বারাণসী ‘গণধর্ষণ’কাণ্ডে নয়া মোড়। বেশ কয়েকটি তথ্য নিয়ে সন্দেহ বাড়ছে পুলিশের। পুলিশ কমিশনার মোহিত আগরওয়ালের নির্দেশে এই ঘটনায় বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন হয়েছে ইতিমধ্যেই। কিন্তু পুলিশের একটি সূত্রে খবর, বেশ কয়েকটি বিষয়ে তথ্যগত অসঙ্গতি ধরা পড়ায় সেগুলি ভাল ভাবে খতিয়ে দেখতে চাইছে পুলিশ। তত ক্ষণ পর্যন্ত এই ঘটনার বাকি অভিযুক্তদের গ্রেফতারিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
বারাণসীর পুলিশ কমিশনার মোহিত আগরওয়াল জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার এই মামলার তদন্তের জন্য সিট গঠন করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেবে তারা। এই সময়ে বাকি অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে না। ২৩ জনের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। এখনও পর্যন্ত ১৪ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই ঘটনায় অভিযুক্তদের কঠোরতম শাস্তির ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন তাঁর বারাণসী সফরে। গণধর্ষণের ঘটনা নিয়ে যখন ক্ষোভে ফুঁসছে বারাণসী, গণধর্ষণের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ‘তথ্যপ্রমাণ’ সহযোগে পুলিশ এবং প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে ধৃতদের পরিবার।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত এবং অভিযুক্তদের পরিবার কয়েকটি ভিডিয়ো এবং ‘নির্যাতিতা’র ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের কথোপকথন ‘তথ্যপ্রমাণ’ হিসাবে তুলে দিয়েছেন। সেই সূত্র ধরেই সিট তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্তে যে বিষয়গুলির উপর জোর দেওয়া হবে সেগুলি হল ‘নির্যাতিতা’র ইনস্টাগ্রাম পোস্ট, ঘটনার সময় তাঁর গতিবিধি, এফআইআরে উল্লিখিত অভিযুক্তের সংখ্যা-সহ বেশ কয়েকটি বিষয়। এই বিষয়গুলি ঘিরে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে হাজির হয়েছিলেন অভিযুক্তদের পরিবারের ১০০ জন সদস্য। তাঁদের পাল্টা দাবি, অভিযুক্তেরা সকলেই নির্দোষ। একই সঙ্গে অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করার আর্জিও জানিয়েছেন তাঁরা। অভিযুক্তদের আত্মীয়দের দাবি, ‘নির্যাতিতা’ নিজের মতো কাহিনি ফেঁদে নিরাপরাধ যুবকদের ফাঁসিয়েছেন। তাঁদের আরও দাবি, যে দিন থেকে তরুণী নিখোঁজ ছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে, সে দিনই তিন যুবকের সঙ্গে তাঁকে ঘুরতে দেখা গিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, নিখোঁজের সময় সাত দিন ধরে ‘নির্যাতিতা’র ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট সক্রিয় ছিল। এক অভিযুক্তের সঙ্গে ইনস্টাগ্রামে কথোপকথনও হয় ওই সময়ের মধ্যে। তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ, ২৯ এপ্রিল থেকে ৪ মার্চের মধ্যে ‘নির্যাতিতা’র ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট সক্রিয় ছিল। এমনও তথ্য প্রকাশ্যে আসছে যে, ‘নির্যাতিতা’ কন্টিনেন্টাল ক্যাফের কর্মী এবং এই ঘটনার অন্যতম অভিযুক্তের ইনস্টাগ্রামে কথা চালিয়ে গিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, ২ এপ্রিল ‘নির্যাতিতা’র ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে ছবি এবং ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়। আর এই ঘটনাই সন্দেহ বৃদ্ধি করেছে।
পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি তথ্য ঘিরে সন্দেহ বাড়ছে। আর সেই তথ্যগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ‘নির্যাতিতার মা ২৩ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করলেও, আদালতে ৯ অভিযুক্তের নাম উল্লেখ করেছেন। ২৩ অভিযুক্তের নাম এফআইআরে উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও আদালতে কেন নয় অভিযুক্তের কথা উল্লেখ করেছেন ‘নির্যাতিতা’র মা, সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
উল্লেখ্য, গত ৪ এপ্রিল এক তরুণীকে বারাণসীর রাস্তা থেকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। ২৩ জনের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করা হয়। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বারাণসী পৌঁছে তিনি এই ঘটনার তদন্তের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে জানতে চান। তার পরই তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বলে সূত্রের খবর। তার পাঁচ দিনের মধ্যেই এই মামলার তদন্তকারী আধিকারিককে সরিয়ে দেওয়া হয়।