Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Covid 19

New Strain of Covid 19: করোনাভাইরাসের নয়া রূপ ‘ওমিক্রন’ উদ্বেগজনক, ঘোষণা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার

হু জানিয়েছে, নয়া ভেরিয়েন্টের ভাবগতিক বুঝতে আরও কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। তবে বিবৃতিতে তারা বলেছে, এই ভেরিয়েন্টে বিপজ্জনক মিউটেশন ঘটেছে।

ছবি সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৫৪
Share: Save:

এ বার ‘ওমিক্রন’!

করোনাভাইরাসের নতুন ‘বি.১.১.৫২৯’ প্রজাতিকে উদ্বেগজনক বা ‘ভেরিয়েন্ট অব কনসার্ন’ হিসেবে চিহ্নিত করে সেটিকে ‘ওমিক্রন’ নাম দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। নতুন এই ভেরিয়েন্ট নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের। দক্ষিণ আফ্রিকা ও বৎসোয়ানায় টিকাপ্রাপ্তরাই করোনার নতুন এই প্রজাতির দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন। গত কাল এই ভেরিয়েন্টের বিষয়ে ভারতের সমস্ত রাজ্যকে সতর্ক করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ। তবে এ দেশে এখনও পর্যন্ত এই নয়া ভেরিয়েন্ট পাওয়া যায়নি বলেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর।

হু জানিয়েছে, নয়া ভেরিয়েন্টের ভাবগতিক বুঝতে আরও কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। তবে বিবৃতিতে তারা বলেছে, এই ভেরিয়েন্টে বিপজ্জনক মিউটেশন ঘটেছে। বস্তুত, সেই কারণেই চিহ্নিত হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকির সর্বোচ্চ ধাপে রাখা হল করোনার এই নয়া স্ট্রেনকে। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম চিহ্নিত হয়েছিল এই প্রজাতির ভাইরাস। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, তাতে ৫০টি মিউটেশন (জিনগত পরিবর্তন) ইতিমধ্যেই ঘটে গিয়েছে, যার মধ্যে তিরিশটিরও বেশি হয়েছে শুধুমাত্র স্পাইক প্রোটিনে। নতুন এই প্রজাতির করোনাভাইরাস যাঁদের আক্রমণ করেছে, তাঁদের শরীরে ভাইরাসের পরিমাণ বা ‘ভাইরাল লোড’ খুব বেশি হয়েছে। নতুন প্রজাতিটির উৎস নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। বিজ্ঞানীদের একাংশের মতে, দক্ষিণ আফ্রিকার কোনও এইচআইভি আক্রান্তের শরীরই সম্ভবত এই ভেরিয়েন্টের উৎস। অতীতে করোনার বিটা ভেরিয়েন্টও এক এইচআইভি রোগীর শরীরে প্রথম পাওয়া গিয়েছিল।

দক্ষিণ আফ্রিকায় বুধবার যত জন সংক্রমিত হয়েছেন, তাঁদের ৯০ শতাংশের শরীরেই ওমিক্রন স্ট্রেনের ভাইরাস মিলেছে। নতুন এই প্রজাতির করোনা সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে জোহানেসবার্গে। সেখানকার সংক্রমিতদের মধ্যে অধিকাংশই স্কুল-কলেজের পড়ুয়া। ফলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, নয়া প্রজাতির ভাইরাসের শিকার মূলত হচ্ছেন অল্পবয়সিরা। ভারতে যেখানে এখনও ১৮ বছরের কম বয়সিদের টিকাকরণ শুরু হয়নি, সেখানে নয়া প্রজাতি এ দেশে ঢুকে পড়লে ছোটরা ব্যাপক ভাবে সংক্রমিত হতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। আবার টিকার দু’টি ডোজ় নেওয়া থাকলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সুরক্ষিত, এমনটা ভাবছেন না নয়াদিল্লি এমসের সেন্টার ফর কমিউনিটি মেডিসিনের চিকিৎসক সঞ্জয় রাই। তিনি বলেন, ‘‘নতুন ভেরিয়েন্ট সম্পর্কে আমরা এখনও বিশেষ কিছু জানি না। অপেক্ষা করতে হবে। তবে এমন সম্ভাবনা রয়েছে যে, টিকাকরণ বা সংক্রমণের ফলে শরীরে তৈরি হওয়া প্রতিরোধ ক্ষমতা হয়তো এই প্রজাতিকে রুখতে পারবে না। সত্যিই যদি তা হয়, সে ক্ষেত্রে বিষয়টি গুরুতর।’’

নয়া করোনাতঙ্ক
• নভেল করোনাভাইরাস বা সার্স-কোভ-২-এর নতুন ভেরিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’ হাজির। নাম বি.১.১.৫২৯। একে নিয়ে ভয়ের অন্যতম কারণ, কোভিড টিকার কার্যকারিতা রুখে দিতে পারে নতুন স্ট্রেনটি।
• ভাইরাসের বি.১.১.৫২৯ স্ট্রেনে অন্তত ৫০টি মিউটেশন ঘটেছে। এর মধ্যে স্পাইক প্রোটিনেই ৩০টি মিউটেশন ঘটেছে।
• করোনাভাইরাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই স্পাইক প্রোটিন। এর সাহায্যেই মানবকোষে প্রবেশ করে ভাইরাস। কোভিড টিকারও মূল নিশানা তাই স্পাইক প্রোটিন। তবে কি এর ভোলবদলে স্ট্রেনটি আরওই সংক্রামক হয়ে উঠেছে? উত্তরের খোঁজ চলছে।
• স্ট্রেনটির উৎস নিয়ে ধন্দ রয়েছে। সন্দেহ, নির্দিষ্ট কোনও এক রোগীর শরীরে মিউটেশন ঘটে স্ট্রেনটি তৈরি হয়েছে। সম্ভবত, ওই রোগী এইচআইভি আক্রান্ত। এবং তিনি বিনা চিকিৎসাতেই ছিলেন।
• দক্ষিণ আফ্রিকায় এই সপ্তাহে প্রথম চিহ্নিত হয় স্ট্রেনটি। এর পরে আশপাশের অনেক দেশেই এটি ধরা পড়েছে। টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন।
• বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, সংক্রমিতদের শরীরে ভাইরাসের পরিমাণ অস্বাভাবিক রকম বেশি।
• হংকং, ইজ়রায়েলে আফ্রিকা ফেরত পর্যটকের শরীরে মিলেছে এই স্ট্রেন। ভারতের বিমানবন্দরে দক্ষিণ আফ্রিকা, বৎসোয়ানা, হংকং ফেরত যাত্রীদের কড়া স্ক্রিনিং শুরু হয়েছে।
• ব্রিটেন, সিঙ্গাপুর, ইজ়রায়েলের মতো দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা, বৎসোয়ানা এবং আফ্রিকার আরও চারটি দেশের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করেছে। জার্মানি, ইটালিও দক্ষিণ আফ্রিকায় সফর নিয়ে কড়াকড়ি শুরু করেছে।

নতুন ভেরিয়েন্ট নিয়ে উদ্বেগের মুখে আগামী সোমবার চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের বৈঠক ডেকেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। পরিস্থিতি এমনই যে, ১৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে চলা ভারতীয় ক্রিকেট দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। বিসিসিআই সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই সফরের ভবিষ্যৎ নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছে তারা। কেন্দ্রের নির্দেশ, সমস্ত বিমানযাত্রী, বিশেষত ‘ঝুঁকির’ তালিকায় থাকা দেশগুলি থেকে আসা যাত্রীদের করোনা পরীক্ষায় ঢিলেমি যেন না থাকে। ভারতের এই তালিকায় ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় দেশগুলি ছিলই। এ ছাড়া রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজ়িল, বাংলাদেশ, বৎসোয়ানা, চিন, মরিশাস, নিউজ়িল্যান্ড, জ়িম্বাবোয়ে, সিঙ্গাপুর, হংকং ও ইজ়রায়েল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, আন্তর্জাতিক উড়ানের যাত্রীদের কারও নমুনা করোনা পজ়িটিভ হলেই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেখতে বলা হয়েছে, নমুনায় বি.১.১.৫২৯ ভেরিয়েন্ট আছে কি না। ভারতের করোনা বিষয়ক জিনোমিক্স কনসর্টিয়াম ‘ইনসাকগ’ পরিস্থিতির উপরে কড়া নজর রেখেছে। পজ়িটিভ নমুনার জিন বিশ্লেষণ যাতে দ্রুত সেরে ফেলা যায়, সেই বিষয়টিতেও জোর দিচ্ছে তারা। এ নিয়ে বৈঠকও হয়েছে।

আজ দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি বিপিন সাঙ্ঘি এবং বিচারপতি জসমিত সিংহের বেঞ্চ জানতে চেয়েছে, যে সমস্ত টিকার মেয়াদ উত্তীর্ণ হতে চলেছে, সেগুলিকে বুস্টার ডোজ় হিসেবে কেন ব্যবহার করা হবে না? বিষয়টি প্রয়োজনীয় মনে হলে কবে নাগাদ তা করা হতে পারে, কেন্দ্রকে হলফনামা দিয়ে জানাতে বলা হয়েছে। দেশে সংক্রমণ সম্প্রতি কমে এলেও ২৪ ঘণ্টায় আবার তা সাড়ে দশ হাজার পেরিয়েছে। কর্নাটকের ধারওয়াড়ের একটি মেডিক্যাল কলেজের নবীন বরণ উৎসবের পরে পড়ুয়া-কর্মী মিলিয়ে ১৮২ জন সংক্রমিত। এঁদের অধিকাংশেরই টিকাকরণ সম্পূর্ণ। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, সাবধানের মার নেই। প্রশ্ন উঠেছে, হবু ডাক্তারেরাই কি তাতে কান দিচ্ছেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Covid 19 New Strain WHO
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE