E-Paper

অগ্নিকাণ্ড রুখতে রেলের নয়া ব্যবস্থা

নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, পার্সেল ভ্যানে প্যাকেটে মুড়ে বাজি, সিলিন্ডার, বা অন্য দাহ্য বস্তু পারিবহণ হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে প্রতি কামরার প্রবেশপথের ডাস্টবিন।

ফিরোজ ইসলাম 

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৪৯

—ফাইল চিত্র।

চলন্ত ট্রেনে শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগার বিপদ এড়াতে দূরপাল্লার ট্রেনে রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত মোবাইলের চার্জিং পয়েন্টে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখার নির্দেশ আগেই দিয়েছিল রেল। গত ২৫ অক্টোবর পাতালকোট এক্সপ্রেসে অগ্নিকাণ্ডের পরে দেশের সব জ়োনকে চিঠি লিখে দীপাবলির আগে বিশেষ সতর্কতা নেওয়ার নির্দেশ দিল রেলবোর্ড।

নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, পার্সেল ভ্যানে প্যাকেটে মুড়ে বাজি, সিলিন্ডার, বা অন্য দাহ্য বস্তু পারিবহণ হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে প্রতি কামরার প্রবেশপথের ডাস্টবিন। তাতে কেউ ধূমপান করে সিগারেটের টুকরো ফেলে রাখছেন কি না, তা নজরে রাখতে ওই নির্দেশ বলে সূত্রের খবর। কামরায় আগুন নির্ণয় ও নির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিক আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখতে বলা হয়েছে।

পর পর অগ্নিকাণ্ডে রেলের সার্বিক নজরদারি ছাড়াও প্রযুক্তির উপযুক্ত ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ট্রেনের কামরায় অগ্নিকাণ্ড ঠেকাতে আগের ‘ফায়ার ডিটেকশন অ্যালার্ম’ পাল্টে নতুন ‘ফায়ার ডিটেকশন অ্যান্ড ব্রেক অ্যাপ্লিকেশন সিস্টেম’ ব্যবহার করা শুরু হয়েছে। তাতে ধোঁয়া বা আগুনের আভাস পাওয়া মাত্রই আপনা থেকেই ব্রেক প্রযুক্ত হয়ে ট্রেন থেমে যাবে। কিন্তু, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেও কামরায় অগ্নিকাণ্ড পুরো ঠেকানো যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। উল্টে নানা কারণে ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বাড়ছে বলেই সূত্রের খবর।

পুরনো ব্যবস্থায় কামরার ভিতরে কোথাও তাপমাত্রা ৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে পৌঁছলে ফায়ার অ্যালার্ম বাজতে শুরু করত। তাতে আগুন লাগার একেবারে গোড়ায় চিহ্নিত করতে সমস্যা হওয়ায় নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়। ওই প্রযুক্তি দূরপাল্লার ট্রেনের কোচে বসানোর কাজ শুরু হলেও এখনও সব কোচে তা বসিয়ে ওঠা যায়নি। ফলে, আগুন নিয়ে রেলের আশঙ্কা থেকেই গিয়েছে।

উৎসবের মরসুমে গত ২৫ অক্টোবর পঞ্জাবের ফিরোজপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে মধ্যপ্রদেশের সিওনি যাওয়ার পথে আগ্রার কাছে অগ্নিকাণ্ডের মুখে পড়ে পাতালকোট এক্সপ্রেসের দু’টি কামরা। অন্যান্য কামরা বিচ্ছিন্ন করে আগুন নেভানো হলেও ওই ঘটনায় ন’জন যাত্রী আহত হন। গত অগস্টে বেঙ্গালুরুতে উদয়ন এক্সপ্রেসে আগুন লাগে। ওই মাসেই তামিলনাড়ুর মাদুরাই স্টেশনে তীর্থযাত্রীদের জন্য ভাড়া নেওয়া একটি ট্রেনের প্যান্ট্রি কামরায় গ্যাস জ্বালিয়ে রান্না করার সময় অগ্নিকাণ্ডে ন’জনের মৃত্যু ঘটে।

ট্রেনে দাহ্য বস্তু বহন ও ধূমপান নিষিদ্ধ তো বটেই সঙ্গে তা জরিমানা-যোগ্য অপরাধ। কামরায় সামান্যতম ধোঁয়ার হদিস পেতে আধুনিক অ্যালার্ম বসানোর কথা নিজেই জানিয়েছে রেল। তার পরেও কামরায় ধূমপানের ঘটনা ঠেকাতে ডাস্টবিন পরীক্ষা করতে বলার মধ্যে রেলের ‘ঢিলেঢালা’ নজরদারির বিষয়টিই প্রকট হয়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

কামরার বাতানুকূল যন্ত্র থেকেও একাধিক অগ্নিকাণ্ড ঘটছে। অ্যালার্ম বসিয়েও ওই সব অগ্নিকাণ্ডে কামরার অভ্যন্তরীণ ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যাচ্ছে না। বৈদ্যুতিক আগুন যে গতিতে ছড়িয়ে পড়ে, বহুক্ষেত্রে অ্যালার্মও তার কাছে হার মানছে বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের। স্বাভাবিক ভাবেই সার্বিক অগ্নি-সুরক্ষার প্রস্তুতিতেই ঘাটতি থাকার অভিযোগ উঠছে।

দূরপাল্লার ট্রেনে রাতে মোবাইলের চার্জিং পয়েন্ট বন্ধ করে দেওয়ার ফলে বাতানুকূল কামরা ছাড়াও সাধারণ কামরার যাত্রীদের অসুবিধের মুখে পড়তে হয় বলেও অভিযোগ অনেকের। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরে রেলের অহরহ নতুন নির্দেশিকা জারি আসলে নিজেদের ফস্কা গেরো আড়াল করার ‘নিস্ফল তৎপরতা’ বলছেন যাত্রীদের একাংশ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Indian Railways Fire train

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy