Advertisement
E-Paper

৩৫ বছরের নিয়ম ভেঙে নীরব আডবাণী

একটি যুগের পাকাপাকি পূর্ণচ্ছেদ! নাকি অন্য কিছুর ইঙ্গিত? বিজেপির জন্মের পরে কেটে গিয়েছে সাড়ে তিন দশক। আজ পর্যন্ত এমন কখনও হয়নি যে, দলের কর্মসমিতির বৈঠকে একটি কথাও বলেননি বিজেপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য লালকৃষ্ণ আডবাণী। দু’বছর আগে নরেন্দ্র মোদীকে বিজেপির প্রচার কমিটির প্রধান করার বিরোধিতা করে গোয়ার কর্মসমিতি বয়কট করেছিলেন। কিন্তু উপস্থিত থেকে বলেননি, এমনটা কখনও হয়নি।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪৩

একটি যুগের পাকাপাকি পূর্ণচ্ছেদ!

নাকি অন্য কিছুর ইঙ্গিত?

বিজেপির জন্মের পরে কেটে গিয়েছে সাড়ে তিন দশক। আজ পর্যন্ত এমন কখনও হয়নি যে, দলের কর্মসমিতির বৈঠকে একটি কথাও বলেননি বিজেপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য লালকৃষ্ণ আডবাণী। দু’বছর আগে নরেন্দ্র মোদীকে বিজেপির প্রচার কমিটির প্রধান করার বিরোধিতা করে গোয়ার কর্মসমিতি বয়কট করেছিলেন। কিন্তু উপস্থিত থেকে বলেননি, এমনটা কখনও হয়নি।

এ বারে হল!

বেঙ্গালুরুতে বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠক আজ শেষ হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতা দিয়ে। এটা আগে থেকেই স্থির ছিল। কিন্তু আগাগোড়া মঞ্চে বসেও আডবাণী বলবেন কি বলবেন না, তা নিয়ে গত তিন দিন ধরে যে জল্পনা চলছিল বিজেপি শিবিরে, আজ তাতে যবনিকা পড়ল। শেষ পর্যন্ত কিচ্ছু না বলেই দিল্লি ফিরে গেলেন আডবাণী!

তিনি যে বলতে আগ্রহী নন, সেটি আগেই দলের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন প্রবীণ এই বিজেপি নেতা। দল ও সংগঠনের মধ্যে যোগসূত্র রামলাল যখন দিল্লিতে তাঁর বাড়িতে যান, তখনই নিজের এই মনোভাবের কথা আডবাণী জানিয়ে দিয়েছিলেন। আডবাণী-ঘনিষ্ঠ নেতাদের আঙুল ছিল দলের সভাপতি অমিত শাহের দিকে। তাঁদের বক্তব্য ছিল, অমিত শাহের উচিত ছিল আডবাণীর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে বলার জন্য অনুরোধ করা। কিন্তু অমিত সেটি করেননি। কারণ, কর্মসমিতির মঞ্চে আডবাণী কিছু বলুন, এটা চাননি মোদী-অমিত শাহরা। দলের একটি শিবিরের দাবি, আডবাণী নিজের অনিচ্ছার কথা প্রকাশ করার পরেই তাঁর নাম কর্মসূচি থেকে বাদ দেওয়া হয়। তার পরেও আডবাণী যাতে বক্তব্য রাখেন, সে জন্য অমিত শাহ-সহ দলের অন্য নেতারা অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু কর্মসূচিতে তাঁর নাম বাদ রাখায় আডবাণী শেষ পর্যন্ত না বলারই সিদ্ধান্ত নেন।

আডবাণী কেন কিছু বললেন না, সে প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে অরুণ জেটলি বলেন, “দলের সব কিছুতেই একটি পদ্ধতি থাকে। সেটা মেনেই দল চলে। আডবাণীর মতো প্রবীণ নেতা চাইলে যে কোনও মঞ্চে আমাদের দিশানির্দেশ দিতে পারেন।” যদিও ঘটনা হল, মোদী-অমিত শাহরা বিজেপির মাথা হয়ে ওঠার পরেই আডবাণীকে সংসদীয় বোর্ড থেকে সরিয়ে পথপ্রদর্শক কমিটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেই কমিটির কোনও বৈঠক আজ পর্যন্ত হয়নি। ফলে জেটলি যা-ই দাবি করুন, আডবাণী কোন মঞ্চে নিজের বক্তব্য রাখতে পারেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই গেল।

মোদী-অমিতদের আশঙ্কার কারণ কী?

দিল্লি নির্বাচনে হার থেকে জম্মু-কাশ্মীরে জোট সরকার গঠন— বিজেপির সাম্প্রতিক একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘোরতর আপত্তি রয়েছে আডবাণীর। এই অবস্থায় তিনি মুখ খুললে মোদী-অমিতদের অস্বস্তি বাড়ত বলে আশঙ্কা ছিল দলের একাংশের। তাঁদের বক্তব্য, এ বারের কর্মসমিতির মঞ্চকে মোদী-শাহ ব্যবহার করেছিলেন দল ও সরকারের ভাবমূর্তি শোধরাতে। এমনিতেই দিল্লি হারের পর মানুষের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা প্রকট হয়ে গিয়েছে। তার উপর জমি বিল নিয়ে বিজেপির গায়ে ‘গরিব-বিরোধী’ তকমা চেপে বসেছে। একই সঙ্গে ফিকে হতে শুরু করেছে মোদী-জাদু। এই অবস্থায় দল ও সরকারের ভাবমূর্তি শুধরে পায়ের তলার মাটি শক্ত করার মঞ্চ ছিল কর্মসমিতির বৈঠক। যেখানে সদস্য সংখ্যার নিরিখে বিশ্ব রেকর্ড গড়া নিয়ে আলোচনার থেকেও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে খসতে থাকা জনভিত্তি বাড়ানোর রণকৌশল রচনা। গিরিরাজ-আদিত্যনাথদের সামলে সব জাত-ধর্মের সমর্থন সুনিশ্চিত করা।

এই অবস্থায় আডবাণীর ক্ষোভ প্রকাশ্যে এলে গোটা উদ্দেশ্যটাই ভেস্তে যেত। তাই আডবাণীকে মঞ্চে রাখা হলেও বলার জন্য চাপ দেওয়া হয়নি। মোদী তাঁর বক্তৃতায় অটলবিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে আডবাণীরও প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। অটলবিহারীকে ‘ভারতরত্ন’ দেওয়ার প্রসঙ্গ টানার পাশাপাশিই তোলেন আডবাণীর পদ্মবিভূষণ প্রাপ্তির প্রসঙ্গও। কিন্তু দলের অনেক নেতা মনে করছেন, এত প্রশংসার মধ্যেও অলিখিত বার্তাটি স্পষ্ট। সেটি হল, মোদী ক্ষমতায় আসার পর যে ভাবে অটল-আডবাণী যুগের অবসান শুরু হয়েছিল, আজ পাকাপাকি ভাবে তাতে পূর্ণচ্ছেদ পড়ে গেল! যে দিল্লির হার নিয়ে আডবাণী চাইছিলেন মোদী-শাহের বিরুদ্ধে সরব হতে, তার দায় নিজেদের ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলেছে এই জুটি। আর জম্মু-কাশ্মীরে সরকার গড়া কেন ঠিক হয়েছে, আজ তা তাঁর সামনেই আলোচনা করে দলের শিলমোহর বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। যা থেকে স্পষ্ট, আডবাণীর কোনও ক্ষোভই আর ধোপে টিকবে না।

বিজেপির এক প্রবীণ নেতার কথায়, “জরুরি অবস্থার সময় এই বেঙ্গালুরুর জেলেই বন্দি ছিলেন আডবাণী। আজ সেই শহরেই তাঁর কণ্ঠরোধ করা হল!” গতকাল একবার বৈঠক থেকে উঠে চলে যান আডবাণী। বেঙ্কাইয়া নায়ডু, অনন্ত কুমাররা আবার তাঁকে বুঝিয়ে ফেরত আনেন সভাস্থলে। পরে দলের তরফে জানানো হয়, স্বাস্থ্যের কারণেই আডবাণী একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। কিন্তু আডবাণী ঘনিষ্ঠদের মতে, এখনও হাল ছাড়েননি এই প্রবীণ নেতা। এই মুহূর্তে যে ভাবে মোদী-অমিত জুটি গোটা দলকে কব্জা করে রেখেছে, তাতে হয়তো ক্ষোভ বাইরে আসছে না। কিন্তু উপযুক্ত সময়ে সব সামনে আসবে।

L K Advani National Executive meeting BJP Narendra Modi Amit Shah Bengaluru
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy