আব্দুল বসিত
পঠানকোট হামলার তদন্তে ভারতীয় গোয়েন্দাদের পাকিস্তান যাত্রা যে অনিশ্চিত, তা স্পষ্ট করে দিলেন সে দেশের হাইকমিশনার। দু’দেশের আলোচনা প্রক্রিয়া আপাতত ঠান্ডা ঘরে চলে গিয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ফলে ঘরে-বাইরে প্রবল বিড়ম্বনায় পড়ল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
আজ সারা দিন ধরেই টানটান ছিল ভারত-পাক কূটনীতির চিত্রনাট্য। বিকেল চারটেয় সাংবাদিক বৈঠক করে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বলেন, ‘‘আপনাদের খেয়াল রাখা উচিত ভারত এই প্রথম পাকিস্তানের কাছ থেকে সন্ত্রাস বিষয়ে সহযোগিতা পেল। পঠানকোট তদন্তের জন্য ইসলামাবাদ যৌথ তদন্তকারী দল পাঠিয়েছিল।’’ পাক গোয়েন্দাদের ভারতে আসতে দেওয়া নিয়ে আগেও সমালোচনার মুখে পড়েছে মোদী সরকার। জবাবে তারা জানিয়েছে, এর পরে এনআইএ-র দল তদন্ত করতে পাকিস্তানে যাবে। ইসলামাবাদ সেই সফরের অনুমতি দিয়েও দিয়েছে।
কিন্তু আজ বিদেশ মন্ত্রকে সাংবাদিক বৈঠকের ঠিক এক ঘণ্টা পরে ‘ফরেন করেসপন্ডেন্টস ক্লাব’-এ পাক হাইকমিশনার আব্দুল বসিত বলেন, ‘‘আমি মনে করি না পঠানকোট তদন্তের কাজে পাকিস্তানের গোয়েন্দা দল ভারতে এসেছে বলে ভারতের তদন্তকারী সংস্থাকেও ইসলামাবাদ যেতে হবে। বিষয়টি এ রকম নয়।’’
দিল্লির বিরুদ্ধে আরও গোলা ছুড়েছেন পাক হাইকমিশনার। স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, ‘‘ভারত এবং পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা স্থগিত হয়ে গিয়েছে। কবে দু’দেশের বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক হবে তার কোনও স্থিরতা নেই। কাশ্মীরই দু’দেশের মধ্যে বিরোধের মূল বিষয়। সেটিকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে লাভ নেই।’’ সাম্প্রতিক অতীতে আলোচনা নিয়ে এমন নৈরাশ্যজনক বার্তা নওয়াজ শরিফ সরকার কখনও দেয়নি। সম্প্রতি পঠানকোট কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত জইশ প্রধান মাসুদ আজহারকে নিষিদ্ধ করতে রাষ্ট্রপুঞ্জে আর্জি জানিয়েছিল ভারত। সেই আর্জি স্থগিত হয়ে গিয়েছে চিনের আপত্তিতে। বসিতের কথায়, ‘‘এই বিষয়ে চিনের পদক্ষেপ আমরা সমর্থন করি।’’
পাক গোয়েন্দাদের ভারতে আসার অনুমতি দিয়ে মোদী সরকার ‘‘আত্মসমর্পণ’’ করেছে বলে দাবি করেছিলেন বিরোধীরা। বসিতের মন্তব্যের পরে প্রত্যাশিত ভাবেই সেই সমালোচনার সুর চড়েছে। শান্তিপ্রক্রিয়া বাতিল করায় পাকিস্তানের সমালোচনা করেছে কংগ্রেস। মোদীকে কটাক্ষ করে কংগ্রেস মুখপাত্রের বক্তব্য, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর ভাবমূর্তি গড়তে উল্টোপাল্টা কূটনৈতিক চাল দিচ্ছে কেন্দ্র। আশা করি এ বার তাদের শিক্ষা হয়েছে।’’ সমালোচনার মুখে রাতে বসিতের বক্তব্যের জবাব দিয়েছে মোদী সরকার। বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, পাক গোয়েন্দারা আসার পর যে ভারতীয় গোয়েন্দারা পাকিস্তান যাবেন তা আগেই স্থির হয়েছিল। ২৬ মার্চ এই বিষয়ে পাক সরকারের সঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনের আনুষ্ঠানিক বার্তা বিনিময়ও হয়। দ্বিপাক্ষিক আলোচনা প্রক্রিয়া সম্পর্কে বসিতের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পাক বিদেশ মন্ত্রকেরই একটি বক্তব্যকে হাতিয়ার করেছে দিল্লি। তাদের দাবি, পাক বিদেশ মন্ত্রক এ দিনই জানিয়েছে যে দু’দেশের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। দ্বিপাক্ষিক আলোচনার দিনক্ষণ স্থির করতে কথা বলছেন প্রতিনিধিরা। বিদেশ মন্ত্রকের অফিসারদের মতে, মোদীর মতোই নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে ‘আত্মসমর্পণে’র অভিযোগ উঠছে। পাক মোল্লাতন্ত্র ও সেনার একাংশের দাবি, শরিফ ভারতের কাছে মাথা নোয়াচ্ছেন। সে জন্য মাঝে মাঝে কড়া বার্তা দিচ্ছে শরিফ সরকার।
কূটনীতিকদের মতে, মাসুদ আজহার বা হাফিজ সইদের মতো জঙ্গি নেতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা শরিফ সরকারের পক্ষে খুবই কঠিন। এ দিনই লাহৌরে সইদের সমান্তরাল ‘শরিয়তি’ বিচারব্যবস্থার কথা প্রকাশিত হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। ভারতে জঙ্গি অনুপ্রবেশও থামেনি। তিন জঙ্গি কাশ্মীর উপত্যকার ঢাল বেয়ে নেমে ঘুম ছুটিয়ে দিচ্ছে দিল্লি থেকে পঞ্জাবের প্রশাসনের। ওড়িশাতেও জঙ্গি ঢুকে পড়ার খবরে সতর্কতা জারি হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, সেনা-আইএসআইকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না শরিফ। তাই অস্তিত্ব রক্ষা করতেই মাঝে মাঝে সুর কড়া করতে হচ্ছে তাঁকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy