্ফল থেকে কেসিপি (এমসি)-র জঙ্গি মহম্মদ জাহিদ আলি গ্রেফতার হয়।

গত কালই খাপলাং গোষ্ঠীকে ফের নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে কেন্দ্রকে অনুরোধ করেছেন নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী টি আর জেলিয়াং। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব শম্ভু সিংহ জানান, খাপলাং গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব জমা পড়েছে। শীঘ্রই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE