লাল কেল্লা চত্বরে হামলাকারী জঙ্গিরা হামাসের কায়দায় ভারতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলেই আগেই দাবি করেছিল গোয়েন্দা সূত্র। এ বার এনআইএ সূত্রে দাবি করা হল, হামাসেরই কায়দায় চিকিৎসক-জঙ্গিরা হাসপাতাল বা চিকিৎসা কেন্দ্রের কর্মীদের লকারে অস্ত্র জমা রাখতে পারে।
লাল কেল্লা চত্বরে বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে এনআইএ জানতে পেরেছে, হামলাকারী উমর মহম্মদ এবং ওই মডিউলের অন্তত তিন জন সদস্য মহম্মদ শাকিল, আদিল আহমেদ রাঠের ও শাহিন সাইদ চিকিৎসকের কাজ করত। মুজাম্মিল ও মহম্মদ আল-ফালাহ্ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত। আদিল কাজ করতেন জম্মু-কাশ্মীরের সরকারি মেডিক্যাল কলেজে। অনন্তনাগের সেই মেডিক্যাল কলেজের লকার থেকেই উদ্ধার দু’টি রাইফেল।
এনআইএ সূত্রের মতে, অনন্তনাগ, বারামুলা ও বডগাম জেলার হাসপাতালগুলিকে অস্ত্র মজুত রাখার কেন্দ্রে পরিণত করার পরিকল্পনা করেছে। গাজ়ায় আল-শিফা হাসপাতালের নীচে হামাসের তৈরি একটি সুড়ঙ্গের সন্ধান পেয়েছিল ইজ়রায়েলি সেনা। সেখানে অস্ত্র মজুত রাখার পাশাপাশি অভিযানে নির্দেশ দেওয়ার কাজও করা হত। সূত্রের মতে, এই পরিকল্পনার ফলে ওই জঙ্গিদের সঙ্গে পাকিস্তানি জঙ্গিদের পাশাপাশি হামাসের যোগসূত্র আছে কি না তা নিয়েও তদন্তের প্রয়োজন।
অন্য দিকে বিস্ফোরণ কাণ্ডের পরে আল-ফালাহ্ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সরকারি অভিযানের জেরে বিপাকে পড়েছেন সেখানকার পড়ুয়ারা। কেবল বিস্ফোরণ-কাণ্ডে ধৃতেরাই নয়, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা জাভেদ আহমেদ সিদ্দিকিকেও গ্রেফতার করেছে ইডি। ফলে তাঁদের কলেজ ও কোর্সের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পড়ুয়ারা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বছর বাইশের এক চতুর্থ বর্ষের কাশ্মীরি পড়ুয়ার কথায়, ‘‘আমার আশা কয়েক দিনের মধ্যেই অবস্থা স্বাভাবিক হবে। আমি এক জন ভাল চিকিৎসক হতে পারি বলে আমার ধারণা। আমার বাবা-মা ডাক্তারি পড়ানোর জন্য বিপুল খরচ করেছেন।’’ এক এমবিবিএস পড়ুয়া সম্প্রতি আল-ফালাহ্ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করতে শুরু করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আল-ফালাহের ক্যাম্পাসের সঙ্গেই হাসপাতাল থাকায় অনেকেই এই কলেজটিকে বেছে নেন। গত ১০ দিন ধরে যা ঘটেছে তা নিয়ে ভাবলেও আমি কাজ করতে পারব না।’’ পড়ুয়াদের একাংশদের ধারণা, পরিস্থিতি খারাপ হলে তাঁদের অন্য কোনও মেডিক্যাল কলেজে সরানো হতে পারে। তাঁদের আশা, সরকার পড়ুয়াদেরপাশে দাঁড়াবে।
দিল্লি বিস্ফোরণের ২ দিন পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে থাকা কিছু ‘ভুল দাবি’ নিয়ে আল-ফালাহ্কে নোটিস পাঠায় ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিশন কাউন্সিল (নাক)। নাকের তরফে জানানো হয়, ২০১৩ সাল থেকে নাকের তরফে তাদের ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সকে ‘এ’ শ্রেণি ও ২০১১ সাল থেকে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে ‘এ’ শ্রেণিরকোর্সের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি আল-ফালাহের। কিন্তু নাকের স্বীকৃতি কেবল পাঁচ বছরের জন্য বজায় থাকে। এ দিন নাক জানিয়েছে, আল-ফালাহ্ এই বিষয়ে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি এবং ওয়েবসাইটের ত্রুটির জন্য এইভুল হয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)