Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

চরমে মাদকের নেশা, ছাত্রকে ফেরাল আইআইটি

ভুটান থেকে এসেছিল ইঞ্জিনিয়ার হতে। ফিরল খালি হাতে, নেশায় বুঁদ হয়ে। মাদকে অত্যাধিক আসক্তির জন্য অভিভাবক ডেকে সপ্তম সেমিস্টারের ছাত্রকে বাড়ি পাঠাল শিলচর এনআইটি।

উত্তম সাহা
শিলচর শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৬ ০৩:১৯
Share: Save:

ভুটান থেকে এসেছিল ইঞ্জিনিয়ার হতে। ফিরল খালি হাতে, নেশায় বুঁদ হয়ে। মাদকে অত্যাধিক আসক্তির জন্য অভিভাবক ডেকে সপ্তম সেমিস্টারের ছাত্রকে বাড়ি পাঠাল শিলচর এনআইটি।

অন্য অভিভাবকরা যখন সময় গুনছেন, কবে ছেলে ফাইনাল পরীক্ষায় বসবে, বি-টেক ডিগ্রি নিয়ে বেরোবে, তখন ভুটানের সাঙ্গায় তোগে-র (নাম পরিবর্তিত) সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায় এনআইটি কর্তৃপক্ষের এক বার্তায়। ডিরেক্টর এন ভি দেশপাণ্ডে তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছেন ছেলে জিগমের ব্যাপারে কথা বলতে। এমনই নেশাসক্ত ছেলে যে তাঁকে এখানে রাখা মুশকিল হয়ে পড়েছে।

ডিরেক্টর জানিয়েছেন, বাধ্য হয়েই তাকে তার বাবার হাতে তুলে দিতে হল। দেশে নিয়ে কোনও পুনর্বাসন কেন্দ্রে রেখে ভাল চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তোগে-কে একই পরামর্শ দিয়েছেন কাছাড়ের পুলিশ সুপার রাজবীর সিংহও। শেষে কাঁদতে কাঁদতেই শিলচর ছাড়লেন পিতা-পুত্র।

দেশপাণ্ডের কথায়, বাড়ি পাঠানোর ব্যাপার চূড়ান্ত হতেই জিগমের অনুশোচনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত মাদকাসক্তদের উপরে ভরসা করা যায় না। এর আগেও তাকে বহুবার সতর্ক করা হয়েছিল। লাভ হয়নি। তবু মানবিক কারণে তাকে বহিষ্কার করা হয়নি। এক বছর সময় দেওয়া হয়েছে। পুরো সুস্থ হয়ে ফিরলে সপ্তম সেমিস্টারেই পড়ার সুযোগ পেতে পারে সে।

দেশপাণ্ডে উদ্বিগ্ন, ‘‘এনআইটি পড়ুয়াদের কী আর চোখে চোখে রাখা সম্ভব! নেশার ফাঁদ পাতাই থাকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে।’’ তিনি বলেন, ‘‘ভিতরে কড়াকড়িতে খামতি নেই। রাত ৯টার পর কোনও ছাত্রকে বেরোতে দেওয়া হয় না। প্রথম সেমিস্টার থেকে দফায় দফায় চলে কাউন্সেলিং। ড্রাগস থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।

নেশাসক্ত হয়ে পড়লে কী কী হতে পারে, তাও বুঝিয়ে বলা হয় নানা ভাবে। এ ছাড়া, যারা ক্লাশে অনিয়মিত বা সব সময় দেরিতে ঢোকে, তাদের চিহ্নিত করে চলে স্পেশাল কাউন্সেলিং।’’ তাঁর আক্ষেপ, এত কিছুর পরেও শিলচর এনআইটি-তে ২০ জনের বেশি পড়ুয়া নিজের জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে বলে রিপোর্ট রয়েছে। এরা অন্যদেরও প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু জিগমে-র মতো অসুস্থ বা হাতেনাতে ধরা না পড়লে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় না।

তবে নেশার প্রকোপ কমানোর অন্য এক পন্থা নিয়েছে শিলচর এনআইটি। ডিরেক্টর বলেন, ‘‘যারা একটি-দু’টি বিষয়ে ফেল করে ছাত্রাবাসে পড়ে থাকে, তাদের নিয়েই সমস্যাটা বেশি। পড়ার চাপ থাকে না বলে তারা নেশায় জড়িয়ে পড়ে। তাই সমস্ত শিক্ষকদের বলে দেওয়া হয়েছে, এক-দু বিষয়ে ফেলের সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে।’’ দুর্বল ছাত্রদের জন্য বিশেষ কোচিংয়েরও ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে দেশপাণ্ডে জানিয়েছেন।

ভুটান সরকারের কোটায় পড়তে এসে মাদকে আসক্ত হয়ে বাড়ি ফেরাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন কাছাড়ের পুলিশ সুপার রাজবীর সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ মাদক চোরাচালান নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে অত্যন্ত সতর্ক রয়েছে। পর পর অভিযান চলছে। এর মধ্যে প্রচুর নেশাসামগ্রী ধরা পড়ছে। গ্রেফতার করা হয়েছে পাচারকারীদের।’’ বরাক উপত্যকাকে মাদক ব্যবসার করিডর বলে উল্লেখ করে পুলিশ সুপার জানান, গত সপ্তাহে কাটিগড়ার লক্ষ্মীপুরে ৩০০ কিলোগ্রাম গাঁজা ধরা হয়েছে। সেগুলি মণিপুর থেকে এসেছিল। গত মাসে শালচাপড়ায় দু’দফায় মাদক কারবারীদের ধরা হয়েছে। একবার দেখা যায়, তিন যুবক বিলপার থেকে হেরোইন কিনতে এসেছে। আরেকবার দু’জন ধরা পড়ে নিষিদ্ধ কফসিরাপ পাচার করতে গিয়ে। পাঁচজনই ত্রিপুরার। দুই-তিন রাজ্যের ব্যাপার বলে মাদক করিডর ভাঙা যে কঠিন, সে কথা স্বীকার করে নিয়েও পুলিশ সুপার আশ্বস্ত করেন, ‘‘কাছাড় পুলিশ এ ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রগুলিকেও শক্তিশালী করে তোলা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

NIT Student Police Liqour
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE