মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর ওরফে সাধ্বী প্রজ্ঞা-সহ সাত অভিযুক্তকেই বেকসুর খালাস করে দিল মুম্বইয়ের বিশেষ এনআইএ আদালত। সাত জনই অবশ্য জামিনে মুক্ত দিলেন। এ বার এই মামলা থেকেও নিষ্কৃতি পেলেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার আদালত জানায়, কেবল সন্দেহের বশে মামলা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যে তথ্যপ্রমাণ দাখিল করা হয়েছে, তা সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় বলেও জানায় আদালত। বিচারক একে লাহোটি বলেন, “সমাজে এটা একটা ভয়াবহ ঘটনা। কিন্তু কেবল নৈতিকতার যুক্তিতে আদালত কাউকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারে না।”
এই মামলায় প্রধান অভিযুক্ত হিসাবে উঠে এসেছিল ভোপালের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ প্রজ্ঞার নাম। যে মোটরসাইকেলে বোমা রাখা ছিল, সেটি প্রজ্ঞার নামে নথিভুক্ত ছিল বলে তদন্তে উঠে আসে। অভিযোগ উঠেছিল যে, বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করেছিলেন প্রজ্ঞাই। বৃহস্পতিবার আদালত জানিয়েছে, ফরেন্সিক পরীক্ষায় বাইকটি যে প্রজ্ঞার, তা প্রমাণিত হয়নি। আদালতের এ-ও পর্যবেক্ষণ, প্রজ্ঞা বিস্ফোরণের ঘটনার দু’বছর আগেই সন্ন্যাসী হয়ে গিয়েছিলেন। এনআইএ এই মামলার তদন্তভার হাতে পাওয়ার পর তদন্তের অভিমুখ খানিক বদলে যায়। তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ (বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন), অস্ত্র আইনে করা মামলা বলবৎ ছিল। বৃহস্পতিবার বিশেষ আদালত জানায়, এই মামলায় ইউএপিএ প্রযুক্ত হয় না।
২০০৮-এর ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার মালেগাঁও শহরে এক বিস্ফোরণে সাত জনের মৃত্যু হয়। ঘটনায় আহত হয়েছিলেন একশোরও বেশি। তদন্তে জানা যায়, মালেগাঁও শহরে মসজিদ লাগোয়া কবরস্থানে একটি মোটরসাইকেলে দু’টি বোমা রাখা ছিল। তাতেই বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনার তদন্তে নামে মহারাষ্ট্রের সন্ত্রাসদমন শাখা (এটিএস)। তদন্তে উঠে আসে যে ঘটনার নেপথ্যে ছিল একটি একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। বিস্ফোরণকাণ্ডে গ্রেফতার হন প্রজ্ঞা এবং প্রাক্তন সেনা আধিকারিক লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্রসাদশ্রীকান্ত পুরোহিত। কিন্তু তাঁরা তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন। পরে দু’জনেই জামিন পান।
২০১১ সালে মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলা জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র কাছে যায়। তার পর আদালতে একাধিক চার্জশিট এবং অতিরিক্ত চার্জশিট জমা পড়ে। ২০১৮ সালে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয় এবং সাত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। বিচার চলার সময়ে আদালত ৩২৩ জন সাক্ষীর বয়ান খতিয়ে দেখে। চলতি বছরের এপ্রিলে বিশেষ আদালতে কয়েকশো পাতার তথ্যপ্রমাণ পেশ করে এনআইএ। ১৯ এপ্রিল রায়দান স্থগিত রেখেছিলেন বিচারক। অন্য দিকে, বিতর্কিত প্রজ্ঞাকে ২০১৯ সালে মধ্যপ্রদেশের ভোপাল লোকসভা কেন্দ্রের টিকিট দিয়েছিল বিজেপি। তিনিও জয়ী হয়েছিলেন। ২০২৪ সালে অবশ্য তাঁকে আর প্রার্থী করেনি পদ্মশিবির।
বেকসুর খালাস হওয়ার পর প্রজ্ঞা বলেন, “আমায় তদন্তের জন্য ডেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার পর অত্যাচার করা হয়। গোটা জীবন আমার শেষ হয়ে গিয়েছে। আজ বেঁচে আছি, কারণ আমি এক জন সন্ন্যাসী। ওরা চক্রান্ত করে গেরুয়ার অবমাননা করেছিল। আজ গেরুয়ার জয় হল, হিন্দুত্বের জয় হল। যাঁরা দোষী, ঈশ্বর তাঁদের শাস্তি দেবেন।”