Advertisement
E-Paper

১৯টা বাচ্চাকে মারল কে? ‘খুনি’ সুরেন্দ্রকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ শুনে প্রশ্ন সেই নিঠারি গ্রামের, সঙ্গে বাড়ছে হতাশাও

সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের পর নিঠারি গ্রাম যেন সব আশা হারিয়ে ফেলেছে। ওই গ্রামের বাসিন্দা ৬৩ বছর বয়সি এক বৃদ্ধ বলেন, ‘‘ন্যায়বিচারের আর কোনও আশা নেই।’’

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:৫০
Nithari families react after SC hints acquittal of Surendra Koli

নিঠারিকাণ্ডের অবলম্বনে তৈরি ছবিতে বিক্রান্ত মাসে (বাঁ দিকে) এবং ওই ঘটনার অভিযুক্ত সুরেন্দ্র কোলি। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

উত্তরপ্রদেশের নিঠারি হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত হওয়া সুরেন্দ্র কোলি কি সাজা পাবেন, না বেকসুর খালাস হয়ে যাবেন? মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের পর নিঠারি গ্রাম আশঙ্কা আর দোলাচলে ভুগতে শুরু করেছে। দু’দশকের পুরনো বহুলচর্চিত সেই ঘটনায় দায়ের হওয়া এক মামলার রায় মঙ্গলবার স্থগিত রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, যদি তারা সুরেন্দ্রকে দোষী সাব্যস্ত করার রায় বহাল রাখে তবে তা ‘ন্যায়বিচারের প্রতি উপহাস হবে’। তা হলে কি শেষ বিচারাধীন মামলা থেকেও খালাস পেয়ে যেতে পারেন সুরেন্দ্র? সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণের পরই ভুক্তভোগী পরিবারগুলি এক বাক্যে বলছে, ‘‘আমরা কি ন্যায়বিচার পাব না?’’

প্রসঙ্গত, ২০০৫-২০০৬ সাল নাগাদ নিঠারিতে একের পর যুবতী, কিশোর-কিশোরী নিখোঁজ হতে শুরু করে। তার তদন্তেরই সূত্র ধরে ২০০৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর নিঠারির ব্যবসায়ী মণীন্দ্র সিংহ পান্ধেরের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ১৯টি কঙ্কাল এবং কিছু দেহাবশেষ। এই ঘটনায় গোটা দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। পরে তদন্তে উঠে আসে, শিশু, কিশোর-কিশোরীদের উপর যৌন অত্যাচার চালিয়ে খুন করে তাদের দেহের অংশ প্রেসার কুকারে সেদ্ধ করে খেয়ে ফেলতেন পান্ধের এবং তাঁর বা়ড়ির পরিচারক সুরেন্দ্র। এই মামলায় পান্ধের এবং কোহলিকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিলেন সিবিআই আদালতের বিশেষ বিচারক পবন তিওয়ারি। তবে পরে এলাহাবাদ আদালতে সেই সাজা স্থগিত হয়ে যায়।

নিঠারির ঘটনা অবলম্বনে বছরখানেক আগে মুক্তি পেয়েছিল বিক্রান্ত মাসে অভিনীত ‘সেক্টর ৩৬’ ছবি। ছবিটি তৈরি করেন পরিচালক আদিত্য নিম্বলকর। সেখানে নিঠারি হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত সুরিন্দর কোলির চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিক্রান্ত। বেশ সাড়া ফেলেছিল বিক্রান্তের সেই অভিনয়। ছবির পরতে পরতে নিঠারি হত্যাকাণ্ডের বিভীষিকাময় দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছিলেন পরিচালক নিম্বলকর। দু’দশক আগের সেই হত্যা মামলার শুনানি ছিল মঙ্গলবার। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের পর আশা হারিয়ে ফেলেছে নিঠারি গ্রাম।

গ্রামের ৬৩ বছর বয়সি এক বৃদ্ধ বলেন, ‘‘ন্যায়বিচার পাব কি না জানি না। আমাদের আর কোনও আশা নেই।’’ ঘটনাচক্রে, ওই বৃদ্ধের ১০ বছরের কন্যার দেহাবশেষ মিলেছিল নয়ডার সেক্টর ৩১-এর ব্যবসায়ী মণীন্দ্র সিংহ পান্ধেরের ডি-৫ বাংলো থেকে। ওই বৃদ্ধের কথায়, ‘‘২০০৬ সালে স্কুল থেকে ফেরার পথে আমার মেয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। তার পর থেকে আমি ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করছি। মামলা চালানোর জন্য আমার সব সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছি।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘আমি এবং আমার স্ত্রী এখন সব আশা, বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের সন্তানের হত্যাকারীকে একমাত্র সাজা দিতে পারেন ঈশ্বরই।’’ ওই বৃদ্ধের প্রশ্ন, ‘‘সুরেন্দ্র এবং মণীন্দ্র যদি শিশুদের হত্যা না করে থাকেন, তবে কে করলেন?’’ সেই প্রশ্নের উত্তর কি মিলবে? জানেন না বৃদ্ধ দম্পতি।

বৃদ্ধের স্ত্রীর চোখেমুখেও হতাশার ছবি স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘২০২৩ সালে মণীন্দ্র যখন খালাস পেয়ে যান, তখনই জানতাম এই মামলায় আর কিছু হবে না। যত বার আমি ডি-৫ বাংলোর পাশ দিয়ে যাই, তত বারই আমার মেয়ের ভয়ঙ্কর পরিণতির ছবি দেখতে পাই।’’

ঘটনার পর একে একে নিঠারি গ্রাম ছেড়ে চলে যায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলি। তবে এখনও ওই গ্রামে রয়ে গিয়েছেন ওই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। তাঁরা ছাড়াও আরও একটি ভুক্তভোগী পরিবার রয়েছে ওই গ্রামে। সেই পরিবার হারিয়েছিল তাদের সাড়ে পাঁচ বছরের ছেলেকে। তাদেরও প্রশ্ন, ‘‘সুরেন্দ্র এবং মণীন্দ্র যদি দোষী না-হন, তবে কে আমাদের সন্তানদের খুন করলেন? কে বলবে সেটা? আমরা যা-ই বলি না কেন, কিছুই বদলাবে না। আমরা আমাদের ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি।’’

মঙ্গলবার রায় না দিলেও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বিআর গবই, বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি বিক্রম নাথের বেঞ্চ ইঙ্গিত দেয়, শেষ মামলায় সুরেন্দ্রকে খালাস করা হতে পারে। বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘‘যদি একই তথ্যের ভিত্তিতে এই আদালত তাঁকে অন্য মামলাগুলি থেকে খালাস দেয় এবং এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে, তবে কি সেটা ন্যায়বিচারের প্রতি বিদ্রুপ করা হবে না?’’

Nithari Case Supreme Court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy