Advertisement
০১ এপ্রিল ২০২৩

নতুন জমানায় এগোবে সম্পর্ক, আশায় সিঙ্গাপুর

অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় ভারতের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করেছিল সিঙ্গাপুর। তাই এ বার বিপুল জনসমর্থন নিয়ে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পরে, সিঙ্গাপুরের প্রত্যাশা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। আর দেরি না করে আগামী নভেম্বর মাসে মায়ানমারে আসিয়ান বৈঠক উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে পুরোদস্তুর শীর্ষ বৈঠক করতে চাইছেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং।

অগ্নি রায়
সিঙ্গাপুর শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৪ ০৩:১৬
Share: Save:

অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় ভারতের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করেছিল সিঙ্গাপুর। তাই এ বার বিপুল জনসমর্থন নিয়ে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পরে, সিঙ্গাপুরের প্রত্যাশা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। আর দেরি না করে আগামী নভেম্বর মাসে মায়ানমারে আসিয়ান বৈঠক উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে পুরোদস্তুর শীর্ষ বৈঠক করতে চাইছেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং। আজ সিঙ্গাপুরের বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে এ কথা জানানো হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “নরেন্দ্র মোদী বিপুল জনসমর্থন নিয়ে জিতে আসার পরে আমাদের দেশেও দু’দেশের সম্পর্ক নিয়ে বড় মাপের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। নভেম্বরে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক হওয়াটা খুব জরুরি।”

Advertisement

কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গেও বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী সিঙ্গাপুর। পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাডু, তেলঙ্গানা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির উন্নয়নগত চাহিদা বিশ্লেষণ করেছেন সে দেশের কর্তারা। সদ্য ঘুরে গিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। এসেছিলেন তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও। এর আগে সিঙ্গাপুরের বিদেশমন্ত্রী তামিলনাড়ুতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সে দেশের বিদেশ মন্ত্রকের কর্তার বক্তব্য, “প্রত্যেকটি রাজ্যেই বিভিন্ন বিষয়ে সমস্যা ও চাহিদার মিল রয়েছে। নতুন আবাসন গড়া, নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়ন, স্মার্ট সিটি তৈরি এই সমস্ত ক্ষেত্রে সহায়তা চাওয়া হচ্ছে।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর যে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তার মধ্যে কয়েকটি ক্ষেত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সে দেশের বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে, উৎপাদন শিল্প, তথ্য ও প্রযুক্তি এবং পর্যটন। সুন্দরবনের বাঘকে নিয়ে কোনও বিশেষ পরিকল্পনা করা যায় কিনা, তা-ও ভাবা হচ্ছে। সিঙ্গাপুরের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের এক কূটনীতিকের কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের জানিয়েছেন যে শিল্পের প্রয়োজনে জমি দিতে তিনি সক্ষম। তাঁর রাজ্যের জমি ব্যাঙ্কের কথাও জানানো হয়েছে। বিনিয়োগের ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট উৎসাহ প্রকাশ করেছেন।” তবে ভারী শিল্পে এক লপ্তে লগ্নি করার মতো পরিকাঠামো মমতার রাজ্যে আদৌ রয়েছে কি না, সেই সব দিকও খতিয়ে দেখছে সিঙ্গাপুর। পাশাপাশি, অসম-সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে স্বাস্থ্য পরিষেবা, পর্যটনে বিনিয়োগ করার কথা ভাবা হচ্ছে।

গত মাসেই নয়াদিল্লি, হায়দরাবাদ এবং চেন্নাই সফর করে গিয়েছেন সিঙ্গাপুরের বিদেশমন্ত্রী কে ষণ্মুগম। নরেন্দ্র মোদী ছাড়াও তাঁর বৈঠক হয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার সঙ্গে। স্মার্ট সিটি, গঙ্গার উন্নয়ন, কম মূল্যে আবাসন প্রকল্পের মতো বিষয়গুলি নিয়েই আলোচনা হয়েছে।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে সারা দেশে ১০০টি স্মার্ট সিটি ২০১৭ সালের মধ্যে শেষ করার কথা ঘোষণা করেছেন, সে দিকেও নজর রাখতে চাইছে লি সিয়েন লুং-এর সরকার। তবে তাঁরা মনে করছেন, প্রথমেই তিনটি স্মার্ট সিটি-র (মুম্বই-দিল্লি করিডরে) কাজ শেষ করার লক্ষ্যে না এগিয়ে মোদীর উচিত একটি করে শহর তৈরির কাজ হাতে নেওয়া ও শেষ করা। এ বিষয়ে ভারত সরকার কী ভাবে এগোয়, বিদেশি বিনিয়োগ চাওয়া হয় কিনা, কী ভাবে পুঁজি ও বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়, স্মার্ট সিটি-র মধ্যে কোন কোন বিষয় অর্ন্তভূক্ত করা হয়, সে সব বিষয়কে দেখে নিতে চাইছে সিঙ্গাপুর। এ ব্যাপারে সব রকম সহযোগিতার জন্য যে লি সিয়েন লুং প্রস্তুত, সে কথাও নয়াদিল্লিকে জানিয়েছে সিঙ্গাপুরের নেতৃত্ব। আগামী নভেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হলে বিষয়টি একটি পাকাপাকি রূপ পাবে।

তবে এ ব্যাপারে সিঙ্গাপুর সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তাদের দু’টি সতর্কবার্তা রয়েছে। এক, স্মার্ট সিটি বা এই ধরনের উদ্যোগের জন্য সর্বপ্রথম যা প্রয়োজন, তা হল, প্রশাসনিক উৎকর্ষ। শুধুমাত্র অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে নগরোন্নয়ন হয় না। দুই, পুরনো শহরকে নতুন করে গড়া, সব সময়ই নতুন শহর গড়ার থেকে অনেক বেশি ব্যয়বহুল। এ ব্যাপারে কলকাতার উদাহরণ দিয়ে সিঙ্গাপুরের এক কূটনীতিক জানাচ্ছেন, “কলকাতা অত্যন্ত পুরনো শহর। ফলে তাকে ঢেলে সাজার কাজটা অনেক বেশি কঠিন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সেটি মাথায় রাখতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.