কর্তার দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানো নিয়ে দেশ তোলপাড়। কিন্তু গিন্নির বিদেশ যাত্রা আটকে যাচ্ছে সেই কর্তার কারণেই।
কর্তা অবশ্য এখানে নেহাত গিন্নিপোষ্য নন। দেশেরও কর্তা তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অথচ তাঁর স্ত্রী’র পাসপোর্টই আটকে দিয়েছে আমদাবাদের পাসপোর্ট দফতর। কারণ, যশোদাবেনের কাছে বিবাহের কোনও প্রমাণপত্র নেই।
ঠিক কী ঘটেছে?
স্কুল শিক্ষিকার পদ থেকে অবসরের পর এই প্রথম বার পাসপোর্টের জন্য আবেদন জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদীর স্ত্রী। বিদেশের কিছু বন্ধু-স্বজনের সঙ্গে দেখা করার জন্য। আমদাবাদের পাসপোর্ট দফতরের খবর, প্রথমে অনলাইনে ফর্ম ভরার পর গত শুক্রবার আমদাবাদের সেখানে আসেন তিনি। আবেদনপত্রে নিজেকে বিবাহিত লিখেছেন, অথচ তার প্রমাণ হিসেবে কোনও বৈধ নথি তাঁর কাছে ছিল না। সে কারণে
সেই আবেদন খারিজ করে দেয় পাসপোর্ট দফতর।
আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসার জেড এ খানকে আজ টেলিফোনে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ‘‘যশোদাবেন তাঁর পাসপোর্ট আবেদন পত্রে নিজের স্বামী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর নাম লিখেছেন। কিন্তু আইন অনুসারে ২০০৬ সালের পর বিবাহ হলে সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক। তার আগে হলে স্বামী ও স্ত্রীর যৌথ হলফনামা দরকার। স্বামী বা স্ত্রী-এর মধ্যে কেউ মারা গেলে মৃত্যুর প্রমাণপত্র দিতে হয় পাসপোর্ট দফতরে। কিন্তু যশোদাবেন নিজেকে বিবাহিত দাবি করেও তাঁর কাছে না আছে বিবাহের সার্টিফিকেট, না স্বামী ও স্ত্রীর যৌথ হলফনামা। সে কারণে এই আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে।’’
অতএব উপায়?
পাসপোর্ট অফিসের মতে, যশোদাবেনকে পাসপোর্ট পেতে হলে তাঁর স্বামী নরেন্দ্র মোদীর স্বাক্ষর করা যৌথ হলফনামা পেশ করতে হবে। তা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। যদিও যশোদাবেন পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার সময় গত লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর পেশ করা নির্বাচনী হলফনামার প্রতিলিপিটি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন, যেখানে প্রথম বার যশোদাবেনকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু পাসপোর্ট দফতর সেই নথিকে গুরুত্ব দেয়নি। পাসপোর্ট অফিসারের মতে, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর সেই হলফনামাটি অন্য আর একটি কাজের জন্য দেওয়া। সেটি পাসপোর্ট দফতর স্বীকার করতে পারে না।’’ ফলে নরেন্দ্র মোদী যদি এখন তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে যৌথ হলফনামা দিতে রাজি হন, তা হলেই বিদেশযাত্রার স্বপ্ন পূরণ হবে যশোদাবেনের।
কিন্তু লোকসভা ভোটে নির্বাচনী হলফনামায় এক বার উল্লেখ ছাড়া কখনওই স্ত্রীকে স্বীকৃতি দেননি মোদী। নরেন্দ্র মোদীর আগে যত জন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, তাঁদের সকলের পরিবার প্রধানমন্ত্রী নিবাসে সঙ্গে থেকেছেন। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর তিন মূর্তি ভবনে থাকতেন ইন্দিরা। মোরারজি দেশাইয়ের ছেলেরা, পি ভি নরসিংহ রাওয়ের সন্তানরাও সঙ্গে থাকতেন। অটলবিহারী বাজপেয়ী বিয়ে না-করলেও তাঁর পালিতা কন্যা রেস কোর্স রোডে থাকতেন। নরেন্দ্র মোদীই প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি নিজের পরিবারের কাউকে রেস কোর্স রোডের বাড়িতে সঙ্গে রাখেননি।
অথচ লোকসভা নির্বাচনের আগে স্বামীর জন্য মন্দিরে মন্দিরে ঘুরেছেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কামনা করে পুজো দিয়েছেন। চল্লিশ বছর ধরে অপেক্ষা করেছেন, কখন ডাক আসে। ভোটে বিজেপির বেনজির সাফল্যের পরেও জানিয়েছিলেন, নরেন্দ্র মোদীর ডাক পেলে প্রধানমন্ত্রী নিবাসে গিয়ে থাকতেও রাজি। কিন্তু সে ডাক আর আসেনি। তবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তা নিয়েও আপত্তি তুলেছিলেন যশোদাবেন। তথ্য জানার অধিকারে জানতে চেয়েছিলেন, ভারত সরকার তাঁকে কী কী নিরাপত্তা দিচ্ছে। কিন্তু নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে সেই তথ্য দেওয়াও খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। এখন স্কুল থেকে অবসর নিয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রীর এক ভাই অশোক মোদীর সঙ্গে। স্ত্রীকে অবজ্ঞা করা নিয়ে বিরোধীরা এ যাবৎ অনেক কটাক্ষ করেছেন মোদীকে।
এখন দেখার— স্ত্রীকে পাসপোর্ট পাইয়ে দিতে নরেন্দ্র মোদী কি আদৌ যৌথ হলফনামায় স্বাক্ষর করবেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy